নিশ্চয়ই সকল আমাল (এর প্রতিদান) নির্ভর করে নিয়াতের উপর, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই রয়েছে, যা সে নিয়াত করে। (১:১ বুখারিঃ তাওহীদ পাবলিকেশন)

সহিহ বুখারী

৯২ফিত্‌না

৯২/২৬. অধ্যায়ঃ

দাজ্জাল সম্পর্কিত আলোচনা ।

৭১২২

مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا يَحْيَى حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ حَدَّثَنِي قَيْسٌ قَالَ قَالَ لِي الْمُغِيرَةُ بْنُ شُعْبَةَ مَا سَأَلَ أَحَدٌ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم عَنْ الدَّجَّالِ أَكْثَرَ مَا سَأَلْتُهُ وَإِنَّهُ قَالَ لِي مَا يَضُرُّكَ مِنْهُ قُلْتُ لِأَنَّهُمْ يَقُولُونَ إِنَّ مَعَهُ جَبَلَ خُبْزٍ وَنَهَرَ مَاءٍ قَالَ هُوَ أَهْوَنُ عَلَى اللهِ مِنْ ذَلِكَ.

মুগীরাহ ইব্‌নু শু'বাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - কে দাজ্জালের ব্যাপারে যত বেশি প্রশ্ন করতাম তত আর কেউ করেনি। তিনি আমাকে বললেনঃ তা থেকে তোমার কি ক্ষতি হবে? আমি বললাম, লোকেরা বলে যে, তার সঙ্গে রুটির পর্বত ও পানির নহর থাকবে। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌র নিকট তা খুব সহজ। [১৬৫][মুসলিম ৫২/২২, হাঃ ২৯৩৯, আহমাদ ১৮১৭৯] (আধুনিক প্রকাশনী-৬৬২৩ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৩৭)

[১৬৫] এ সমস্ত হাদীসের মধ্যে দাজ্জালের অস্তিত্বের সত্যতা সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের জন্য দলীল রয়েছে যে, সে একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তি। তার মাধ্যমে আল্লাহ বান্দাদের পরীক্ষা করবেন। আল্লাহ তাকে অনেক বিষয়ে শক্তি দেবেন। যেমন কাউকে হত্যার পর জীবিত করার, জমিনের উর্বরতা প্রকাশ, নদী প্রবাহিত করা, জান্নাত-জাহান্নাম দেখানো, জমিনের ধন ভান্ডারের তাকে অনুসরণ করা, আসমানকে বৃষ্টি বর্ষণের আদেশ দিলে আসমান পানি বর্ষণ করবে। জমিনকে শস্য উদ্‌গত করতে বললে জমিন তা উদ্‌গত করবে। আর এগুলো সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছাতেই হবে। আর তাইতো এরপর যখন তাকে আল্লাহ অক্ষম করে দেবেন, তখন আর ঐ ব্যক্তিকে বা অন্য কাউকে হত্যা করতে সক্ষম হবে না। এরপর তার সব কর্ম বিফল হয়ে যাবে। অবশেষে ঈসা (আঃ) তাকে হত্যা করবেন। এ সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু কিছু খারেজী, মু'তাযিলা, ও জাহমিয়া সম্প্রদায় বিরোধিতা করেছে। ফলে তারা তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে এবং সহীহ হাদীসগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে। অন্যদিকে জাবরিয়া সম্প্রদায় দাজ্জালের অস্তিত্বের সত্যতা মেনে নিলেও তার অলৌকিক ও অস্বাভাবিক কাজগুলোকে বলে যে, ওগুলোর কোন বাস্তবতা নেই। (ফাতহুল বারী)

৭১২৩

مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ حَدَّثَنَا أَيُّوبُ عَنْ نَافِعٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ أُرَاهُ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ أَعْوَرُ عَيْنِ الْيُمْنَى كَأَنَّهَا عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ.

ইব্‌নু 'উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

যে, আবূ 'আবদুল্লাহ্‌ (রহঃ) বলেন, আমার মনে হয় তিনি হাদীসটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকেই বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ দাজ্জালের ডান চোখ কানা হবে, যেন তা ফোলা আঙ্গুরের ন্যায়।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৬২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৩৮)

৭১২৪

سَعْدُ بْنُ حَفْصٍ حَدَّثَنَا شَيْبَانُ عَنْ يَحْيَى عَنْ إِسْحَاقَ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي طَلْحَةَ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَجِيءُ الدَّجَّالُ حَتَّى يَنْزِلَ فِي نَاحِيَةِ الْمَدِينَةِ ثُمَّ تَرْجُفُ الْمَدِينَةُ ثَلاَثَ رَجَفَاتٍ فَيَخْرُجُ إِلَيْهِ كُلُّ كَافِرٍ وَمُنَافِقٍ.

