নিশ্চয়ই সকল আমাল (এর প্রতিদান) নির্ভর করে নিয়াতের উপর, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই রয়েছে, যা সে নিয়াত করে। (১:১ বুখারিঃ তাওহীদ পাবলিকেশন)

মসজিদের আদব রক্ষা মুমিনের দায়িত্ব



মাওলানা মুহাম্মদ মুতিউর রহমান

ইসলামে মসজিদ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মসজিদ ব্যক্তি মুসলমানের উপাসনার (ইবাদতের) পবিত্র স্থান। কিন্তু মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে মসজিদ গুরুত্বপূর্ণ নানা সামাজিক ভূমিকাও পালন করেছে। 
মুসলমানদের মসজিদ অন্যান্য ধর্মের উপাসনাগৃহের মতো নিছক কোনো উপাসনাগৃহ নয়। 
ব্যবহারিক ও ঐতিহাসিকভাবে এর রয়েছে কিছু নিজস্বতা, ভিন্নতা ও স্বকিয়তা। 
ইসলামের ইতিহাসে মসজিদ নানা গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকা-েও অবদান রেখেছে।
 মসজিদ হলো মুসলমানদের প্রধান শিক্ষালয়। এখান থেকে আসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা।
 দেশের বিভিন্ন দুর্যোগ ও সংকটকালীন মুহূর্তেও এখান থেকে ঘোষিত হয় উত্তরণের গুচ্ছ গুচ্ছ পরিকল্পনা ও কর্মসূচি।

কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘তারাই তো আল্লাহর মসজিদ আবাদ করে, যারা ঈমান আনে, আল্লাহ ও আখিরাতে এবং নামাজ আদায় করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ব্যতিত অন্য কাউকেও ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা হবে সৎপথ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।’
(সুরা : আত-তাওবা, আয়াত : ১৮)

মুসলমান হিসেবে মসজিদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। প্রতিদিন আমাদেরকে পাঁচবার মসজিদে নামাজের উদ্দেশ্যে যেতে হয়। তাই মসজিদ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু জানা থাকা দরকার। আমাদের সকলের প্রয়োজন একটু সচেতনতা। তাই এখানে কুরআন-হাদিসের আলোকে মসজিদের কিছু আদব উল্লেখ করা হলো :
মসজিদ নির্মাণের ফজিলত : ইসলাম মুসলমানদেরকে ব্যাপকভাবে মসজিদ নির্মাণে উৎসাহিত করেছে। তার জন্য বিশেষ সওয়াব ঘোষণা করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির উদ্দেশে মসজিদ তৈরি করলো; আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জান্নাতে মসজিদের মতো একটি ঘর তৈরি করে দেবেন।’ (তিরমিজি : ২৯২)


যথাযথ নিয়তে মসজিদ নির্মাণ করলে জান্নাতে যাওয়া যাবে-বর্ণিত হাদিসটি প্রকারান্তরে এই সুসংবাদই বহন করছে। তবে ইসলাম মনে করে, বস্তুগতভাবে মসজিদ নির্মাণ ও আবাদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে; অর্থগতভাবে তা আবাদ করা। মসজিদ আবাদের অর্থ হলো-মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায়, জিকির-আজকার ও কুরআন তেলাওয়াত করা। মসজিদ আবাদকারীর জন্য ইসলামে অনেক পুরস্কারের কথা এসেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে সকাল-বিকাল মসজিদে যায়, প্রত্যেকবার যাতায়াতের বিনিময়ে জান্নাতে তার জন্য একেকটি ঠিকানা তৈরি করা হয়।’

আজান শুনে নামাজ পড়ার আগে মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয় : আজান হওয়ার পর বৈধ ওজর ব্যতিত মসজিদ থেকে বাইরে বের হওয়া জায়েজ নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আজান শোনার পর যে ব্যক্তি মসজিদ থেকে বিনা প্রয়োজনে বের হয় এবং পুনরায় মসজিদে ফিরে আসার তার ইচ্ছাও নেই সে মুনাফিক।’ 
(ইবনে মাজাহ)


মসজিদ পরিষ্কার রাখা খুবই মর্যাদাপূর্ণ কাজ : ইসলামি শরিয়তে মসজিদকে পবিত্র ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি মসজিদে নববী পরিষ্কারের কাজ করতো। কয়েক দিন থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে দেখতে না পেয়ে তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘লোকটির কি হয়েছে? বলা হলো-সে মারা গেছে। অতঃপর তাকে দাফন করা হয়েছে। তিনি বললেন, তোমরা আমাকে সংবাদ দিলে না কেন? কোথায় তার কবর? অতঃপর তিনি তার কবরের কাছে গিয়ে তার জানাজা পড়লেন।’ (সহিহ বুখারি)



