নিশ্চয়ই সকল আমাল (এর প্রতিদান) নির্ভর করে নিয়াতের উপর, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই রয়েছে, যা সে নিয়াত করে। (১:১ বুখারিঃ তাওহীদ পাবলিকেশন)

 কুরআন ও হাদীসের আলোকে শাফা‘আত


মুহাম্মাদ নাজমুল ইসলাম

সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

‘কুরআন ও হাদীসের আলোকে শাফা‘আত’ একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ, যাতে শাফা‘আতের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, শর্ত এবং কখন শাফা‘আত করা হবে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে শাফা‘আত তলবের হুকুম কী -এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সাথে সাথে এ বিষয়ে আল-কুরআনের ব্যাখ্যাকার ও আকীদাবিশেষজ্ঞ আলিমদের মতামতও তুলে ধরা হয়েছে।

 ভূমিকা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

সকল প্রশংসা আল্লাহর। সালাত-সালাম বর্ষিত হোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর। এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবী ও অনুসারীদের ওপর।

কুরআন-সুন্নাহ ও ইজমায়ে উম্মত দ্বারা একথা প্রমাণিত যে, আল্লাহ তা‘আলাই হচ্ছেন দুনিয়া ও আখিরাতের সর্বময় কর্তৃত্ব, রাজত্বের অধিকারী। সবকিছুর মালিকানা তাঁরই।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

 ﴿فَلِلَّهِ ٱلۡأٓخِرَةُ وَٱلۡأُولَىٰ ٢٥﴾ [النجم: ٢٥]

“বস্তুত ইহকাল ও পরকাল আল্লাহরই।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ২৫]

﴿أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُ﴾ [الاعراف: ٥٤]

“জেনে রাখো, সৃষ্টি ও কর্তৃত্ব তাঁরই। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৪]

﴿لِّلَّهِ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ﴾ [البقرة: ٢٨٤]

“আকাশ ও যমীনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৮৪]

 ﴿قُلۡ إِنَّ ٱلۡأَمۡرَ كُلَّهُۥ لِلَّهِ﴾ [ال عمران: ١٥٤]

“হে নবী আপনি বলুন, যাবতীয় বিষয় আল্লাহরই এখতিয়ারে।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৫৪]

আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন বলবেন,

 ﴿لِّمَنِ ٱلۡمُلۡكُ ٱلۡيَوۡمَۖ لِلَّهِ ٱلۡوَٰحِدِ ٱلۡقَهَّارِ ١٦﴾ [غافر: ١٦]

“আজ রাজত্ব কার? সে তো একক প্রবল-পরাক্রান্ত আল্লাহর।” [সূরা গাফির, আয়াত: ১৬]

তিনি আরো বলবেন,

﴿فَٱلۡيَوۡمَ لَا يَمۡلِكُ بَعۡضُكُمۡ لِبَعۡضٖ نَّفۡعٗا وَلَا ضَرّٗا﴾ [سبا: ٤٢]

“আজ তোমাদের কেউ কারো ক্ষতি বা উপকার করার ক্ষমতা রাখবে না।” [সূরা সাবা, আয়াত: ৪২]

তিনি তাঁর নবীকে এভাবে জানিয়ে দিয়েছেন:

﴿وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا يَوۡمُ ٱلدِّينِ ١٧ ثُمَّ مَآ أَدۡرَىٰكَ مَا يَوۡمُ ٱلدِّينِ ١٨ يَوۡمَ لَا تَمۡلِكُ نَفۡسٞ لِّنَفۡسٖ شَيۡ‍ٔٗاۖ وَٱلۡأَمۡرُ يَوۡمَئِذٖ لِّلَّهِ ١٩﴾ [الانفطار: ١٧، ١٩]

“হে নবী! বিচার দিবস সম্বন্ধে তুমি কী জান? আবার বলছি, বিচার দিবস সম্বন্ধে তুমি কী জান?” এটা সেদিন, যেদিন কেউ কারো জন্য কিছু করার সামর্থ্য রাখবে না। সেদিন একক কর্তৃত্ব হবে শুধু আল্লাহর।” [সূরা আল-ইনফিতার, আয়াত: ১৭-১৯]

আল্লাহ তা‘আলা যেমন ইহকাল ও পরকালের একমাত্র মালিক, ঠিক তেমনিভাবে শাফা‘আতের একচ্ছত্র মালিক তিনিই। সর্বপ্রকার শাফা‘আত তাঁরই এখতিয়ার বা কর্তৃত্বাধীন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُل لِّلَّهِ ٱلشَّفَٰعَةُ جَمِيعٗاۖ لَّهُۥ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ ثُمَّ إِلَيۡهِ تُرۡجَعُونَ ٤٤﴾ [الزمر: ٤٤]

“হে নবী! আপনি বলুন, যাবতীয় শাফা‘আত একমাত্র আল্লাহরই এখতিয়ারে। আসমান-যমীনের কর্তৃত্ব একমাত্র তাঁরই। অতঃপর তার দিকেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৪৪]

আল্লাহ তা‘আলা শাফা‘আতের কথা বান্দাদের অন্তরে সৃষ্টি করবেন এবং যাকে ইচ্ছা শাফা‘আতের অনুমতি দিবেন।

বস্তুত শাফা‘আতের মালিকানা ও কর্তৃত্ব এককভাবে মহান আল্লাহর জন্যই সংরক্ষিত। যারা সুপারিশ করবেন তারা তো তাঁরই অনুমতি বা নির্দেশক্রমেই করবেন এবং তা তাঁরই রহমতের প্রকাশের কারণেই। এ হচ্ছে তাঁর ব্যক্তিগত ইচ্ছার প্রতিফলন। তাই তো মহান আল্লাহ কুরআনুল করীমে স্পষ্ট ঘোষণা করেন:

 ﴿مَا لَكُم مِّن دُونِهِۦ مِن وَلِيّٖ وَلَا شَفِيعٍۚ أَفَلَا تَتَذَكَّرُونَ ٤﴾ [السجدة: ٤]

“তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো অভিভাবক বা সুপারিশকারী নেই। তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?” [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ৪]

তিনি আরো বলেন,

﴿لَيۡسَ لَهُم مِّن دُونِهِۦ وَلِيّٞ وَلَا شَفِيعٞ﴾ [الانعام: ٥١]

“তিনি ছাড়া তাদের জন্য অন্য কোনো অভিভাবক বা সুপারিশকারী নেই”[সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৫১]

তিনি আরো বলেন,

﴿أَمِ ٱتَّخَذُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ شُفَعَآءَ﴾ [الزمر: ٤٣]

“তবে কি তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে শাফা‘আতকারী গ্রহণ করেছে?” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৪৩]

তিনি আরও বলেন,

﴿مَا مِن شَفِيعٍ إِلَّا مِنۢ بَعۡدِ إِذۡنِهِ﴾ [يونس: ٣]

তাঁর অনুমতি ছাড়া তো কোনো সুপারিশকারীই হতে পারে না।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ০৩]

এজন্য শাফা‘আত প্রার্থনা একমাত্র আল্লাহরই নিকট করতে হবে। কেননা আদালতে আখিরাতের ভয়ঙ্কর দিনে কেউ নিজের ক্ষমতাবলে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আকাশ ও পৃথিবীর মালিক রাজাধিরাজ ক্বাহ্‌হার যুলযালাল মহাপ্রতাপশালী আল্লাহর দরবারে শাফা‘আত করতে পারবে- এমন শক্তি কারো নেই। না আছে কোনো পয়গাম্বরের, না আছে কোনো ওলী-দরবেশের আর না আছে অন্য কারোর। এমন কি, টু শব্দটি করারও সাহস কারো থাকবে না। বরং সেদিন শাফা‘আত অস্তিত্ব লাভ করবে একমাত্র আল্লাহর অনুমতির মাধ্যমে। তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ কারো জন্য শাফা‘আত করতে পারবে না। এবং তার অনুমতি ছাড়া কোনো সুপারিশকারীও থাকবে না।

যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿مَا مِن شَفِيعٍ إِلَّا مِنۢ بَعۡدِ إِذۡنِهِ﴾ [يونس: ٣]

“তাঁর অনুমতি লাভ না করে শাফা‘আত করাবার কেউ নেই।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ০৩]

﴿مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِ﴾ [البقرة: ٢٥٥]

“কে আছে এমন যে, তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট শাফা‘আত করতে পারবে?” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৫৫]

