প্রতিটা ধর্ষণের পর, সমাজের মানুষ ভিন্ন ভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে যায়, একদল নারীর পোশাক-আশাক ও চলাফেরার প্রতি দোষারোপ করেন,
অন্যদল ধর্ষকের বিকৃত মানসিকতার প্রতি দোষারোপ করেন।
বলুনতো: যদি নারীর পোশাক-আশাক ও চলাফেরাই ধর্ষণের কারণ হয় তাহলে ৩ বছরের শিশু আর ৬ বছরের বালিকা কেন ধর্ষণের শিকার হয় ??
এটাও বলেন: ধর্ষকের এ বিকৃত মানসিকতার জন্য দ্বায়ী কে বা কী??
প্রকৃতপক্ষে চিন্তাহীন কথা বলে ধর্ষণের সমাধান সম্ভব নয়, বরং এর জন্য চাই কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ।
যা সরকার ও আমাদের পরিবর্তন হওয়া জরুরী
সাধারণত বাংলাদেশে সংঘটিত ধর্ষণের পরিস্থিতিটা এমন হয় যে,
- রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ,
- বাসের ভিতরে ধর্ষণ।
- চলাচলের রাস্তার পাশে ধর্ষণ ইত্যাদি।
সব ধর্ষণের ঘটনাকে বিশ্লেষণ করে কয়েকটা কমন বিষয় খুঁজে পাওয়া যাবে তাহলো,
- মেন্টাল সেট-আপ
- স্থান/ পরিবেশ
- এবং সময়/নির্জনতা।
অর্থাৎ প্রতিটি ধর্ষণের ক্ষেত্রে এই তিনটি বিষয় উপস্থিত।
আর এই তিনটি ফ্যাক্টর মিলে গেলে ধর্ষণ সংঘটিত হবেই। চলুন একটু ব্যাখ্যা করে নেই।
মেন্টাল সেট-আপ, অনিয়ন্ত্রিত বা বিকৃত যৌন চাহিদাবিশিষ্ট মানুষ। এরা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এদের যৌন চাহিদা বিকৃত বা অনিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারণগুলো হলো, বয়স হবার আগে যৌন পরিপক্বতা এসে পড়া। পর্নোগ্রাফি। যৌন বিষয় নিয়ে বেশি বেশি কল্পনা করা, ফ্যান্টাসিতে ভোগা। অ্যালকোহল বা মদ পান করা। রেপ মিথ ইত্যাদি। স্থান এবং সময়, এমন নির্জন স্থান যখন সে মনে করে যে কেউ দেখার নেই, লোক চক্ষুর আড়ালে কাজ করতে পারবে, ধরা পড়বে না। তখন মেন্টাল সেট আপের যৌন প্রেষণায় তাড়িত হয়ে ধর্ষণের মতো জঘন্য কাজ করে থাকে।
এক্ষেত্রে হয়, ভিকটিম আগে থেকেই নির্জন স্থানে অবস্থান করবে।
(ডেটিং রেপ) পরিস্থিতির কারণে নির্জনতা সৃষ্টি হয়। (চলন্ত বাসে রেপ) অপহরণের মাধ্যমে নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়া। উদ্দীপক হলো ভিকটিম।
এটা যে কেউ হতে পারে। যখন কেউ মেন্টাল সেট আপের প্রেষণায় তাড়িত হয়ে নির্জন স্থান পেয়ে যায় তখন যে কেউ ভিকটিম হতে পারে। (বোরকা পরা নারী, শিশু অথবা অন্য কিছু)।
- ধর্মীয় জ্ঞান না থাকা ও ইসলামকে অনুসরণ না করা [1]
- বাংলাদেশে ধর্ষণের শাস্তি (যেটাই থাক) এর প্রয়োগ না হওয়া । ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি এখন সময়ের দাবি । [2]
- প্রাপ্তবয়স্ক হলেও পুরুষ বা নারী বিয়ে দেরিতে করা। বা পরিবার থেকে দেরি করে থাকে । [3]
- পর্নোগ্রাফি এর একটা অন্যতম বড় কারণ। [4]
- মাদকদ্রব্য সমাজ এটা সহজ হয়ে গেছে এটাও অনেক বড় কারণ [5]
- নারী পুরুষ অবাধ মেলামেশা । স্কুল, কলেজ,ও পার্কে। [6]
- অবৈধ প্রেম, ডেটিং নামে এসব অপসংস্কৃতি থেকে দূরে থাকতে হবে ।
দুই , তিন, মাস বা বছর সম্পর্কের যখন ফাটল ধরে তখন বলে রেপ করেছে (এমন ঘটনাও অনেক)
আবার অনেক কুলাঙ্গার ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করে । যা সমাজে এখন ক্রমে বেড়ে চলছে। [7]