মসজিদের ভেতর কফ-থুথু ও ময়লা ফেলা নাজায়েজ : একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদের সামনের দিকে এক লোককে কফ ফেলতে দেখলেন। তখন তিনি বললেন, কি ব্যাপার? তোমাদের মধ্যে কোনো কোনো লোক তার প্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে তার সামনে থুথু নিক্ষেপ করে। সে কি এটা পছন্দ করে যে তার সামনে এসে তার মুখে থুথু নিক্ষেপ করা হোক? যদি থুথু নিক্ষেপ করতেই হয় তবে বাম পায়ের নিচে ফেলবে অথবা এভাবে কাপড়ে তা নিক্ষেপ করবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি দেখলাম, (শিক্ষা দেওয়ার জন্য) তিনি কাপড়ের এক অংশে থুথু ফেলে অন্য অংশ দিয়ে তা ডলে দিলেন। (সহিহ মুসলিম)


মসজিদে বসে থাকার সময় এক হাতের আঙুল অন্য হাতের আঙুলে প্রবেশ করিয়ে বসা নিষেধ : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ বাড়িতে অজু করে মসজিদে এলে বাড়ি ফিরে যাওয়া পর্যন্ত সে যেন নামাজরত থাকলো। তিনি বললেন, কেউ মসজিদে এসে যেন এরূপ করে না বসে। তারপর তিনি তার এক হাতের আঙুলগুলো অন্য হাতের আঙুলগুলোর ফাঁকে প্রবেশ করিয়ে দেখালেন।’ (ইবনে খুজাইমা)



কাচা পেঁয়াজ-রসুন খেয়ে অথবা দুর্গন্ধ নিয়ে মসজিদে প্রবেশ নিষেধ : রাসুলুল্লাহ (সা.) কাচা পেঁয়াজ বা কাচা রসুন খেয়ে অথবা দুর্গন্ধ নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। কেননা বনী আদম যে বিষয়ে কষ্ট অনুভব করে ফেরেশতারা তা থেকে কষ্ট অনুভব করেন।
হাদিসে এসেছে, ‘দুর্গন্ধময় এই দু’টি সবজি (কাচা পেঁয়াজ ও কাচা রসুন) খেয়ে তোমরা মসজিদে প্রবেশ করা থেকে সাবধান। যদি খেতেই হয়, তবে আগুনের সাহায্যে এগুলোর দুর্গন্ধ ধ্বংস করে নেবে।’ (তাবারানী)


মসজিদের সঙ্গে মুমিনের সম্পর্ক : মসজিদের প্রতি মুমিনের থাকে এক গভীর আকর্ষণ। মুমিনের কল্পনা, চিন্তাচেতনা ও আবেগ থাকে মসজিদের পবিত্র স্মৃতি দ্বারা প্রভাবিত। সে যেখানেই থাকুক না কেন, তার হৃদয় থাকে মসজিদের সঙ্গে অদৃশ্য বন্ধনে আবদ্ধ। তাইতো প্রতিদিন অন্তত পাঁচবার সে ছুটে আসে এখানে। মসজিদের সঙ্গে এ রকম আত্মা ও রুহের সম্পর্ক যাদের, হাশরের ময়দানে তাদের ঠিকানা হবে আল্লাহর আরশের সুশীতল ছায়াতলে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যেদিন আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়াই থাকবে না, সেদিন সাত শ্রেণির লোককে তিনি তাঁর আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন, যাদের মধ্যে এক শ্রেণি হলো মসজিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তি।’ (বুখারি, হাদিস : ৬২৯)



মসজিদে গমনকারীর মর্যাদা : মসজিদে গমনকারীর প্রতিটি পদক্ষেপে নেকি অর্জন ও গুনাহ মার্জনা হতে থাকে। বাড়তে থাকে তার মর্যাদাও। আল্লাহ তা’আলা বলেন : ‘যে ব্যক্তি নিজের ঘর থেকে পবিত্রতা অর্জন করে ফরজ নামাজ আদায় করার উদ্দেশে আল্লাহর ঘরের দিকে যায়, তার একটি পদক্ষেপে একটি গুনাহ ক্ষমা করা হয় ও দ্বিতীয় পদক্ষেপে তার একটি মর্যাদা উন্নীত করা হয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৫৫৩)