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

যে, তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দাজ্জাল আসবে। অবশেষে মাদীনাহ্‌র এক পার্শ্বে অবতরণ করবে। (এ সময় মাদীনাহ) তিনবার কেঁপে উঠবে। তখন সকল কাফির ও মুনাফিক বের হয়ে তার নিকট চলে আসবে। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৬২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৩৯)

৭১২৫

عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ سَعْدٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ عَنْ أَبِي بَكْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ يَدْخُلُ الْمَدِينَةَ رُعْبُ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ وَلَهَا يَوْمَئِذٍ سَبْعَةُ أَبْوَابٍ عَلَى كُلِّ بَابٍ مَلَكَانِ.

আবূ বাক্‌রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আবূ বাক্‌রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেনঃ মাসীহ্‌ দাজ্জালের প্রভাব মদিনায় প্রভাব পড়বে না। সে সময় মদিনায় সাতটি প্রবেশপথ থাকবে। প্রতিটি প্রবেশপথে দু'জন করে ফেরেশ্‌তা নিযুক্ত থাকবেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৬২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৪১)

৭১২৬

عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بِشْرٍ حَدَّثَنَا مِسْعَرٌ حَدَّثَنَا سَعْدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ عَنْ أَبِيهِ عَنْ أَبِي بَكْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ يَدْخُلُ الْمَدِينَةَ رُعْبُ الْمَسِيحِ لَهَا يَوْمَئِذٍ سَبْعَةُ أَبْوَابٍ عَلَى كُلِّ بَابٍ مَلَكَانِ قَالَ وَقَالَ ابْنُ إِسْحَاقَ عَنْ صَالِحِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قَدِمْتُ الْبَصْرَةَ فَقَالَ لِي أَبُو بَكْرَةَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم بِهَذَا.

আবূ বাক্‌রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আবূ বাক্‌রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ মদিনায় মাসীহ্‌ দাজ্জাল-এর প্রভাব পড়বে না। সে সময় মদিনায় সাতটি প্রবেশদ্বার থাকবে। প্রতিটি প্রবেশদ্বারে দু'জন করে ফেরেশ্‌তা নিযুক্ত থাকবেন। (আ. প্র. ৬৬২৭, ই. ফা. ৬৬৪০)
ইব্‌নু ইসহাক.....ইব্‌রাহীম (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমি যখন বস্‌রায় আগমন করলাম তখন আবূ বাক্‌রাহ (রাঃ) আমাকে বললেন যে, এ হাদীসটি আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছি।(আধুনিক প্রকাশনী- নাই, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৪০)

৭১২৭

عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ عَنْ صَالِحٍ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ قَالَ قَامَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِي النَّاسِ فَأَثْنَى عَلَى اللهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ ثُمَّ ذَكَرَ الدَّجَّالَ فَقَالَ إِنِّي لأُنْذِرُكُمُوهُ وَمَا مِنْ نَبِيٍّ إِلاَّ وَقَدْ أَنْذَرَهُ قَوْمَهُ وَلَكِنِّي سَأَقُولُ لَكُمْ فِيهِ قَوْلاً لَمْ يَقُلْهُ نَبِيٌّ لِقَوْمِهِ إِنَّهُ أَعْوَرُ وَإِنَّ اللهَ لَيْسَ بِأَعْوَرَ.

আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোক সমাবেশে দাঁড়ালেন এবং মহান আল্লাহ্‌র প্রশংসা করলেন। এরপর তিনি দাজ্জাল প্রসঙ্গে বললেনঃ তার সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে সতর্ক করছি। এমন কোন নবী নেই যিনি তাঁর কাওমকে এ বিষয়ে সতর্ক করেননি। তবে তার সম্পর্কে আমি তোমাদের এমন একটি কথা বলব যা কোন নাবীই তাঁর জাতিকে বলেননি। তা হল এই যে, সে কানা হবে আর আল্লাহ্ অবশ্যই কানা নন। [১৬৬](আধুনিক প্রকাশনী- ৬৬২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৪২)

[১] উল্লেখিত হাদীসে দাজ্জাল সম্পর্কে দু’টি বিষয় বর্ণিত হয়েছেঃ

প্রথম বিষয় : প্রত্যেক নবী তাদের নিজ নিজ উম্মতদেরকে দাজ্জাল সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করেছেন। তারই ধারাবাহিকতা স্বরূপ রাসূল (সাঃ)ও তাঁর উম্মতকে উদ্দেশ করে বলেন, إني لأنذركموه (অর্থাৎ নিশ্চয় আমিও অবশ্যই তোমাদেরকে তার ব্যাপারে সতর্ক করেছি)।

দ্বিতীয় বিষয় : রাসূল (সাঃ) বলেন, আমার পূর্ববর্তী সব নবী দাজ্জালের ভীতি প্রদর্শন করলেও তার সম্পর্কে যে কথাটি বলেননি, আমি তোমাদের অবশ্যই সে কথাটি বলব। আর তা হচ্ছে সে কানা। আল্লাহ কিন্তু কানা নয়। এখানে একদিকে যেমন দাজ্জালের এক চোখ নেই তা প্রমাণ হচ্ছে, অপরদিকে আল্লাহর চোখ রয়েছে এবং তিনি দেখেন এটাও প্রমাণিত হচ্ছে। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার অসংখ্য সিফাতের মধ্যে এটিও তাঁর একটি সিফাত যে, তাঁর চক্ষু রয়েছে এবং তিনি দেখেন। তাঁর চক্ষু কেমন তা যেমন বলা যাবে না, তদ্রুপ তা অস্বীকার, অপব্যাখ্যা, সাদৃশ্য দেয়া বা প্রকৃতি বর্ণনা করা মোটেও ঠিক নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ليس كمثله شيء وهو السميع البصير

৭১২৮

يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ حَدَّثَنَا اللَّيْثُ عَنْ عُقَيْلٍ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ سَالِمٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ أَطُوفُ بِالْكَعْبَةِ فَإِذَا رَجُلٌ آدَمُ سَبْطُ الشَّعَرِ يَنْطُفُ أَوْ يُهَرَاقُ رَأْسُهُ مَاءً قُلْتُ مَنْ هَذَا قَالُوا ابْنُ مَرْيَمَ ثُمَّ ذَهَبْتُ أَلْتَفِتُ فَإِذَا رَجُلٌ جَسِيمٌ أَحْمَرُ جَعْدُ الرَّأْسِ أَعْوَرُ الْعَيْنِ كَأَنَّ عَيْنَهُ عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ قَالُوا هَذَا الدَّجَّالُ أَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شَبَهًا ابْنُ قَطَنٍ رَجُلٌ مِنْ خُزَاعَةَ

ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি ঘুমের অবস্থায় দেখতে পেলাম যে, আমি কা’বার তাওয়াফ করছি। হঠাৎ একজন লোককে দেখতে পেলাম ধূসর বর্ণের আলুথালু কেশধারী, তার মাথা থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে কিংবা টপকে পড়ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? লোকেরা বলল, ইনি মারিয়ামের পুত্র। এরপর আমি তাকাতে লাগলাম, হঠাৎ দেখতে পেলাম, এক ব্যক্তি স্থুলকায় লাল বর্ণের, কোঁকড়ানো চুল, এক চোখ কানা, চোখটি যেন ফোলা আঙ্গুরের মত। লোকেরা বলল এ-হল দাজ্জাল! তার সঙ্গে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ লোক হল ইব্‌নু কাতান, বানী খুযা’আর এক লোক। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৬২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৪৩)

৭১২৯

عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ سَعْدٍ عَنْ صَالِحٍ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ عُرْوَةَ أَنَّ عَائِشَةَ قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَسْتَعِيذُ فِي صَلاَتِهِ مِنْ فِتْنَةِ الدَّجَّالِ.

আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে, সালাতের ভিতরে দাজ্জালের ফিতনা হতে পানাহ চাইতে শুনেছি।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৬৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৪৪)

Related Posts

"সহিহ বুখারী দাজ্জাল সম্পর্কিত আলোচনা ।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সুন্দর স্বাবলম্বী ভাষায় কমেন্ট করার অনুরোধ রইলো.....

Iklan Atas Artikel

Middle Ad

Middle 2

Registered ad