মসজিদের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ আদব
আবদুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল আবদুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
প্রিয় ভায়েরা, মুসলিম হিসেবে মসজিদের সাথে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। প্রতিদিন আমাদেরকে ৫বার মসজিদে নামাযের উদ্দেশ্যে যেতে হয়। তাই মসজিদ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আমাদের জানা থাকা দরকার। কিছু বিষয়ে আমাদের সচেতনতা দরকার। তাই নিম্নে কুরআন ও হাদীসের আলোকে মসজিদের কিছু অতি গুরুত্বপূর্ণ আদব উল্লেখ করা হল। আশা করি বিষয়টি আমাদেরকে মসজিদ সম্পর্কে আরও যত্নশীল ও সচেতন হতে সাহায্য করবে।
১. মসজিদ তৈরি করার মর্যাদা:
রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিভিন্ন স্থানের প্রয়োজন অনুসারে মসজিদ তৈরি করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে একটি মসজিদ তৈরি করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করবেন।” (সহীহ মুসলিম)
২. আযান শুনে নামায পড়ার আগে মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়:
আজান হওয়ার পর বৈধ ওজর ব্যতীত মসজিদ থেকে বাইরে যাওয়া যায়েজ নয়। রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “আজান শোনার পর যে ব্যক্তি মসজিদ থেকে বিনা প্রয়োজনে বের হয় এবং পুনরায় মসজিদে ফিরে আসার তার ইচ্ছাও নাই সে মুনাফিক।” (ইবনে মাজাহ্)
৩. মসজিদকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা খুবই মর্যাদা পূর্ণ কাজ:
শরীয়তে মসজিদকে পবিত্র ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে তাগিদ এসেছে। হযরত আবু হারায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, জনৈক কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা মসজিদে নববী পরিষ্কারের কাজ করত। কয়েক দিন থেকে রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে দেখতে না পেয়ে তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, “মহিলাটির কি হয়েছে?” বলা হল: সে মারা গেছে, অতঃপর তাকে দাফন করা হয়েছে। তিনি বললেন: তোমরা আমাকে সংবাদ দিলে না কেন? কোথায় তার কবর? অতঃপর তিনি তার কবরের কাছে গিয়ে তার জানাজা পড়লেন। (সহীহ বুখারী, মুসলিম, ইবনে মজাহ)
উল্লেখ্য যে, কবরে গিয়ে মহিলার জন্য রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামায পড়ার ব্যাপারটি শুধু তাঁর জন্যই খাস। অন্য কারও জন্য প্রযোজ্য নয়।
৪. মসজিদের ভেতর কফ, থুথু ময়লা ইত্যাদি ফেলা নাজায়েজ:
একবার রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদের সামনের দিকে এক লোককে কফ দেখলেন। তখন তিনি বললেন: কি ব্যাপার? তোমাদের মধ্যে কোন কোন লোক তার প্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর সামনে থুথু নিক্ষেপ করে। সে কি এটা পছন্দ করে যে তার সামনে এসে তার মুখে থুথু নিক্ষেপ করা হোক? যদি থুথু নিক্ষেপ করতেই হয় তবে বাম পয়ের নিচে ফেলবে অথবা এই ভাবে কাপড়ে তা নিক্ষেপ করবে। আবু হুরিরা বলেন: আমি দেখলাম, (শিক্ষা দেয়ার জন্য) তিনি কাপড়ের এক অংশে থুথু ফেলে অন্য অংশ দিয়ে তা ডলে দিলেন।) (সহীহ মুসলিম)