আগেভাগে মসজিদে গিয়ে নামাজের অপেক্ষায় থাকলে নামাজের সওয়াব কবুল হতে থাকে। কারণ নামাজের অপেক্ষায় বসে থাকা যেন নামাজেই নিমগ্ন থাকার শামিল। নামাজের জন্য অপেক্ষমান ব্যক্তিদের জন্য ফেরেশতারাও মাগফিরাত কামনা করতে থাকেন। (মুসলিম, হাদিস : ১৫৪০)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় মসজিদে গমন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে সকাল-সন্ধ্যায় আপ্যায়নের ব্যবস্থা করবেন।’ (বুখারী, হাদিস : ৬৩১)

জামাআতে নামাজ আদায়ের গুরুত্ব : মসজিদে নিয়মিত জামাআতে নামাজ আদায় করা সব মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য। মসজিদে জামাআতে নামাজের গুরুত্বও অনেক। এক ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব ২৭ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘জামাআতের সঙ্গে নামাজ আদায়কারী একাকী নামাজ পড়া অপেক্ষা ২৭ গুণ বেশি মর্যাদার অধিকারী।’ (বুখারী, হাদিস : ৬১৯)


মুসলিম পুরুষের জন্য মসজিদে এসে জামাআতে নামাজ আদায় করা ঐচ্ছিক নয়, ওয়াজিবও বটে। এ ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার প্রাণ যাঁর হাতে, তাঁর শপথ করে বলছি, আমার ইচ্ছা হয় আমি কাঠ সংগ্রহ করার নির্দেশ দিই আর নামাজের আজান দেওয়ার জন্য হুকুম দিই। তারপর আমি এক ব্যক্তিকে হুকুম করি, যেন সে লোকদের নামাজের ইমামতি করে। আর আমি ওই সব লোকদের দিকে যাই, যারা নামাজের জামাআতে হাজির হয়নি এবং তাদের বাড়িঘরসমূহ আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিই।’ (বুখারী, হাদিস : ৬১৮)


মসজিদের আদব ও শিষ্টাচার : অজুসহ পাক পবিত্র অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করা সুন্নত। নাপাক অবস্থায় অথবা পেঁয়াজ-রসুনের মতো দুর্গন্ধযুক্ত কোনো খাবার খেয়ে মসজিদে প্রবেশ করা উচিত নয়। বিড়ি-সিগারেট, গুল-জর্দা, তামাক ও মাদকজাতদ্রব্য খেয়ে মসজিদে প্রবেশ করা মাকরুহ। মসজিদে ধীর-স্থিরতার সঙ্গে গমন করা উচিত। রাকাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কায় তাড়াহুড়া করে দৌড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা নামাজে অবশ্যই ধীর-স্থিরতার সঙ্গে আসবে। যতটুকু পাবে, আদায় করবে। আর যতটুকু ছুটে যাবে, পূর্ণ করবে।’ (বুখারী, হাদিস : ৬০৯)


মসজিদে মোবাইল ফোনের ব্যবহার এখন অসহনীয় ও অমার্জনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশেষ করে নামাজের সময় মোবাইলের রিংটোনের কারণে ইবাদতের পরিবেশ বিঘিœত হয়। অনেক সময় তা চরম বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে। তাই মসজিদে প্রবেশের আগে মোবাইল ফোন বন্ধ করা উচিত। ভুলবশত যদি মোবাইল খোলা থাকে আর নামাজরত অবস্থায় রিংটোন বেজে উঠে, তাহলে এক হাত দিয়ে হলেও মোবাইল বন্ধ করে দিতে হবে।

মসজিদে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা ও বাম পা দিয়ে বের হওয়া এবং মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া পড়া সুন্নত। মসজিদে প্রবেশের দোয়া হলো-‘বিসমিল্লাহি ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসুলিল্লাহ, আল্লা-হুম্মাফ্তাহলি আবওয়া-বা রাহমাতিক’। আর মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়া হচ্ছে-‘বিসমিল্লাহি ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসুলিল্লাহ, আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদ্বলিক, আল্লা-হুম্মা আ’সিমনি মিনাশ শাইতানির রাজিম।’

মসজিদে সর্বদা ইতিকাফের নিয়তে প্রবেশ করে মসজিদের ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখা উচিত। মসজিদে অতিরিক্ত শব্দ করে কোনো কাজ করা ঠিক নয়। দরজা-জানালা ব্যবহারের সময়, হাঁটা-চলার সময় অতিরিক্ত শব্দ যাতে না হয়, সে ব্যাপারেও সচেতন থাকতে হবে। হট্টগোল করা বা উচ্চঃস্বরে কথা বলা যাবে না। পাশের লোকের অসুবিধা হয় এমন উচ্চঃস্বরে কুরআন তেলাওয়াত করাও জায়েজ নেই। রাসুল (সা.) বলেন, ‘নামাজি ব্যক্তি তার প্রভুর সঙ্গে গোপনে কথা বলে। তার খেয়াল রাখা উচিত, সে কি বলছে। তোমরা কুরআন মাজিদ তেলাওয়াতের মাধ্যমে একে অন্যের ওপর শব্দ করো না।’ (বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৪৪৮০)