﴿وَلَا تَنفَعُ ٱلشَّفَٰعَةُ عِندَهُۥٓ إِلَّا لِمَنۡ أَذِنَ لَهُ﴾ [سبا: ٢٣]

“তিনি যার জন্য সুপারিশের অনুমতি দিবেন সে ব্যতীত অন্য কারও সুপারিশ তাঁর কাছে কোনো কাজে আসবে না।” [সূরা সাবা, আয়াত: ২৩]

﴿يَوۡمَئِذٖ لَّا تَنفَعُ ٱلشَّفَٰعَةُ إِلَّا مَنۡ أَذِنَ لَهُ ٱلرَّحۡمَٰنُ وَرَضِيَ لَهُۥ قَوۡلٗا ١٠٩﴾ [طه: ١٠٩]

“দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দিবেন ও যার কথায় তিনি সন্তুষ্ট হবেন সে ছাড়া কারো সুপারিশ সেদিন কোনো কাজে আসবে না।” [সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ১০৯]

আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদেরকে নয় বরং ঈমানদারদেরকে সম্বোধন করে বলেন,

 ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَنفِقُواْ مِمَّا رَزَقۡنَٰكُم مِّن قَبۡلِ أَن يَأۡتِيَ يَوۡمٞ لَّا بَيۡعٞ فِيهِ وَلَا خُلَّةٞ وَلَا شَفَٰعَةٞۗ وَٱلۡكَٰفِرُونَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ٢٥٤﴾ [البقرة: ٢٥٤]

“হে ঈমানদারগণ! আমরা তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে তোমরা (আল্লাহর পথে) ব্যয় করো সে দিন আসার পূর্বে যেদিন বেচা-কেনা, বন্ধুত্ব ও শাফা‘আত কিছুই থাকবে না। সত্য প্রত্যাখ্যানকারীরাই প্রকৃত যালিম বা অপরাধী।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৫৪]

এ আয়াতে ولا شفاعة শাফা‘আত বা সুপারিশ নেই, এ কথার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কেউ কারো জন্য সুপারিশ করতে পারবে না, বরং আল্লাহর অনুমতির মাধ্যমে শাফা‘আত অস্তিত্ব লাভ করবে।

বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামতের দিন ‘সায়্যিদুশ শুফা‘আ’ বা শাফা‘আতকারীদের সর্দার হবেন। এ সত্ত্বেও তাঁর পক্ষেও আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কারো জন্য শাফা‘আত করা সম্ভব হবে না। যতক্ষণ না তাকে বলা হবে, সুপারিশ করার জন্য। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই বলেছেন:

«آتي تَحْتَ الْعَرْشِِ فَأَخِرُّ سَاجِدًا ... ثُمَّ يُقَالُ»

“আমি ‘আরশের নিচে আসব আর সাজদায় লুটিয়ে পড়ব, তারপর বলা হবে:

«إرْفَعْ رَأسَكَ, قُلْ تُسْمَعْ, وَسَلْ تُعْطَ, وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ»

“হে মুহাম্মাদ! তোমার মাথা উঠাও, বল, শোনা হবে। প্রার্থনা কর, তোমাকে দেওয়া হবে। সুপারিশ করো, তোমার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে”

লক্ষ্যণীয় যে, আল্লাহ জাল্লা শানুহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শাফা‘আতের অনুমতি দিয়েছেন এবং এও জানিয়ে দিয়েছেন যে, তার শাফা‘আত মঞ্জুর করা হবে। অর্থাৎ ক্ষমাকারী বা উদ্ধারকারী হিসেবে আল্লাহই সার্বভৌম কর্তৃত্ববান।

কিয়ামতের দিন মহানবী নিজেই আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে বলবেন:

«يَارَبِّ وَعَدْتَّنِيْ الشَّفَاعَةَ فَشَفِّعْنِي فِي خَلْقِكَ»

“হে আমার রব! আপনি আমাকে শাফা‘আতের ওয়াদা দিয়েছিলেন। অতএব, আমাকে আপনার সৃষ্টির জন্য সুপারিশকারী বনিয়ে দিন”[1]

তখন তাঁকে সুপারিশকারী বানিয়ে দেওয়া হবে। অতএব, বুঝা গেল যে, কিয়ামত দিবসে অনুষ্ঠিত শাফা‘আত একমাত্র আল্লাহরই অনুমতি সাপেক্ষ। অর্থাৎ যাকে ইচ্ছা সুপারিশের অনুমতি দেওয়া ও যাকে ইচ্ছা না দেওয়া এবং যার জন্য ইচ্ছা করতে দেওয়া আর যার জন্য ইচ্ছা করতে না দেওয়া এবং কারো শাফা‘আত শোনা বা না শোনা আর তা কবুল করা বা না করা সর্বশক্তিমান আল্লাহর একক এখতিয়ারে। তিনি ছাড়া যে-ই হোক না কেন তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ শাফা‘আত করার সাহস করতে পারবে না। তাই যারা আখিরাতের আদালতে বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফা‘আত লাভের উচ্চাকাঙ্খা রাখে তার জন্য উচিৎ, শাফা‘আত ও দো‘আ কবুলের মালিক মহান আল্লাহর দরবারেই শাফা‘আত ও অন্যান্য বিষয়ে দো‘আ করা। যাতে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমাদের জন্য শাফা‘আত করার অনুমতি প্রদান করেন, যেমনিভাবে সমস্ত সৃষ্টিকুল তাঁরই নিকট প্রার্থনা করে থাকে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

 ﴿يَسۡ‍َٔلُهُۥ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ﴾ [الرحمن: ٢٩]

“আকাশ ও যমীনের সবাই তাঁরই সমীপে প্রার্থনা করে।” [সূরা আর-রহমান, আয়াত: ২৯]

তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لِيَسْأَلْ أَحَدُكُمْ رَبَّهُ حَاجَاتَهِ كُلَّهَا حَتّى يَسْألَ شَسْعَ نَعْلِه اِذَا انْقَطَعَ»

“তোমাদের প্রত্যেককেই নিজ পালনকর্তা আল্লাহর নিকট যাবতীয় হাজাত ও প্রয়োজনের প্রার্থনা করা কর্তব্য; এমনকি নিজের জুতার ফিতার জন্যেও প্রার্থনা করবে যদি তা ছিড়ে যায়”[2]

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, আখেরাতে অনুষ্ঠেয় শাফা‘আতের প্রার্থনার বিষয়টি আমাদের অনেকের কাছেই অস্পষ্ট। আবার অনেককে শাফা‘আত প্রার্থনায় অত্যন্ত আন্তরিক দেখা গেলেও যার নিকট প্রার্থনা করা কর্তব্য ও ফরয তারা তাঁর নিকট শাফা‘আত প্রার্থনা করছেন না বরং তারা শির্কী প্রার্থনায় লিপ্ত রয়েছেন। এটা ইসলাম আদৌ অনুমোদন করে না। নিম্নে শাফা‘আতের বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

 শাফা‘আতের অর্থ:

শাফা‘আত-এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, সুপারিশ, মাধ্যম ও দো‘আ বা প্রার্থনা। পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে,

سُؤَالُ الْخَيْرِ لِلْغَيْرِ

“অপরের জন্য কল্যাণ প্রার্থনা করা।”[3]

কেউ কেউ বলেছেন:

وَهِيَ السُّؤَالُ فِيْ التَّجَاوزِ عَنْ الذُّنُوْبِ وَ الْجَرَائِمِ

“শাফা‘আত হচ্ছে পাপ ও আযাব হতে মুক্তির প্রার্থনা করা”[4]

 শাফা‘আতের প্রকারভেদ

আখেরাতে অনুষ্ঠিত শাফা‘আত সম্পর্কে দু’প্রকার আক্বীদাহ বিদ্যমান।

এক. শরী‘আত সম্মত শাফা‘আত, দুই. শির্কী শাফা‘আত

শরী‘আতসম্মত শাফা‘আত:

যে শাফা‘আতের দো‘আ বা প্রার্থনা আল্লাহ তা‘আলার নিকট করা হয় তাকে শরী‘আতসম্মত শাফা‘আত বলা হয়। একে শাফা‘আতে মুসবাতাহ বা শরী‘আতস্বীকৃত শাফা‘আতও বলা হয়। আবার শাফা‘আতে মাকবুলাও বলা হয়।

শির্কী শাফা‘আত

যে শাফা‘আতের দো‘আ গাইরুল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর নিকট করা হয় তাকে শির্কী শাফা‘আত বলা হয়। এর অপর নাম শাফা‘আতে মানফিয়্যাহ বা নিষিদ্ধ শাফা‘আত। একে শাফা‘আতে মারফুদ্বাহও বলা হয়।[5]

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেছেন,

الشفاعة التي أبطلها شفاعة الشريك فإنه لا شريك له والتي أثبتها شفاعة العبد المأمور.