৫. মসজিদে বেচা- কেনা করা, হারানো বস্তু খোঁজ করা বা সে ব্যাপারে ঘোষণা দেয়া বৈধ নয়: রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যখন তোমরা কোন ব্যক্তিকে মসজিদে কেনা-বেচা করতে দেখবে তখন তার জন্য বদ দোয়া করে বলবে: আল্লাহ তোমার ব্যবসায় লোকসান দিক। আর কাউকে যদি হারানো বস্তু মসজিদে এসে খুঁজতে দেখ বা সে সম্পর্কে ঘোষণা দিতে দেখ। তবে বলবে আল্লাহ করুন বস্তুটি তুমি যেন খুঁজে না পাও। (তিরমিযী, নাসায়ই)
৬. মসজিদে এসে বা নামাজের অপেক্ষায় বসে থাকার সময় এক হাতের আঙ্গুলগুলো অন্য হাতের আঙ্গুলের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে বসে থাকা নিষেধ: রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “তোমাদের কেউ বাড়িতে ওযু করে মসজিদে এলে বাড়ি ফিরে যাওয়া পর্যন্ত সে যেন নামাজ রত থাকল।” তারপর তিনি বললেন: “কেউ মসজিদে এসে যেন এরূপ করে না বসে।” তারপর তিনি তাঁর এক হাতের আঙ্গুল গুলো অন্য হাতের আঙ্গুলগুলোর ফাঁকে প্রবেশ করিয়ে দেখালেন। (ইবনে খুযাইমা ও হাকেম)
৭. মসজিদকে চলাচলের রাস্তা হিসাবে গ্রহণ করা নিষেধ: রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “মসজিদে নামাজ এবং আল্লাহর জিকির ব্যতীত অন্য কিছু করবে না এবং তাকে রাস্তা বানাবে না।” (ত্ববরানী)
৮. মসজিদে বিনা প্রয়োজনে কোন-বার্তা বলা জায়েজ নয়: রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “শেষ যুগে এমন কিছু লোক আসবে যারা মসজিদে বসে (প্রয়োজন হীন) কথা-বার্তা বলবে। আল্লাহর দরবারে তাদের কোনই প্রয়োজন নাই।” (ইবনে হিব্বান)
৯. কাঁচা পিয়াজ বা কাঁচা রসুন খেয়ে অথবা দুর্গন্ধ নিয় মসজিদে প্রবেশ করা নিষেধ:
রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাঁচা পিয়াজ বা কাঁচা রসুন খেয়ে অথবা দুর্গন্ধ নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। কেননা বনী আদম যে বিষয়ে কষ্ট অনুভব করে ফিরিশতাগণ তা থেকে কষ্ট অনুভব করেন। হাদীসে এরশাদ হচ্ছে: দুর্গন্ধময় এই দুটি সবজি (কাঁচা পেয়াজ ও কাঁচা রসূন) খেয়ে তোমরা মসজিদে প্রবেশ করা থেকে সাবধান। যদি খেতেই হয় তবে আগুনের সাহায্যে এগুলোর দুর্গন্ধ ধ্বংস করে নিবে। (ত্ববরানী)
১০. আল্লাহর নিকট পৃথিবীর সর্বোত্তম স্থান হল মসজিদ সমূহ:
রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “আল্লাহর নিকট সবচেয় পছন্দনীয় স্থান হচ্ছে মসজিদ সমূহ। আর তার নিকট সব চেয়ে অপছন্দনীয় স্থান হচ্ছে বাজার সমূহ।” (সহীহ মুসলিম)
১১. মসজিদে গমন কারীর জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে একটি করে সোওয়াব দেয়া হয় এবং একটি করে পাপ মোচন হয়: মহানবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি জামাতে নামায পড়ার উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন করে, তার প্রতিটি পদক্ষেপে একটি করে পাপ মোচন হয়, দ্বিতীয় পদক্ষেপে একটি সোওয়াব লিপিবদ্ধ হয়। মসজিদে গমন এবং প্রত্যাবর্তন উভয় অবস্থায় এই প্রতিদান পাওয়া যায়। (আহমদ ও ত্ববরানী)
"মসজিদের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ আদব"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
সুন্দর স্বাবলম্বী ভাষায় কমেন্ট করার অনুরোধ রইলো.....