উচ্চস্বরে কুরআন তেলাওয়াত করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকলে উচ্চস্বরে কথা বলা কতটা অমার্জনীয় বলাই বাহুল্য। মসজিদে আগেভাগে গিয়ে প্রথম কাতারে নামাজ পড়ার ব্যাপারে রাসুল (সা.) উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যদি মানুষ জানতে পারত, আজান দেওয়া এবং প্রথম কাতারে নামাজ আদায়ের মাঝে কী ফযিলত রয়েছে, আর লটারি ছাড়া সেটি পাওয়া সম্ভব না হতো, তাহলে অবশ্যই তার জন্য লটারির ব্যবস্থা করত। এবং যদি জানতে পারত মসজিদে আগে আসার মাঝে কী ফজিলত রয়েছে, তাহলে তার জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও আগে আসত।’ (বুখারী, হাদিস : ৫৯০)


ইমাম ও মুয়াজ্জিন ছাড়া কারো জন্য জায়নামাজ জাতীয় কিছু দিয়ে কোনো জায়গা নির্দিষ্ট করে রাখা সম্পূর্ণ অন্যায়। মসজিদের সীমানায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে সবার উচিত নিজেদের আল্লাহর গোলাম হিসেবে সমর্পণে ব্রতী হওয়া এবং সব ভেদাভেদ, আমিত্ব ও অহমিকা ভুলে একই কাতারে দ-ায়মান হওয়া। আর ইমামের দুই দিক থেকে সমান্তরালে কাতার পূরণ করা।
মসজিদে প্রবেশকারী দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় ছাড়া বসবে না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে দুই রাকাত নামাজ আদায় না করে বসবে না।’ (বুখারী, হাদিস : ১১১০)
জামাআতে নামাজ আদায়ের সময় কাতার সোজা করে দাঁড়ানো ওয়াজিব। কাতারে জায়গা ফাঁকা রাখা হলে সেখানে শয়তান এসে অবস্থান নেয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নামাজের জন্য কাতারবদ্ধ হও, কাঁধের সঙ্গে কাঁধ মেলাও, ফাঁক বন্ধ করো, শয়তানের জন্য জায়গা ফাঁকা রেখো না। আর যে ব্যক্তি কাতার মেলায়, আল্লাহ তাকে নিজের রহমতের সঙ্গে মেলাবেন। আর যে ব্যক্তি কাতারের মাঝে দূরত্ব বজায় রাখে, আল্লাহ তাকে নিজের রহমত থেকেও দূরে রাখবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৬৬৬)


মুক্তাদির উচিত সর্বদা ইমামের অনুসরণ করা, ইমামের আগে কোনো আমল করা তার জন্য বৈধ নয়। আবার ইমাম থেকে অনেক দেরিতেও করা যাবে না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজে ইমামের আগে মাথা ওঠায় তার কী ভয় হয় না যে, আল্লাহ তা’আলা তার মাথাকে গাধার মাথা বানিয়ে দেবেন কিংবা তার আকৃতি গাধার আকৃতিতে পরিবর্তন করে দেবেন।’ (ইবনে মাজাহ : ৯৬১)


মসজিদ সর্বদা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত।
মসজিদ মুমিন মুসলমানদের নিকট পবিত্রতম স্থান। ইবাদত-বন্দেগী করার স্থান, আল্লাহর স্মরণে নিমগ্ন হওয়ার স্থান, একান্তভাবে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণের স্থান। এই মসজিদের আদব রক্ষা করা প্রত্যেক ঈমানদারেরই আবশ্যিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। মসজিদে গমনের জন্য উপরোক্ত আদবগুলো পালন করা মুমিনের জন্য আবশ্যক। এর মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি হাসিল হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সকলকে উক্ত কাজগুলো পালন করার তাওফিক দান করুন।

Related Posts

"মসজিদের আদব রক্ষা মুমিনের দায়িত্ব"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সুন্দর স্বাবলম্বী ভাষায় কমেন্ট করার অনুরোধ রইলো.....

Iklan Atas Artikel

Middle Ad

Middle 2

Registered ad