“আল্লাহ তা‘আলা যে শাফা‘আতকে বাতিল করেছেন তা হলো শির্কী শাফা‘আত। কেননা তাঁর কোনো শরীক নেই। আর তিনি যে শাফা‘আতকে সাব্যস্ত করেছেন তা হলো তাঁর অনুমোদনপ্রাপ্ত বান্দার শাফা‘আত।”[6]

 শরী‘আত সম্মত শাফা‘আতের প্রকারভেদ

কুরআন-হাদীস স্বীকৃত শাফা‘আত হচ্ছে সর্বমোট আট প্রকার। ইসলামী আক্বীদার কিতাব-পত্রে মোট আট প্রকার শাফা‘আতের উল্লেখ রয়েছে। একে শাফা‘আতে মুছবাতাও বলা হয়। আবার শাফা‘আতে মাকবুলাও বলা হয়।

১ম প্রকার শাফা‘আত

‘আশ-শাফা‘আতুল উজমা’ বা সর্ববৃহৎ শাফা‘আত যা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য খাস। আর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ‘শাফা‘আতে কুবরা’ ও মাকামে মাহমূদের মর্যাদা দান করবেন। হাশরের মাঠে দীর্ঘকাল অবস্থানে ক্লান্ত লোকেরা বিচারের আবেদন জানালে বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টিকূলের বিচার কাজ শুরু করার প্রার্থনা জানাবেন রাব্বুল আলামীনের দরবারে।

২য় প্রকার শাফা‘আত

সৃষ্টির বিচার ও তাদের হিসাব-নিকাশ শেষ হলে জান্নাতীদেরকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতিদানের জন্য রাসূলের শাফা‘আত।

৩য় প্রকার শাফা‘আত

চাচা আবু তালিব-এর শাস্তি হালকা করার জন্য রাসূলের শাফা‘আত। এই তিন প্রকারের শাফা‘আত আমাদের নবীজীর একক বৈশিষ্ট্য। এতে আর কেউ শরীক নন।

৪র্থ প্রকার শাফা‘আত

একত্ববাদে বিশ্বাসী গুনাহগার মুমিনবান্দা, যারা জাহান্নামের উপযুক্ত কিন্তু তাদেরকে জাহান্নামে না পাঠানোর জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফা‘আত।

৫ম প্রকারের শাফা‘আত

যেসব গুনাহগার মুমিন একত্ববাদে বিশ্বাসী হয়েও জাহান্নামে প্রবেশ করবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাফা‘আত করবেন।

৬ষ্ঠ প্রকার শাফা‘আত

জান্নাততবাসীদের মধ্যে কোনো কোনো জান্নাতীর দরজা ও মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফা‘আত।

৭ম প্রকার শাফা‘আত

যাদের নেকী-বদী, পাপ-পূণ্য সমান হবে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেওয়ার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফা‘আত। তারা আহলে আ‘রাফ বলে কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন।

৮ম প্রকার শাফা‘আত

কোনো কোনো উম্মতকে বিনা হিসাবে ও আযাবে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেওয়ার জন্য রাসূলের শাফা‘আত। যেমন, তিনি উক্কাশা ইবন মিহসান রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্য আল্লাহর দরবারে দো‘আ করেছিলেন যে, তাকে যেন সেই সত্তর হাজার লোকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় যাদেরকে বিনা হিসাব ও বিনা আযাবে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে।

বি. দ্র. শেষোক্ত ৫ প্রকার শাফা‘আতের মধ্যে আমাদের নবীজীর সাথে অন্যান্যরা শাফা‘আত করবেন। যেমন, নবীগণ, ফিরিশতাগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ, নেককার বান্দাগণ সকলেই শাফা‘আত করবেন, অবশ্য আল্লাহর অনুমতিক্রমে।[7]

শাফা‘আতের মালিক কে?

মহান আল্লাহ তা‘আলাই হচ্ছেন শাফা‘আতের একচ্ছত্র মালিক। কেননা শাফা‘আত একমাত্র তাঁরই অধিকারে, তাঁরই ক্ষমতাধীন। সর্বপ্রকার শাফা‘আতের চাবিকাঠি একমাত্র তাঁরই হাতে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُل لِّلَّهِ ٱلشَّفَٰعَةُ جَمِيعٗا﴾ [الزمر: ٤٤]

“হে নবী! বলে দিন, সকল শাফা‘আত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই অধিকারে।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৪৪]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿مَا لَكُم مِّن دُونِهِۦ مِن وَلِيّٖ وَلَا شَفِيعٍ﴾ [السجدة: ٤]

“আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত তোমাদের সাহায্যকারী ও সুপারিশকারী আর কেউ নেই।” [সূরা আল-সাজদাহ, আয়াত: ৪]

আল্লাহ আরও বলেন,

 ﴿وَأَنذِرۡ بِهِ ٱلَّذِينَ يَخَافُونَ أَن يُحۡشَرُوٓاْ إِلَىٰ رَبِّهِمۡ لَيۡسَ لَهُم مِّن دُونِهِۦ وَلِيّٞ وَلَا شَفِيعٞ﴾ [الانعام: ٥١]

“আর এর দ্বারা (কুরআন দ্বারা) আপনি তাদেরকে সতর্ক করে দিন, যারা ভয় করে যে, তাদেরকে তাদের রবের দিকে সমবেত করা হবে, (এ অবস্থায় যে) তিনি ছাড়া তাদের জন্য থাকবে না কোনো সাহায্যকারী আর না সুপারিশকারী। হয়ত তারা তাকওয়া অবলম্বন করবে।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৫১]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿وَذَكِّرۡ بِهِۦٓ أَن تُبۡسَلَ نَفۡسُۢ بِمَا كَسَبَتۡ لَيۡسَ لَهَا مِن دُونِ ٱللَّهِ وَلِيّٞ وَلَا شَفِيعٞ﴾ [الانعام: ٧٠]

“এবং আপনি এই কুরআন দ্বারা উপদেশ প্রদান করুন যাতে কোনো ব্যক্তি নিজের কর্মকাণ্ডের কারণে ধ্বংসের শিকার না হয়, যখন আল্লাহ ছাড়া তার জন্য কোনো সাহায্যকারী ও সুপারিশকারী থাকবে না”[সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৭০]

তিনি আরও বলেন,

﴿مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِ﴾ [البقرة: ٢٥٥]

“কে আছে এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৫৫]

 পার্থিব শাফা‘আত ও আখেরাতের শাফা‘আতের পার্থক্য

আমরা আখেরাতে অনুষ্ঠিত শাফা‘আত বিষয়ে আলোচনা করছি। আমাদের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে আখেরাতে অনুষ্ঠিত শাফা‘আত। পার্থিব বিষয়ে শাফা‘আত আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়। কারণ, ভালো কাজের জন্য পরস্পরের শাফা‘আত সম্পূর্ণ বৈধ ও জায়েয। এতে কোনো মতভেদ নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿مَّن يَشۡفَعۡ شَفَٰعَةً حَسَنَةٗ يَكُن لَّهُۥ نَصِيبٞ مِّنۡهَاۖ وَمَن يَشۡفَعۡ شَفَٰعَةٗ سَيِّئَةٗ يَكُن لَّهُۥ كِفۡلٞ مِّنۡهَا﴾ [النساء: ٨٥]

“যে ব্যক্তি সৎকাজের জন্য কোনো সুপারিশ করবে তা থেকে সেও একটি অংশ পাবে, আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজের জন্য সুপারিশ করবে সেও তার বোঝার একটি অংশ পাবে”[সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮৫]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«اِشْفَعُوْا تُؤْجَرُوْا»

“তোমরা সুপারিশ কর পুরস্কার পাবে”[8]

তাই পার্থিব বিষয়ে পরস্পরের জন্য সুপারিশ করা জায়েয ও কুরআন-সুন্নাহ সম্মত। তবে শর্ত হচ্ছে বৈধ বিষয়ে হতে হবে।

তবে আকাইদ শাস্ত্রবিদগণ বলেছেন,

اَلشَّفَاعَةُ عِنْدَ اللهِ لَيْسَتْ كَالشَّفَاعَةِ عِنْدَ الْبَشَرِ

“আল্লাহর কাছে সুপারিশ করার বিষয়টি মানুষের কাছে সুপারিশ করার মতো নয়।”[9]

শাফা‘আত কখন অনুষ্ঠিত হবে?

