উৎস আল-হেরার আলো
যেভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো ইমাম আবু হানিফাকে !
যুগে যুগে বহু ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্ব ইসলামের সেবা করে অমর হয়ে আছেন। ইমামে আজম হজরত আবু হানিফা (রহ.) তাদেরই একজন। তিনি ইসলামের জ্ঞান ভান্ডারে যে অবদান রেখে গেছেন, কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহ তার কাছে চিরঋণী হয়ে থাকবে।
জন্ম ও বংশ পরিচয়
শিক্ষাজীবন
You can read also
ইমাম হাম্মাদ একাধারে বিশ বছর পরম যত্নের সঙ্গে মেহনত করে নোমান ইবনে সাবিতকে ইমামে আজমরূপে গড়ে তোলেন। ইমাম আজম শুধু কুফার প্রাজ্ঞ মুহাদ্দিস ও ফকিহদের জ্ঞানভান্ডারের ওপর সন্তুষ্ট না থেকে জ্ঞান আহরণের জন্য হারামাইন শরিফাইন ভ্রমণ করেন। ১৩০ হিজরি থেকে ১৩৬ হিজরি পর্যন্ত একটানা ৬ বছর হারামাইন শরিফাইনে অবস্থান করে সেখানকার বিখ্যাত মুহাদ্দিসদের কাছ থেকে হাদিস আহরণ করেন। ঐতিহাসিকদেরর মতে তিনি প্রায় চার হাজার মুহাদ্দিস থেকে হাদিস শিক্ষা লাভ করেছিলেন।
কর্মজীবন
১২০ হিজরিতে উস্তাদ হাম্মাদের ইন্তেকালের পর তিনি উস্তাদের মাদ্রারাসার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পাঠদানের পাশাপশি পৈতৃক কাপড়ের ব্যবসাও ধরে রেখেছিলেন।
তাবেয়ি হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন
ইমামে আজম (রহ.) আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর সান্নিধ্য ধন্য বেশ কয়েকজন সাহাবির সঙ্গলাভ করে তাবেয়ি হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন- হজরত আনাস ইবনে মালেক রা. (৯৩ হি.), হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আউফা রা. (৮৭ হি.), হজরত সাহল ইবনে সাদ রা. (৮৮ হি.) হজরত আবু তুফাইল রা. (১১০ হি.), হজরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইদি রা. (৯৯ হি.), হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. (৯৪ হি.) ও হজরত ওয়াসেনা ইবনে আসকি রা. (৮৫ হি.)।
আল্লাহতায়ালা ইমাম আবু হানিফাকে অতুলনীয় জ্ঞান দান করেছিলেন। তিনি প্রচুর পরিমাণে ইবাদত-বন্দেগি করতেন। তিনি প্রায় ৫৫ বার হজব্রত পালন করেন। আদায় করেন অসংখ্য ওমরা। প্রতি রমজানে অসংখ্যবার কোরআন খতম করতেন। কথিত আছে, তিনি দীর্ঘ চল্লিশ বছর এশার নামাজের অজু দিয়ে ফজরের নামাজ পড়েছিলেন।
ব্যবসায়ী কার্যক্রমে কোনো লেনদেনের ব্যপারে সামান্যতম সন্দেহ দেখা দিলে সে লেনদেনের সম্পূর্ণ অর্থ দান করে দিতেন। সততা ও নৈতিকতা ছিল তার ব্যবসার মূলভিত্তি। উপার্জিত সম্পদের বৃহৎ একটি অংশ জনসেবায় খরচ করতেন।
অবদান
পাঠদানের দীর্ঘ জীবনে অসংখ্যা ছাত্রকে ফকিহরূপে তৈরি করেছেন। তদানীন্তন সময়ের বিশাল মুসলিম স¤্রাজ্যের প্রায় সব শহরের বিচারপতির আসন তার ছাত্ররা অলঙ্কৃত করেছিলেন। তার প্রিয় ছাত্র ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) ছিলেন প্রধান বিচারপতি।
ইমাম আবু হানিফার রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মুসনাদে আবু হানিফা, আল ফিকহুল আকবার, ওয়াসিয়াতু আবু হানিফা ও কিতাবুল আসার।
গবেষকদের মতে তিনি চল্লিশ হাজার হাদিস থেকে বাছাই করে কিতাবুল আসার সঙ্কলন করেছিলেন। তার সবচেয়ে বড় অবদান হলো কোরআন ও হাদিস থেকে জনসাধারণের আমল উপযোগী মাসয়ালা বের করার মূলনীতি দাঁড় করানো। তার সম্পাদিত এ শাস্ত্রের নাম উসূলুল ফিক্হ। এ কাজের জন্যই তিনি ইমামে আজম খ্যাতি লাভ করেন। তার প্রণীত ফিকাহ আমাদের কাছে ফিকহে হানাফি নামে পরিচিত।
মৃত্যু
খলিফা মনসুর তাকে প্রধান বিচারপতির পদ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি জালেম শাসকের সমর্থনের দায় এড়ানোর জন্য এ পদ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। এতে অপমানে ক্ষুব্ধ হয়ে খলিফা ইমাম আবু হানিফাকে কারাগারে বন্দী করেন। প্রতিদিন তাকে কারাগার থেকে বের করে প্রকাশ্যে দশটি করে চাবুক মারা হতো। চাবুকের আঘাতে তার শরীর থেকে রক্ত বের হতো। সে রক্তে কুফার মাটি রঞ্জিত হতো। পানাহেরর কষ্টসহ বিভিন্নভাবে সত্তর বছর বয়সের বৃদ্ধ ইমামকে নির্যাতন করা হয়। অবশেষে জোর করে বিষ পান করানো হয়। ৭৬৭ ঈসায়ি সালের ১৪ জুন মোতাবেক ১৫০ হিজরিতে তিনি ইন্তেকাল করেন।
আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসের নিয়ামত দানে ধন্য করুন। তার রেখে যাওয়া আদর্শের ওপর আমাদের জীবন পরিচালিত করার তওফিক দান করুক। আমিন।
মুফতি মাহফূযুল হক
Related Posts
- হযরত হাসান ও হুসাইন (রা.)-র সেই ইতিহাস বিখ্যাত ওয়াজ”
- ফেরাউন এবং শয়তান দুইজনের মধ্যে পার্থক্য কেমন ছিলো || আলোচক আল্লামা দেলাও...
- মে'রাজ: এক বিস্ময়কর যাত্রা ।। দেখুন হাদীসের আলোকে মেরাজের ঘটনা ।। Maulana Abdullah Al Amin
- হুসাইন রাঃ আনহুর জীবনী - শায়খ মতিউর রহমান মাদানী
- Sahabider Kahini by Delwar Hossain Sayeedi (Audio)
- কারবালার প্রকৃত ইতিহাস ও বিষাদসিন্ধুর মিথ্যা কাহিনী ~ ডঃ খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
"যেভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো ইমাম আবু হানিফাকে "
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
সুন্দর স্বাবলম্বী ভাষায় কমেন্ট করার অনুরোধ রইলো.....