আল হাসান আল-বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
“মন্দের মূল তিনটি এবং শাখা ছয়টি।
মূল তিনটি হলো —
১) হিংসা-বিদ্বেষ,
২) লোভ-লালসা এবং
৩) দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা।
আর শাখা ছয়টি হলো —
১) নিদ্রা,
২) পেট ভরে খাওয়া,
৩) আরাম-আয়েশ,
৪) নেতৃত্ব,
৫) প্রশংসা পাওয়া ও
৬) গর্ব-অহংকারের প্রতি আকর্ষণ ও ভালোবাসা।”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
“এই দুনিয়াতে কল্যাণময় হচ্ছে জ্ঞানার্জন ও আল্লাহর ইবাদাত করা
এবং আখিরাতে কল্যাণময় হচ্ছে জান্নাত”।
— — হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
“আল্লাহর যিকরে, সলাতে এবং কুরআন তিলাওয়াতে যে ব্যক্তি সুখ খুঁজে পায় না, সে অন্য কোথাও তা খুঁজে পাবে না।”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
“বুদ্ধিমান ব্যক্তির জিহবা তার হৃদয়ের পেছনে থাকেঃ সে যখন কথা বলতে চায়, প্রথমে সে চিন্তা করে। যদি শব্দগুলো তার জন্য কল্যাণকর হয় তাহলে সে তা বলে। আর যদি কথাগুলো তার জন্য অকল্যাণকর হয় তাহলে সে চুপ থাকে।একজন মূর্খ ব্যক্তির জিহবা তার হৃদয়ের সামনে থাকেঃ সে কথা বলার সময় খুব কমই চিন্তা করে এবং তার জন্য কল্যাণকর বা অকল্যাণকর যা-ই হোক সে বলে ফেলে।”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
“একজন মু’মিনের যত গুণাবলী রয়েছে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো ক্ষমাশীলতা।”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
ইমাম আল-হাসান আল-বাসরী বলেছিলেন:
“পৃথিবীর জীবনটা তিনটি দিনের–
গতকালের দিনটিতে যা করা হয়েছে সেগুলো নিয়ে সেটি চলে গেছে;
আগামীকালের দিনটিতে হয়ত আপনি না-ও পৌছতে পারেন;
কিন্তু আজকের দিনটি আপনার জন্য সুতরাং যা করার আজই করে নিন।”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
আমি এমন মানুষ দেখেছি, যাদের জন্যে এই দুনিয়া তাদের পায়ের নিচের ধুলো থেকেও তুচ্ছ। আমি এমন মানুষ দেখেছি যারা দিনশেষে শুধুমাত্র তাদের নিজের অংশের খাবারটুকু জোগাড় করতে পারতেন, তবুও তারা বলতেন, “আমি এর সবটুকু দিয়ে নিজের উদরপূর্তি করব না। আমি অবশ্যই এর কিছু অংশ আল্লাহর ওয়াস্তে দান করব।” এরপর তারা তাদের খাবারের কিছু অংশ দান করে দিতেন যদিও গ্রহণকারীর চেয়ে ওই খাবারটুকু তাদেরই বেশি প্রয়োজন ছিল।
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
“কম বয়সে কোন কিছু শেখার প্রভাব অনেকটা পাথরের উপরে খোদাই করে লেখার মতন।”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
“হায় আদম সন্তান! তোমরা কি আল্লাহর সাথে যুদ্ধ করতে সক্ষম? যে আল্লাহকে অমান্য করে সে তো তাঁর সাথেই যুদ্ধ ঘোষণা করল! আল্লাহর শপথ! বদরের ৭০ জন যোদ্ধার সাথে আমার দেখা হয়েছে। তাদের বেশিরভাগেরই পোষাক ছিল পশমের।”
তোমরা যদি তাদের দেখতে তাহলে তাদের উন্মাদ বলতে, আর তারা যদি তোমাদের মধ্যে উত্তমদের দেখতেন তাহলে বলতেন, “আখিরাতে তাদের জন্যে কিছু নেই।” তারা যদি তোমাদের মধ্যে অধমদের দেখতেন তাহলে তারা বলতেন, “তারা শেষ বিচারের দিন’-এ বিশ্বাস করে না।”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
“অন্তরমাঝে যেসব কুমন্ত্রণা সৃষ্টি হয় এবং দূর হয়ে যায় তা সব শয়তানের পক্ষ থেকে। এসব কুমন্ত্রণা দূর করার জন্য আল্লাহর যিকর ও কুরআন তিলাওয়াতের সাহায্য নেয়া উচিত।
আর যেসব কুমন্ত্রণা স্থায়ী হয়ে যায়, বুঝতে হবে তা নফসের পক্ষ থেকে। আর তা দূর করার জন্য সলাত, সাওম এবং আধ্যাত্মিক অনুশীলনের সাহায্য নেয়া উচিত।”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
“দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের জন্য বিক্রি করলে আপনি দুই জীবনেই জয়ী হবেন।
আখিরাতের জীবনকে দুনিয়ার জন্য বিক্রি করলে আপনি দুই জীবনেই পরাজিত হবেন।”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
হাসান আল-বাসরীকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, “বান্দার কি লজ্জা পাওয়া উচিত না যে পাপ করার পর সে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করে, তারপর আবার পাপ করে এবং আবারো অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করে?”