শাফা‘আতের একমাত্র মালিক মহান আল্লাহ তা‘আলা। তাঁর অনুমতিক্রমে কিয়ামতের দিবসে শাফা‘আত অনুষ্ঠিত হবে।

ইমাম ইবন জারীর আত-তাবারী রহ. ﴿مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِ[البقرة: ٢٥٥] আয়াতের ব্যখ্যায় লিখেছেন:

 وَفِي هَذِهِ الْآيَةِ بَيَانٌ أنَّ الشَّفَاعَةَ إِنَّمَا تَقَعُ في الدَّارِ الْآخِرَةِ بِإذْنِه

এ আয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে, শাফা‘আত পরকালে কিয়ামত দিবসেই আল্লাহর অনুমতিক্র অনুষ্ঠিত হবে।[10]

আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কিয়ামতের ময়দানে কেউ শাফা‘আত করতে পারবে না। কেননা আখিরাতের আদালতে কোনো শ্রেষ্ঠতম নবী-রাসূল এবং কোনো নিকটতম ফিরিশতাও সর্বশক্তিমান আল্লাহর দরবারে বিনা অনুমতিতে একটি শব্দও উচ্চারণ করার সাহস পাবে না।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِ﴾ [البقرة: ٢٥٥]

“কে আছে এমন, যে আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট শাফা‘আত করতে পারবে”? [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৫৫]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

 ﴿يَوۡمَئِذٖ لَّا تَنفَعُ ٱلشَّفَٰعَةُ إِلَّا مَنۡ أَذِنَ لَهُ ٱلرَّحۡمَٰنُ وَرَضِيَ لَهُۥ قَوۡلٗا ١٠٩﴾ [طه: ١٠٩]

“দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দিবেন ও যার কথা তিনি পছন্দ করবেন সে ছাড়া কারো শাফা‘আত সেদিন কোনো কাজে আসবে না।” [সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ১০৯]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَوۡمَ يَأۡتِ لَا تَكَلَّمُ نَفۡسٌ إِلَّا بِإِذۡنِهِ﴾ [هود: ١٠٥]

“এমন একদিন আসবে যেদিন কেউ আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কথা বলতে পারবে না।” [সূরা হূদ, আয়াত: ১০৫]

আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন সম্পর্কে বলেছেন:

﴿وَمَا قَدَرُواْ ٱللَّهَ حَقَّ قَدۡرِهِۦ وَٱلۡأَرۡضُ جَمِيعٗا قَبۡضَتُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَٱلسَّمَٰوَٰتُ مَطۡوِيَّٰتُۢ بِيَمِينِهِۦۚ سُبۡحَٰنَهُۥ وَتَعَٰلَىٰ عَمَّا يُشۡرِكُونَ ٦٧﴾ [الزمر: ٦٧]

“এসব লোকেরা তো আল্লাহর কদর যতটুকু করা উচিৎ ছিল তা করলো না অথচ কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী তার মুঠোর মধ্যে থাকবে। আর আকাশসমূহ থাকবে তাঁর ডান হাতের মধ্যে পেঁচানো বা ভাজ করা অবস্থায়। এসব লোকেরা যে শির্ক করে তা হতে তিনি সম্পূর্ণ পবিত্র ও বহু ঊর্ধ্বে [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬৭]

 শাফা‘আত কারা করবেন?

আখিরাতের আদালতে মহান আল্লাহর অনুমতিক্রমে যারা শাফা‘আত করবেন তারা হচ্ছেন, নবীগণ, ফিরিশতাবৃন্দ, শহীদগণ, আলিম-উলামা, হাফেযে কুরআন এবং নাবালগ সন্তান। তাদের শাফা‘আত কুরআন-হাদীসের অকাট্য প্রমাণাদি দ্বারা প্রমানিত। তাদের মধ্যে সায়্যিদুশ শুফা‘আ বা শাফা‘আতকারীদের সর্দার হলেন বিশ্বনবী মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যেমন, তিনি বলেছেন:

«أَنَا أَوَّلُ شَافِعٍ وَ أَوَّلُ مُشَفَّعٍ»

“আমিই প্রথম সুপারিশকারী এবং আমার শাফা‘আতই প্রথম গ্রহণ করা হবে।”[11]

তিনি আরও বলেছেন:

«يَشْفَعُ الشَّهِيْدُ فِي سَبْعِيْنَ مِنْ أَهْلِ بَيْتِه»

 “শহীদ তার পরিবারের সত্তর জনের জন্য সুপারিশ করবে”[12]

তিনি আরও বলেছেন:

«اِقرءوا القرآن فإنه يأتي يوم القيامة شفيعا لأهله»

“তোমরা কুরআন পাঠ কর। কেননা এ কুরআন তার পাঠকারীর জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশকারী হয়ে আবির্ভূত হবে”[13]

 শাফা‘আতের শর্ত

তবে এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, উল্লিখিত সুপারিশকারীগণ আখিরাতের আদালতে স্বেচ্ছায় যার-তার জন্য সুপারিশ করতে পারবে না, বরং তাদের সুপারিশ অস্তিত্ব লাভ করবে দু’টি শর্তে:

প্রথম শর্ত: শাফা‘আতকারীকে শাফা‘আতের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে অনুমতি প্রদান করা। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِ﴾ [البقرة: ٢٥٥]

“কে আছে এমন, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত শাফা‘আত করতে পারবে? [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৫৫]

﴿مَا مِن شَفِيعٍ إِلَّا مِنۢ بَعۡدِ إِذۡنِهِ﴾ [يونس: ٣]

“তাঁর অনুমতি লাভ না করে সুপারিশ করার কেউ নেই।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৩]

এতে স্পষ্ট যে, সুপারিশকারীকে অবশ্যই সুপারিশের অনুমতি প্রাপ্ত হতে হবে। অর্থাৎ বিনা অনুমতিতে সুপারিশ করার কেউ নেই। সুপারিশ স্বেচ্ছামূলক নয়, বরং তা হবে অনুমতিক্রমে।

দ্বিতীয় শর্ত: যার জন্য সুপারিশ করা হবে তার প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকা। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿وَلَا يَشۡفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ٱرۡتَضَىٰ﴾ [الانبياء: ٢٨]

“এবং যার প্রতি তিনি (আল্লাহ) সন্তুষ্ট, তার জন্য ছাড়া অন্য কারো জন্য তারা শাফা‘আত করে না”[সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ২৮]

এতে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, সুপারিশ তারাই পাবেন যারা আল্লাহর প্রিয়জন হবেন।

আল্লাহর নিকট অপ্রিয় এমন কারো জন্য কোনো সুপারিশ চলবে না। এটি আরো পরিস্কার হয়ে যায় কুরআন বর্ণিত নিম্নোক্ত ঘটনাবলীর দ্বারা যে, আল্লাহ তা‘আলা মহাপ্লাবন থেকে কেনানকে রক্ষা করার ব্যাপারে নবী নূহ আলাইহিস সালামের সুপারিশ গ্রহণ করেন নি। পিতা আযরের জন্যে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ক্ষমা করে দেওয়ার সুপারিশ গ্রহণ করেন নি। আর মুনাফিকদের ব্যাপারে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿ٱسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ أَوۡ لَا تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ إِن تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ سَبۡعِينَ مَرَّةٗ فَلَن يَغۡفِرَ ٱللَّهُ لَهُمۡ﴾ [التوبة: ٨٠]

“হে নবী! তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, অথবা তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না কর। যদি তুমি তাদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমা প্রার্থনা কর তথাপিও আল্লাহ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না”[সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৮০]

এ শর্ত দু’টিকে আল্লাহ তা‘আলা অপর এক আয়াতে একত্রে বলেছেন:

﴿وَكَم مِّن مَّلَكٖ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ لَا تُغۡنِي شَفَٰعَتُهُمۡ شَيۡ‍ًٔا إِلَّا مِنۢ بَعۡدِ أَن يَأۡذَنَ ٱللَّهُ لِمَن يَشَآءُ وَيَرۡضَىٰٓ ٢٦﴾ [النجم: ٢٦]

“আর আসমানসমূহে অনেক ফিরিশতা রয়েছে, তাদের সুপারিশ কোনোই কাজে আসবে না। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন এবং যার প্রতি তিনি সন্তুষ্ট, তার ব্যাপারে অনুমতি দেওয়ার পর। [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ২৬][14]