- মা বোনেরা পর্দা না করা। নিজের সৌন্দর্য বাহিরে প্রকাশ করা। (এতে বখাটেরা সুযোগ পায়) যা ইসলামে হারাম [8]
- সমাজে বখাটে ছেলেদের সংখ্যা বেড়েই চলছে (রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায়) এটা এখন বড় কারণ বিশেষ করে লীগ বাহিনী এগিয়ে এই কাজে এরা মা বোনদের দুর্বলতাকে ব্যবহার করে থাকে। [9]
- অনলাইন প্লাটফরম Tiktok, like, bigo, etc. Similar অনেক অ্যাপস আছে । অপব্যবহার যা অশ্লীল সংস্কৃতি বৃদ্ধি পাচ্ছে [10]
- কুমস্তিষ্ক সম্পূর্ণ মানুষজনের সংখ্যা এখন অনেক (এটা আপনি Facebook, YouTube এর কুরুচি সম্পর্ন প্রোফাইল, ও কমেন্ট দেখলেই বুজবেন) এবং এগুলো বেড়েই চলছে । এগুলো অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। [11]
- মেন্টাল সেট-আপ [12]
সমাধান কি
সমাধান
সর্বোপরি ধর্ষক যে টাইপেরই হোক, উপরোক্ত তিনটি বিষয় মিলে গেলে সাধারণ মানুষও ধর্ষকে পরিণত হতে পারে। এত গেল সমস্যার কথা। এবার সমাধানের আলোচনা করা যাক। মেন্টাল সেট-আপ তথা বিকৃত মানসিকতার যে কয়টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে তার সমাধান। বয়স হওয়ার আগে যৌন পরিপক্বতা এসে পড়া, এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে নাটক, সিনেমা, গান আমাদের সাহিত্যও। দেশে-বিদেশের সিনেমা নাটকগুলোতে মেয়েদের একটা ভোগের পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। আর ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা এসব সিনেমা নাটক দেখে তাদের মন মানসিকতা সেভাবেই গড়ে তুলছে। অন্যদিকে আমাদের সহিত্যিও ছেলে-মেয়েদের অবৈধ সম্পর্কের শিক্ষা দিচ্ছে, তার দু-একটি উদাহরণ হলো, হাজার বছর ধরে উপন্যাসে স্বামীকে ফাঁকি দিয়ে সহীহ পরকীয়া করার কৌশল শিখানো হচ্ছে। পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসে স্ত্রীকে ফাঁকি দিয়ে শালীর সঙ্গে পরকীয়ার কৌশল শিখানো হচ্ছে। এরকম অনেক আছে। এসব দেখে ও পড়ে বয়সের আগেই তাদের মধ্যে যৌনতা প্রভাব বিস্তার করে। সুতরাং আমাদের সিনেমা, নাটকের এ চিত্রকে পরিবর্তন করতে হবে। প্রয়োজনে এব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। আর আমাদের কবি সাহিত্যকদের মার্জিত লেখার প্রতি দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক।
পর্নোগ্রাফি নিষিদ্ধ করতে হবে
যৌন বিষয় নিয়ে কল্পনা ও ফ্যান্টাসিতে ভোগা। এক্ষেত্রে আইটেম সং, পর্নোগ্রাফি আগুনে ঘি ঢালার কাজ করে। এসব নোংরা গান নিষিদ্ধ করতে হবে এবং সুস্থ সংস্কৃতির প্রচলন করতে হবে। অ্যালকোহল পান করার ফলে মানুষ নেশায় বিভোর হয়ে বিবেকশূন্য হয়ে পড়ে ফলে তার দ্বারা যেকোনো অপরাধ সংঘটিত হতে পারে। তাই অ্যালকোহল নিষিদ্ধ করে কার্যকরি আইন প্রণয়ন করতে হবে। রেপ মিথের তৈরির ক্ষেত্রে পর্নোগ্রাফি ও হলিউড-বলিউড মুভিগুলো কাজ করে। এটা নারীর উপস্থাপনে মনে হয় মেয়েটি সেক্স চাচ্ছে। এক্ষেত্রে যদি কোনো নারী উদ্দীপকে উলি্লখিত নিয়মে বোরকা পরে এবং দৃষ্টি নত রাখে তাহলে এমন মিথ থেকে বিরত থাকা সম্ভব।
স্থান এবং সময়/নির্জনতা