তিনি বললেন, “শয়তান ঠিক সেটাই চায়, কখনো অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করা (ইস্তিগফার) থামিয়ে দিয়ো না।”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
“মুমিন মুমিনের অংশ। সে তার ভাইয়ের জন্য আয়না স্বরূপ; সে তার ভাইয়ের মধ্যে অপছন্দনীয় কিছু দেখলে তাকে সংশোধন ও ঠিক-ঠাক করে দেবে এবং গোপনে ও প্রকাশ্যে তার কল্যাণ কামনা করবে।”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
“আমি সেসব মানুষদের (সালাফদের) দেখেছিলাম তারা তাদের দিরহাম ও দিনারের (অর্থাৎ, তাদের টাকার) চেয়ে সময়ের প্রতি অনেক বেশি যত্নবান ছিলেন।”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
এক ব্যক্তি ইমাম আল-হাসান আল-বাসরীর কাছে এসে বললো: “আমি আপনার সাথে ধর্ম নিয়ে বিতর্ক করতে চাই।”
তিনি উত্তর দিলেন: “আমি আমার ধর্ম সম্পর্কে জানি। আপনি যদি আপনার ধর্মকে হারিয়ে ফেলে থাকেন তাহলে বাইরে যান এবং খুঁজতে শুরু করুন।”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
“নিকৃষ্ট তো সেই মৃতব্যক্তির পরিবারের মানুষগুলো, যারা মৃত মানুষটির জন্য কান্নাকাটি করে অথচ তার রেখে যাওয়া ঋণ পরিশোধ করে না।”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
”হে আদমের সন্তানেরা! পৃথিবীর মাটির উপরে যতক্ষণ ইচ্ছা করে হেঁটে নাও কেননা খুব শীঘ্রই সেটা তোমার কবরে পরিণত হয়ে যাবে। মায়ের গর্ভ থেকে বেরিয়ে আসার পর থেকে তো তোমার জীবনের আয়ু কমে যাওয়াকে তুমি ঠেকিয়ে রাখতে পারনি।”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
ইমাম আল-হাসান আল-বাসরি যখন একদল তর্করত মানুষের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তিনি বলেনঃ
“এই লোকেরা ইবাদাত করার ব্যাপারে ক্লান্ত হয়ে গেছে, কথাবার্তা বলা এদের জন্য খুব সহজ হয়ে গেছে এবং এদের তাকওয়া কমে গেছে, আর তাই এত সহজেই কথাবার্তা বলে এবং তর্কাতর্কি করে।”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
এক ব্যক্তি ইমাম আল-হাসান আল-বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ) এর কাছে এসে বললোঃ
– ‘আপনার আশেপাশে কিছু মানুষ এসে বসে যেন তারা আপনার দোষ-ত্রুটি খুঁজে পায়।’
তিনি উত্তর দিলেন,
– “আমি আমার অন্তরকে জান্নাত চাইতে অনুপ্রাণিত করেছিলাম এবং তা জান্নাতের জন্য আকাঙ্খিত হয়েছে। এরপর আমি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাইতে অনুপ্রাণিত করেছি এবং তা সেই মুক্তির আকাঙ্খা করেছে। অতঃপর আমি চেয়েছি আমার অন্তর যেন মানুষের কাছ থেকে মুক্তি পায়, কিন্তু তার জন্য কোন উপায় খুঁজে পাইনি।
যেসব মানুষ তাদের সবকিছুর দাতা আল্লাহর উপরে সন্তুষ্ট হয়নি তারা কীভাবে তাদেরই মত অন্য একজন সৃষ্টির উপরে সন্তুষ্ট হতে পারে?”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
“যদি তোমরা কোন ব্যক্তির সাথে শত্রুতা করতে চাও তাহলে প্রথমে তার উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখ। যদি সে আল্লাহর বাধ্য ও অনুগত হয় তাহলে এ কাজ থেকে দূরে থাক। কারণ, আল্লাহ কখনো তাকে তোমাদের আয়ত্ত্বে দেবেন না। আর যদি সে আল্লাহর নাফরমান বান্দা হয় তাহলে তোমাদের তার সাথে শত্রুতার কোন প্রয়োজনই নাই। কারণ, সে নিজেই ধ্বংস হয়ে যাবে। আল্লাহর সাথে শত্রুতাই তার ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট।”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
“যেসব মানুষ তার সৃষ্টিকর্তার উপরে সন্তুষ্ট হয়নি যদিও তিনি তাদের সবকিছুর দাতা,
তারা কীভাবে তাদের মত অন্য একজন সৃষ্টির উপরে সন্তুষ্ট হতে পারে?”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