মোদ্দাকথা: সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর আদালতে যোগ্য সুপারিশকারী নির্বাচনের কারণে সুপারিশ গ্রহণ করা হয় না, বরং সুপারিশ করার জন্য আল্লাহর অনুমোদন ও সুপারিশ যার জন্য করা হবে তাকে আল্লাহর প্রিয় পাত্র হওয়ার কারণেই মাত্র সুপারিশ গ্রহণ করা হয়।

সুতরাং উল্লিখিত শর্তদ্বয়ের বর্তমানেই শাফা‘আত অস্তিত্ব লাভ করবে এবং সুপারিশকারীরা সুপারিশ করবেন। সুপারিশকারীদের সরদার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামতের দিন সাজদায় লুটিয়ে পড়বেন এবং আল্লাহ তা‘আলাকে বলবেন:

«يَارَبِّ وَعَدْتَنِي الشَّفَاعَةَ فَشَفِّعْنِيْ فِيْ خَلْقِكَ»

“হে আমার রব, আপনি আমাকে শাফা‘আত এর ওয়াদা দিয়েছেন। এতএব, আপনার সৃষ্টির জন্য সুপারিশ কবুল করুন।”[15]

আল্লামা মাহমূদ আলুসী বাগদাদী রহ. বলেন,

والمعنى أن الله تعالى مالك الشفاعة كلها لا يستطيع أحد شفاعتما إلا أن يكون المشفوع مرتضى والشفيع مأذونا له وكلاهما مفقودان ههنا... وقوله تعالى ﴿أَنَّ ٱللَّهَ لَهُۥ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ﴾ [البقرة: ١٠٧]

استئناف تعليلي لكون الشفاعة جميعا له عزوجل كأنه قيل: له ذلك لأنه جل وعلا مالك كله فلا يتصرف أحد بشيء منه بدون إذنه ورضاه . فالسماوات والأرض كناية عن كل ماسواه سبحانه)

“আয়াতের অর্থ হচ্ছে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনই গোটা শাফা‘আতের একচ্ছত্র মালিক। সুতরাং অন্য কেই শাফা‘আতের সামান্যতম অধিকারও রাখে না। কিন্তু যদি শাফা‘আতপ্রাপ্ত ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রাপ্ত হয় এবং শাফা‘আতকারী ব্যক্তি আল্লাহর অনুমতি প্রাপ্ত হয় (তবে সে শাফা‘আত করবে) আর উভয়টি এখানে (দুনিয়ায়) অনুপস্থিত।...আর আল্লাহর বাণী: (আকাশ এবং পৃথিবীর একক আধিপত্য তাঁরই) শাফা‘আতের একচ্ছত্র মালিকানা আল্লাহর হওয়ার এটিও একটি পৃথক কারণ। এখানে যেন বলা হচ্ছে, সমস্ত শাফা‘আত আল্লাহরই অধিকারে কেননা আল্লাহ জাল্লা শানুহু হলেন সমস্ত রাজত্বের নিয়ন্ত্রণকারী । সুতরাং আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ তার অনুমতি ও সন্তুষ্টি ব্যতীত শাফা‘আতের সামন্যতমও অধিকার রাখে না।”

আলোচ্য আয়াতে আকাশ ও পৃথিবীকে উল্লেখ করে আল্লাহ ব্যতীত বাকী সবকিছুকেই বুঝিয়েছেন”।[16]

আল্লামা তাফতাযানী রহ. বলেন, ইমাম মাকদিসী রহ. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বলে যে, কোনো মাখলুক আল্লাহর সমীপে তাঁর অনুমতি ছাড়া শাফা‘আত করবে তবে সে যেন বিশ্ব মুসলিমের ইজমা ও কুরআনের সুস্পষ্ট বর্ণনাসমূহের বিরোধিতা করল।’[17]

 কারা শাফা‘আত থেকে বঞ্চিত হবে?

কিয়ামত দিবসে অনুষ্ঠিত শাফা‘আত থেকে বঞ্চিত হবে যারা প্রকাশ্য শির্ক ও কুফুরীর গুনাহে লিপ্ত ছিল এবং এরই ওপর মারা গেছে। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنۡ أَهۡلِ ٱلۡكِتَٰبِ وَٱلۡمُشۡرِكِينَ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَٰلِدِينَ فِيهَآۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمۡ شَرُّ ٱلۡبَرِيَّةِ ٦﴾ [البينة: ٦]

“আহলে কিতাবের মধ্যে যারা কাফির এবং যারা মুশরিক, তারা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ী ভাবে থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম”[সূরা আল-বায়্যিনাহ, আয়াত: ৬]

যারা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকবে তাদের কোনো রক্ষাকারী বা সাহায্যকারী নেই।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,

 ﴿أَفَمَنۡ حَقَّ عَلَيۡهِ كَلِمَةُ ٱلۡعَذَابِ أَفَأَنتَ تُنقِذُ مَن فِي ٱلنَّارِ ١٩﴾ [الزمر: ١٩]

“হে নবী, সে ব্যক্তিকে কে বাঁচাতে পারে যার ওপর আযাবের ফয়সালা হয়ে গেছ, তুমি কি তাকে বাঁচাতে পার যে জাহান্নামে রয়েছে”? [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ১৯]

এতে বুঝা গেল, এ সব জাহান্নামীদের জন্য কোনো শাফা‘আতকারী নেই। নেই কোনো রক্ষাকারী। তাদের ব্যাপারে কোনো শাফা‘আত গ্রহণও করা হবে না। কারণ, তারা ঈমানশূন্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

 ﴿فَمَا تَنفَعُهُمۡ شَفَٰعَةُ ٱلشَّٰفِعِينَ ٤٨﴾ [المدثر: ٤٨]

“সুতরাং সুপারিশকারীদের শাফা‘আত তাদের কোনো উপকারে আসবে না”[সূরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত: ৪৮]

তিনি আরও বলেন,

 ﴿مَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ حَمِيمٖ وَلَا شَفِيعٖ يُطَاعُ ١٨﴾ [غافر: ١٨]

“যালিমদের জন্য কোনো বন্ধু নেই এবং এমন কোনো শাফা‘আতকারী নেই যার শাফা‘আত গ্রাহ্য হবে”[সূরা গাফির, আয়াত: ১৮]

এ ছাড়া যারা আল্লাহর দীনের মধ্যে বিকৃতি এনেছে অথবা এর মধ্যে পরিবর্তন করেছে তাদের অবস্থাও সম্পূর্ণ আশংকাজনক। কারণ, তারা হাউজে কাউসারের পানি পান করতে পারবে না। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এই বলে তাড়িয়ে দিবেন:

«سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ غَيّرَ بَعْدي وَ فِي رواية: سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ بَدَّلَ بَعْدِيْ»

“দূর হও, ধ্বংস হও যারা আমার পর (দীনের মধ্যে) পরিবর্তন বা রদবদল করেছ”[18]

তাই আমাদের সবাইকে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পুরোপুরিভাবে মেনে চলতে হবে এবং কোনো অবস্থাতেই আল্লাহর দীনের অপব্যাখ্যা করা যাবে না, সম্পূর্ণ অবিকৃতভাবেই তা গ্রহণ করতে হবে। বস্তুত: তাওহীদ হচ্ছে মানুষের চিরমুক্তির সুনিশ্চিত সনদ আর শির্ক হচ্ছে ধ্বংসের মূল। তাই তাওহীদবাদী ঈমানদার লোক মহাপাপী হলেও মুক্তি পাবে। আর মুশরিক মহাজ্ঞানী ও গুণধর হলেও অমার্জনীয় অপরাধী। এজন্য ইসলামের নবী বলেছেন:

«فَهِيَ نَائِلَةٌ إِنْ شَاءَ اللهُ مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِيْ لاَيُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئاَ»

“আমার উম্মতের মধ্যে এই শাফা‘আত ইনশাআল্লাহ সে ব্যক্তি লাভ করবে যে আল্লাহর সাথে কোনো কিছুকে শরীক না করা অবস্থায় মারা গেছে।”[19]

হে আল্লাহ আমাদের সবাইকে শির্ক মুক্ত জীবন যাপনের তাওফীক দান করুন। আমিন।

 শাফা‘আত ব্যতীত কেউ কি জান্নাতে প্রবেশ করবে?