এক্ষেত্রে নির্জন স্থান এড়িয়ে চলতে হবে। কর্মস্থল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব ক্ষেত্রে নির্জনতা এড়িয়ে যেতে হবে। প্রয়োজনে কাউকে সাথে নিয়ে একসাথে আসতে হবে। অন্যদিকে দিনেরবেলায় এসব ঘটনার সংখ্যা কম, তবে অধিকাংশ ঘটনাই ঘটে থাকে খুব ভোরে বা সন্ধ্যায় অথবা রাতের আঁধারে। তাই এই সময়গুলোতে হোক শহরে বা গ্রামে একা বের হওয়া যাবে না। প্রশ্ন হতে পারে স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে ছেলেরা চলতে পারলে মেয়েরা পারবে না কেন? তাহলে বলব পুরুষ ও নারীর সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্য এক না। আর ঘটনার সব রিস্ক থেকে দূরে থাকার নামই সাবধানতা। তাছাড়া নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ, অন্যকে নয়। অর্থাৎ কখনো উপরোক্ত তিনটি বিষয় একসাথে মিলতে দেয়া যাবে না। এখন প্রশ্ন হতে পারে সিলেটের এমসি কলেজের ঘটনা নিয়ে, এখানেতো ভিক্টিমের সাথে মানুষ ছিল? এটার সমাধান মেন্টাল সেট-আপ বা মানসিক বিকৃতির পরিবর্তন ব্যতীত সম্ভব নয়। আর মানসিকতার পরিবর্তনের সমাধান মেন্টাল সেট-আপের সমাধান অংশে দেয়া হয়েছে।
উদ্দীপক সমস্যার সমাধান
পুরুষ যেন নারীর প্রতি আকর্ষিত হয়, সেভাবেই নারীকে সৃজন করা হয়েছে। নারী দেহের প্রতি পুরুষের যেমন দুর্বলতা রয়েছে, তেমনি পুরুষের প্রতিও রয়েছে নারীর দুর্বলতা। গবেষকরা বলেছেন, চেহারা সৌন্দর্যের চেয়ে পুরুষ বেশি গুরুত্ব দেয় ফিগারকে। বিশেষ করে 'বালুঘড়ি' -র মতো গড়ন এবং এই অনুভূতি হতে পুরুষের মগজ সেকেন্ডেরও কম সময় নেয়। তাই নারীকে এমন পোশাক পরিধান করতে হবে, যাতে তার শরীরের 'বালুঘড়ি' প্রকাশ না পায়। এক্ষেত্রে এমন বোরকা পরিধান করতে হবে যাতে আকৃষ্ট হওয়ার কোনো কারুকাজ না থাকে। তাহলে অপরাধী ভয় পাবে এভেবে যে এটাতো তার পরিচিত কেউ হতে পারে। আর যদি স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষ হিসেবে স্বাধীনভাবেই চলতে চান তাহলে কোনোভাবেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। আপনি কার মনের অন্ধকুঠুরির কল্পনায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন তা আপনি নিজেও জানেন না। তাই বলব প্রত্যেকে নিজের অবস্থান নিজেকে বদলানোর চেষ্টা করুন।
সর্বোপরি ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং সমাজের মধ্যে নৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। মানুষের মানসিকতা পরিবর্তন করার জন্য ধর্মীয় বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে আশা করা যায় সমাজ থেকে এ নিকৃষ্ট ঘটনার পরিমাণ অনেকাংশে কমে আসবে।
[12] মেন্টাল সেট-আপ, অনিয়ন্ত্রিত বা বিকৃত যৌন চাহিদাবিশিষ্ট মানুষ। এরা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এদের যৌন চাহিদা বিকৃত বা অনিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারণগুলো হলো, বয়স হবার আগে যৌন পরিপক্বতা এসে পড়া। বিস্তাতিত উপরে শুরুতে আলোচনা হয়েছে ↗
" বাংলাদেশে ধর্ষণ এর প্রধান কারণ কি কি ?"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
সুন্দর স্বাবলম্বী ভাষায় কমেন্ট করার অনুরোধ রইলো.....