আমরা হাসি-ঠাট্টা করি, কিন্তু কে জানে– হয়তো আল্লাহ আমাদের কিছু কাজকর্ম দেখে বলছেন: “আমি তোমাদের কাছ থেকে কোনো আমলই গ্রহণ করব না।”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
এক ব্যক্তি ইমাম আল-হাসান আল-বাসরীর (রাহিমাহুল্লাহ) কাছে এসে বললো, “হে আবু সা’ঈদ, আমি আপনার কাছে আমার অন্তরের কাঠিন্যের ব্যাপারে অভিযোগ করছি।”
তিনি উত্তর দিলেন, “যিকিরের (আল্লাহর স্মরণ) মাধ্যমে অন্তরকে নরম করো। অন্তরে আল্লাহর স্মরণ যত কম হয়, ততই তা কঠিন হয়ে যায়, কিন্তু কোন ব্যক্তি যখন আল্লাহকে স্মরণ করে তার হৃদয়ের কাঠিন্য বদলে নরম হয় যেমন করে আগুনে নরম হয়ে গলে যায় তামা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলাকে স্মরণের (যিকির) মতন আর কোন কিছুই হৃদয়ের কাঠিন্য দূর করে তাকে নরম করতে পারে না। অন্তরের জন্য নিরাময় ও ঔষধ হলো আল্লাহর যিকির। ভুলে যাওয়া একটি রোগ এবং এই রোগের উপশম আল্লাহকে স্মরণ করা।”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
আল-হাসান আল-বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ
“তোমাদর আগে পৃথিবীতে যারা ছিলেন তারা মনে করতেন মৃত্যু তাদের সন্নিকটে। তাদের একেকজন পবিত্রতা অর্জনের জন্য পানি সংগ্রহ করে নিতেন, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতেন এবং তারপর ওযু করতেন আল্লাহর নির্দেশের (মৃত্যু) ভয়ে যেন তা এমন অবস্থায় না আসে যখন তিনি পবিত্র অবস্থায় নেই।
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
“সালাফগণ রাতে সলাতে দাঁড়িয়ে কুরআন তিলাওয়াত করতেন এবং দিনের বেলা কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী আমল করতেন।”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
“পারস্পরিক হাত মেলানো (করমর্দন) বন্ধুত্ব বাড়ায়।”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
ইমাম আল-হাসান আল-বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ) একদিন এক ব্যক্তির দাফনের সময় উপস্থিত হয়ে বলেছিলেনঃ
“আল্লাহর রাহমাত বর্ষিত হোক সেসব মানুষদের উপরে যারা আজকের দিনটির মতন দিনের জন্য পরিশ্রম করে; কেননা আজকে তোমরা এমন সব কাজ করতে পারছ যা কবরের বাসিন্দা তোমাদের এই ভাইয়েরা করতে পারছে না। তাই, হিসাব-নিকাশ শুরু হবার ভয়াবহ দিনটি আসার পূর্বেই তোমাদের স্বাস্থ্য এবং অবসর সময়ের পূর্ণ ব্যবহার করো।”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
“আমি এমন মানুষদের (সাহাবা) সান্নিধ্য অর্জন করেছিলাম যারা তাদের কোন সৎকাজকে ছেড়ে দেয়া যতটা ভয় করতেন তা তোমরা তোমাদের পাপকাজের পরিণামকে যতটুকু ভয় কর তার চাইতেও বেশি।”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
“দুনিয়ার জীবনের তুচ্ছ আর ক্ষণস্থায়ী ভোগবিলাস ও আনন্দগুলো যেন আপনাকে মোহগ্রস্ত ও বিভ্রান্ত করতে না পারে এবং সবসময় আগামীকালের কথা বলতে থাকবেন না, কেননা আপনি জানেন না যে কখন আপনাকে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যেতে হবে।”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
“আপনি আসলে কতগুলো দিনের সমষ্টি ছাড়া আর কিছুই না। যখন একটি দিন পার হয়ে যায়, আপনার একটি অংশ ক্ষয় হয়ে যায়।”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
এক ব্যক্তি হাসান আল বাসরীকে (রাহিমাহুল্লাহ) জিজ্ঞাসা করলো, “ইবলিশ কি কখনো ঘুমায়?”
তিনি বললেন, “সে যদি ঘুমাতো, তাহলে আমরা একটু অবসর পেতাম।”
— হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)
"আল হাসান আল-বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ)"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
সুন্দর স্বাবলম্বী ভাষায় কমেন্ট করার অনুরোধ রইলো.....