তার জবাবে আকাইদ শাস্ত্রবিদগণ বলেছেন:

نَعَمْ يخْرُجُ اللهُ أقْوَامًا مِنَ النَّارِ بِغَيْرِ شَفَاعَةٍ بَلْ بِفَضْلِه وَرَحْمَتِه وَيَبْقى فِى الْجَنَّةِ

“হ্যাঁ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কিছু লোককে শাফা‘আত ছাড়াই তাঁর অশেষ অনুগ্রহ ও করুণাবলে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তারা আল্লাহর অনুগ্রহেই জান্নাতে চিরকাল অবস্থান করবে...।”[20]

কেননা আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দীর্ঘ একটি হাদীসে বলেছেন:

«فَيَقُوْلُ اللهُ شَفَعَتْ الْمَلاَئِكَةُ وَشَفَعَ الْنَبِيُّوْنَ وَ شَفَعَ الْمُؤْمِنُوْنَ وَ لَمْ يَبْقَ إلاَّ اَرْحَمُ الرَّاحِمِيْنَ فَيَقْبِضُ قَبْضَةً مِنَ النَّارِ فَيخْرجُ مِنْهَا قَوْمًا لَمْ يَعْمَلُوْا خَيْرًا قَطُّ».

“তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন যে, ফিরিশতারা শাফা‘আত করল, নবীরাও শাফা‘আত করল, মুমিনবৃন্দ শাফা‘আত করল এবং শেষ পর্যন্ত আল্লাহ মহা করুণাময় ছাড়া অন্য কেউ অবশিষ্ট থাকল না। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের অগ্নি থেকে একমুষ্টি গ্রহণ করবেন এবং সেখান থেকে এমন একদল লোককে বের করে নিয়ে আসবেন যার কখনো কোনো সৎকর্ম করে নি”[21]

মহান আল্লাহ বলেন,

 ﴿قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِ﴾ [الزمر: ٥٣]

“বল, হে আমার বান্দারা যারা নিজেদের ওপর চরম বাড়াবাড়ী করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না”[সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫৩]

তিনি অন্যত্র বলেন,

«فَأَقُولُ ياَرَبِّ ائذَن لِي فِيْمَنْ قَالَ:(لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهَ) فَيَقُوْلُ: وَعِزَّتِي وَجَلاَلِيْ وَكِبْرِياَئيِ وَعَظْمَتِيْ لَأخْرِجَنَّ مِنْهَا مَنْ قَالَ: (لاَإِلَهَ إِلاَّ اللهَ)»

“তখন আমি বলব, হে আমার রব! যে ব্যক্তি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলেছে তার ব্যাপারে আমাকে (শাফা‘আতের) অনুমতি দিন। প্রতি-উত্তরে আল্লাহ তা‘আলা বলবেন “আমার শ্রেষ্ঠত্ব, বড়ত্ব, মহত্ব, ও ইজ্জতের কসম করে বলছি আমিই সেখান থেকে এদেরকে বের করে নিয়ে আসব যারা বলেছে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”[22]

তাঁর দয়া ও রহমতের একশ ভাগ হতে মাত্র এক ভাগ তিনি গোটা সৃষ্টিকুলের মাঝে বিতরণ করেছেন। আর নিরানব্বই ভাগ দয়া ও রহমত তিনি কিয়ামত দিবসে প্রকাশ করার জন্য সংরক্ষিত রেখেছেন। সত্যি তিনি ‘আরহামুর রাহিমীন’ সবচেয়ে বড় দয়াশীল। তাই সর্বাবস্থায় তাঁরই ওপর ভরসা করতে হবে। কোনো বিষয়েই গাইরুল্লাহর ওপর ভরসা করা যাবে না। তিনি বলেছেন:

﴿وَعَلَى ٱللَّهِ فَتَوَكَّلُوٓاْ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ٢٣﴾ [المائ‍دة: ٢٣]

“আর আল্লাহর ওপরই ভরসা কর যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক”[সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ২৩]

তিনি আরও বলেন,

﴿قَالَ وَمَن يَقۡنَطُ مِن رَّحۡمَةِ رَبِّهِۦٓ إِلَّا ٱلضَّآلُّونَ ٥٦﴾ [الحجر: ٥٦]

“পথভ্রষ্ট লোকেরা ব্যতীত নিজ রবের রহমত থেকে আর কে নিরাশ হতে পারে”? [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৫৬]

“তিনি (আল্লাহ) যদি সূক্ষ্মভাবে হিসেব কষতে শুরু করেন তাহলে কার এমন দুঃসাহস আছে যে নিজ বলে জান্নাত লাভ করার দাবী করতে পারে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথাই বলেছেন। তিনি বলেন,

«اعْلَمُوْا وَسَدٍّدُوْا وَقَرٍبُوْا وَاعْلَمُوْا أَنَّ أَحَدًا لَنْ يدْخُلَهُ عَمَلُه الْجَنَّةَ»

“আমল কর এবং নিজের সাধ্যমত সর্বাধিক সঠিক কাজ করার চেষ্টা কর এবং সত্যের কাছাকাছি থাক, জেনে রাখবে, কোনো ব্যক্তিকে শুধু তার আমল জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারবে না।”

লোকেরা বললো: হে আল্লাহর রাসূল আপনার আমলও কি পারবে না? তিনি বললেন:

«وَلاَ أَنَا إِلاَّ أَنْ يَتَغَمَّدَنِي اللهُ بِرَحْمَتِهِ»

“না, আমিও না, তবে আমার রব তাঁর রহমত দ্বারা আমাকে আচ্ছাদিত করে নিয়েছেন।”[23]

আল্লাহর ওপর ভরসা করা তাওহীদ ও ঈমানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবী। বান্দা তার দীন, দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণ ও নি‘আমত আল্লাহর কাছেই কামনা করবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই দো‘আ করতেন:

«اَللَّهُمَّ مَا اَصْبَحَ بِيْ مِنْ نِعْمَةٍ اَوْ بِأَحَدٍ مِنْ خَلْقِكَ فَمِنْكَ وَحْدَكَ لاَشَرِيْكَ لَكَ فَلَكَ الْحَمَدُ وَلَكَ الشُكْرُ»

“হে আল্লাহ! আমি অথবা আপনার কোনো সৃষ্টি যে অশেষ নি‘আমতের ভাণ্ডার নিয়ে প্রভাতে উপনীত হয় তা এককভাবে আপনারই পক্ষ থেকে। আপনি এক, আপনার কোনো অংশীদার নেই। সুতরাং সকল প্রকার প্রশংসা আপনারই, আপনার জন্যই সকল কৃতজ্ঞতা”[24]

 কার নিকট শাফা‘আতের দো‘আ করব?

যেহেতু আল্লাহ তা‘আলাই শাফা‘আতের একমাত্র মালিক। শাফা‘আতের চাবিকাঠি একমাত্র তাঁরই হাতে। এতে কারো বিন্দু পরিমাণও অংশ নেই এবং আখিরাতের আদালতে তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ শাফা‘আত করতে সক্ষম হবে না। সেহেতু আমরা শাফা‘আতের দো‘আ মহান আল্লাহর নিকটই করব। অপরদিকে দো‘আ হচ্ছে সালাত, সাওমের মতো একটি শ্রেষ্ঠ ইবাদত, বরং ইবাদতের মগজ।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«الدُّعَاءُ هُوَ الْعِباَدَةُ»

“দো‘আই হচ্ছে ইবাদত।”[25]

আর ইবাদত একমাত্র মহান রবের জন্য সুনির্দিষ্ট। ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক করার নাম শির্কে আকবর। দো‘আ যেহেতু ইবাদত, তাই দো‘আ একমাত্র আল্লাহর নিকটেই করতে হবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡ﴾ [غافر: ٦٠]

“তোমাদের রব বলেছেন, তোমরা আমার নিকট দো‘আ কর, আমি তোমাদের দো‘আ কবুল করব। [সূরা গাফির, আয়াত: ৬০]

তিনি আরও বলেছেন:

﴿ٱدۡعُواْ رَبَّكُمۡ تَضَرُّعٗا وَخُفۡيَةًۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُعۡتَدِينَ ٥٥﴾ [الاعراف: ٥٥]

“তোমরা তোমাদের রবের নিকট সংগোপনে ও বিনয়ের সাথে দো‘আ কর। নিশ্চয় তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৫]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِذَا سأَلْتَ فَاسْئَلِ اللَهَ وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللهِ»

“যখন তুমি কিছু চাইবে তখন আল্লাহর নিকট চাইবে। আর যখন সাহায্য চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে।”[26]

আমরা সূরা আল-ফাতিহায় বলি:

 ﴿إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ ٥﴾ [الفاتحة: ٥]

“আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং আপনার নিকটই সাহায্য চাই।” [সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত: ৫]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَنْ لَمْ يَسألِ اللهَ يَغْضَب عَلَيْهِ»

“যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে না, আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত হন।”[27]

এতএব, যখন আমরা দো‘আ করব, তখন কেবল আল্লাহর কাছেই করব। আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নিকট কখনও কোনো কিছুর জন্য দো‘আ করব না। তাই শাফা‘আতের দো‘আ আল্লাহর দরবারেই করব। কেননা ইসলামের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:

«مَنْ لَمْ يَدْعُ اللهَ يَغَضَبْ عليه».

“যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট দো‘আ করে না তার প্রতি আল্লাহর ক্রোধ রয়েছে”[28]

তিনি আরও বলেছেন:

«ادْعُوْا اللهَ وَاَنْتُمْ مُوْقِنُوْنَ بِالْاِجاَبَةِ»

“দো‘আ কবুলের বিশ্বাস নিয়ে তোমরা আল্লাহর নিকট দো‘আ করবে।”[29]

তাই প্রত্যেক মুসলিমের ভেবে দেখা উচিৎ যে, কার নিকট তার দো‘আ করা কর্তব্য। যারা গাইরুল্লাহর নিকট দো‘আ করছেন তারা কি কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট হ্যাঁ-বাচক উত্তর দিতে পারবেন?

 শাফা‘আতের দো‘আ কীভাবে করব?

শাফা‘আত প্রার্থনা একমাত্র আল্লাহর কাছেই করব এবং বলব:

اَللهُمَّ شَفِّعْ فِيَّ نَبِيّكَ

“হে আল্লাহ! আপনার নবীকে আমার জন্য সুপারিশকারী বানিয়ে দিন।”

অথবা বলব:

اَللهم ارْزُقْني شَفَاعَةَ نَبِيِّكَ

“হে আল্লাহ! আপনার নবীর শাফা‘আত আমাকে দান করুন।”

অথবা বলব:

يَارَبِّ اجْعَلْنِيْ مِمَّنْ تُشَفٍّعُ فِيْهِمْ نَبِيكَ

“হে আমার রব! আমাকে ঐ সকল লোকদের অন্তর্ভুক্ত করে দিন যাদের জন্য আপনি আপনার নবীর শাফা‘আত কবুল করবেন।”

অথবা বলব:

اَللهم لاَتَحْرِمْنِيْ شَفَاعَةَ نَبِيِّكَ

“হে আল্লাহ! আপনার নবীর শাফা‘আত থেকে আমাকে বঞ্চিত করবেন না।”[30]

কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন সাহাবীকে শাফা‘আত প্রার্থনা শিক্ষা দিয়ে বলেছেন, যে তুমি বল:

«اَللهم شَفِّعْهُ فِيَّ»

“হে আল্লাহ! আপনি তাকে আমার জন্য শাফা‘আতকারী বানিয়ে দিন”[31]

এবং মৃত শিশুর জানাযায় এ দো‘আ পাঠ করতে বলেছেন

«وَاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا وَّ مُشَفَّعًا»

“হে আল্লাহ! এ শিশুকে আমাদের জন্য শাফা‘আতকারী ও মঞ্জুরযোগ্য শাফা‘আতকারীতে পরিণত করুন”[32]

 গাইরুল্লাহর কাছে শাফা‘আতের দো‘আ করার হুকুম

গাইরুল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে শাফা‘আতের দো‘আ বা প্রার্থনা করা শির্ক। কারণ, দো‘আ ইবাদত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ»

“দো‘আই ইবাদত।”[33]

আর ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট। ইবাদতে তাঁর আর কোনো শরীক নেই। আর শির্ক হচ্ছে, গাইরুল্লাহকে ইবাদতে অংশীদার করার নাম। সুতরাং দো‘আ যেহেতু ইবাদত, সেহেতু একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই কাছে দো‘আ করতে হবে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে শাফা‘আত বা অন্য কোনো কিছুর দো‘আ করা শির্ক। কেননা দো‘আ ইবাদত। যে গাইরুল্লাহর নিকট দো‘আ করল সে তার ইবাদত করল। কিন্তু আমরা তো ইবাদত করি একমাত্র আল্লাহর।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, শাফা‘আত প্রার্থনা একমাত্র আল্লাহর নিকট করতে হবে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট শাফা‘আত প্রার্থনা করা শির্ক। কেননা একদিকে দো‘আ ইবাদত এবং অপরদিকে সমস্ত শাফা‘আত একমাত্র আল্লাহর ক্ষমতাধীন। এতে অন্য কারো বিন্দুমাত্র অংশ নেই। তাই গাইরুল্লাহর নিকট শাফা‘আত প্রার্থনা শিরকে আকবর। বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আহবান করে কবিতার মত করে জপ করে প্রার্থনা জানানো হয়, তা অবশ্যই মারাত্মক শির্কের অন্তর্ভুক্ত। কারণ,

প্রথমত:

‘শাফা‘আত করুন’ বাক্যটি রিযিক দান করুন, ক্ষমা করুন ইত্যদি দো‘আর বাক্যের মতো। আর দো‘আ ইবাদত, যা একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। রাসূলের কাছে দো‘আ করে শ্রেষ্ঠতম ইবাদতে আল্লাহর সাথে শরীক করা হয়েছে। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই আল্লাহর বান্দা, আল্লাহরই দরবারে প্রার্থী। সুতরাং এমনটি করা শির্ক।

দ্বিতীয়ত:

তারা রাসূলের কাছে এমন একটি দয়া ও করুণা প্রার্থনা করেছে যা এককভাবে আল্লাহর এখতিয়ারে, তাঁরই ক্ষমতা ও ইচ্ছাধীন। আর যা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ক্ষমতাধীন, এমন কিছুর প্রার্থনা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে করা শির্ক। বস্তুত শাফা‘আত একমাত্র আল্লাহর ক্ষমতাধীন, একক এখতিয়ারে। সুতরাং রাসূলের কাছে শাফা‘আত প্রার্থনা করা শির্ক। কেননা এ ব্যাপারে তাঁর নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া তিনিও করো জন্য শাফা‘আত করতে সক্ষম হবেন না। আল্লাহ তা‘আলা এক মুমিন বান্দার তাওহীদ দীপ্ত উক্তি কুরআনে বর্ণনা করেছেন।

﴿ءَأَتَّخِذُ مِن دُونِهِۦٓ ءَالِهَةً إِن يُرِدۡنِ ٱلرَّحۡمَٰنُ بِضُرّٖ لَّا تُغۡنِ عَنِّي شَفَٰعَتُهُمۡ شَيۡ‍ٔٗا وَلَا يُنقِذُونِ ٢٣﴾ [يس: ٢٣]

যদি মহান দয়াময় আল্লাহ আমার কোনো ক্ষতি সাধন করতে চান তবে তাদের শাফা‘আত-সুপারিশ আমার কোনো কাজে আসবে না, আমাকে তারা বাঁচাতেও পারবে না”। [সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ২৩]

শির্কের প্রতিবাদ করে আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,

 ﴿أَمِ ٱتَّخَذُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ شُفَعَآءَ﴾ [الزمر: ٤٣]

“তবে কি তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে শাফা‘আতকারী গ্রহণ করেছে।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৪৩]

তৃতীয়ত:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহর মতো দূর থেকে ডাকাডাকি করা, তাঁর নিকট শাফা‘আতের দো‘আ করা প্রকাশ্য শির্ক। কারণ, কোনো গাইরুল্লাহকে এরূপে ডাকাডাকি করাকে আকাঈদ শাস্ত্রবিদগণ شِرْكُ الدَّعْوَةِ বা আহ্বানের শির্ক বলে ঘোষণা করেছেন। অন্যথায় তাওহীদ শির্কের মাঝে কোনো পার্থক্য থাকে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা খোদ নবীজীকে শিখিয়ে দিয়েছেন:

﴿قُلۡ إِنَّمَآ أَدۡعُواْ رَبِّي وَلَآ أُشۡرِكُ بِهِۦٓ أَحَدٗا ٢٠﴾ [الجن: ٢٠]

“বল, আমি একমাত্র আমার রবকে ডাকি এবং তার সাথে কাউকেই শরীক করি না।” [সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ২০]

আল্লাহ তালা আরও শিখিয়েছেন:

﴿وَلَا تَدۡعُ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَۖ فَإِن فَعَلۡتَ فَإِنَّكَ إِذٗا مِّنَ ٱلظَّٰلِمِينَ ١٠٦﴾ [يونس: ١٠٦]

“তুমি আল্লাহ ছাড়া এমন কাউকে ডেকো না, যে না তোমার কোনো উপকার করতে পারে, আর না কোনো ক্ষতি করতে পারে। যদি তা কর তবে নিশ্চয় তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ১০৬]

অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কিছু লোক এর চেয়েও জগন্য শির্কে লিপ্ত রয়েছে। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আহ্বান করে বলে:

يَارَسُوْلَ الْكِبْرِيَاءِ احْفَظْ عَنْ كُلِّ الْبَلاَءِ: اِسْتَجِبْ هَذَا الدُّعَاءَ يَا مُحَمَّدْ عَرَبِيْ

“হে রাসূলে কিবরিয়া সর্বপ্রকার বালা মুসীবত থেকে রক্ষা করুন, হে মুহাম্মাদে আরবী! এই দো‘আ কবুল করুন।!” (নাউযুবিল্লাহ)

এই যে মারাত্বক শির্ক ও জঘন্য কুফুরী কথা, তা কোনো ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। একজন সাধারণ লেখা-পড়া জানা ব্যক্তিও বুঝে যে দো‘আ একমাত্র আল্লাহরই কাছে করতে হয়, কোনো সৃষ্টির কাছে নয়। কেননা সকল নবী-রাসূলই আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেছেন এবং তারা নিজেরাই সব চেয়ে কঠিন বালা মুসীবতের শিকার হয়েছিলেন। অন্যদেরকে এ থেকে রক্ষা করার প্রশ্নই উঠে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই বলেছেন:

«أشَدُّ النَّاسِ بَلاَءً اَلْأَنْبِيَاءُ ثُمَّ الصَّالِحُوْنَ . وَفي رواية: ثُمَّ الْأَمْثَلُ فَالْأَمْثَلُ»

“সর্বাপেক্ষা বেশি বালা-মুসীবতের শিকার হয়েছেন নবী-রাসূলগণ, অতঃপর নেককার বান্দাগণ”

আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আহ্বান করছি বালা-মুসীবত থেকে রক্ষা করার জন্য। আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে বলেছেন:

﴿قُل لَّآ أَمۡلِكُ لِنَفۡسِي ضَرّٗا وَلَا نَفۡعًا إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُ﴾ [يونس: ٤٩]

“হে নবী বলে দাও, আল্লাহ যা চান তা ছাড়া আমি আমার নিজের জন্যও ক্ষতি বা উপকার করার ক্ষমতা রাখি না”[সূরা ইউনুস, আয়াত: ৪৯]

তিনি আরও বলেছেন:

 ﴿قُلۡ إِنِّي لَآ أَمۡلِكُ لَكُمۡ ضَرّٗا وَلَا رَشَدٗا ٢١﴾ [الجن: ٢١]

“বল! আমি তোমাদের কোনো ক্ষতি করা বা সৎপথে আনার ক্ষমতা রাখি না”[সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ২১]

তিনি আরও বলেছেন:

﴿وَإِن يَمۡسَسۡكَ ٱللَّهُ بِضُرّٖ فَلَا كَاشِفَ لَهُۥٓ إِلَّا هُوَ﴾ [الانعام: ١٧]

“আল্লাহ যদি তোমাকে কোনো দুঃখ-কষ্ট দেন তবে তিনি ছাড়া তা অপসারণকারী আর কেউ নেই।” [সূরা আল-আন‘আম: ১৭]

এ জন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় আদরের কন্যা কলিজার টুকরা ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলেছেন:

«يَا فَاطِمة بِنْت مُحَمَّدِِ سَلِيْنِي مِنْ مَالِي مَاشِئْتِ , لَا أغْنِيْ عَنْكِ مِنَ اللهِ شَيْئاً»

“হে মুহাম্মাদের কন্যা ফাতিমা, আমার সম্পদ থেকে যা খুশি চেয়ে নাও। কিন্তু আল্লাহর কাছে (জবাবদিহি করার ব্যাপারে) তোমার কোনো উপকার করার ক্ষমতা আমার নেই”[34]

এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নিজ মেয়েকে মুহাম্মাদের মেয়ে বলে সম্বোধন করাটা সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এতে বুঝানো হয়েছে যে, আল্লাহর কাছে কারো গ্রহণ যোগ্যতা তার পিতৃ বা বংশ পরিচয়ের নিক্তিতে হবে না, হবে নিজ নিজ ঈমান, আমলের মূল্য ও মানের ভিত্তিতে।

যেখানে তিনি নিজের মেয়েকে রক্ষা করতে পারবেন না সেখানে অমুক-তমুককে কীভাবে রক্ষা করবেন? তাই আকাঈদ শাস্ত্রবিদগণ বলেছেন:

«فَإِذَا كَانَ سَيِّدُ الْخَلْقِ وَ أَفْضَلُ الْشُفَعَاءِ يَقُوْلُ لأخَصِّ النَّاسِ بِهِ: لاَ أَمْلِكُ لَكُمْ مِنَ اللهِ شَيْئاً فَماَ الظَّن بِغَيْرِه»

“যদি সৃষ্টির সেরা ও সর্বোত্তম সুপারিশকারী তাঁর একান্ত বিশেষ ব্যক্তিদের বলেন,

«لَااَمْلِكُ لَكُمْ مِنَ اللهِ شَيْئاً»

“আল্লাহর সামনে আমি তোমাদের কোনো উপকার করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখি না” তাহলে অন্যদের বেলায় কি ধারণা?”[35]

নবীজীর শাফা‘আত এক প্রকার দো‘আ। তিনিও শাফা‘আতের প্রার্থনা জানাবেন একমাত্র আল্লাহর দরবারে। যেমন তিনি বলেছেন:

«لِكُلِّ نَبيٍ دَعْوَةٌ مُسْتَجَابَةٌ وَإِنِّي إخْتَبَأتُ دَعْوَتِى شَفَاعَةً لِاُمَّتي يَوْمَ الْقِيَامَةِ»

“প্রত্যেক নবীর জন্য এমন একটি দো‘আ রয়েছে যা আল্লাহর কাছে মকবুল। আর আমি নিজ দো‘আটি কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের শাফা‘আতের জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছি”।”[36]

সুতরাং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে দো‘আ করা যাবে না।

 শাফা‘আত সম্পর্কে প্রাজ্ঞ মুফাসসিরগনের অভিমত

ইমাম বায়যাভী তার তাফসীরে বায়যাভীতে লিখেন:

والمعنى أنه مالك الشفاعة كلها لايستطيع أحد شفاعة إلا بإذنه ولا يستقل بها وقوله ﴿أَنَّ ٱللَّهَ لَهُۥ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ﴾ [البقرة: ١٠٧] تقرير لبطلان اتخاذ الشفاعة من دونه بأنه مالك الملك كله لا يملك أحد أن يتكلم في أمره دون إذنه ورضاه. فاندرج في ذلك ملك الشفاعة فإذا كان هو مالكها بطل اتخاذ الشفعاء من دونه كائن من كان

“আয়াতের অর্থ হলো: তিনিই (আল্লাহ) সমস্ত শাফা‘আতের একমত্র মালিক। তাঁর অনুমতি ব্যতীত অন্য কেউ শাফা‘আত করার ক্ষমতা রাখে না এবং (তিনি ব্যতীত অন্য কেউ) শাফা‘আতের ব্যাপারে স্বয়ংসম্পূর্ণ নন। ‘আসমান-যমীনের রাজত্ব একমাত্র তাঁরই’ আল্লাহর এ বাণী গাইরুল্লাহকে শাফা‘আতকারী হিসেবে গ্রহণ করাকে বাতিল সাব্যস্ত করেছে। এজন্য যে, তিনিই সমস্ত রাজত্বের একমাত্র মালিক, তাঁর অনুমতি এবং সন্তুষ্টি ব্যতীত কেউ তাঁর কোনো বিষয়ে কথা বলার অধিকার রাখে না। সুতরাং এতে (তাঁর সর্বময় কর্তৃত্বের ভিতরে) শাফা‘আতের মালিকানা অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। অতএব যখন তিনিই শাফা‘আতের একমাত্র মালিক তখন তিনি ছাড়া অন্য কাউকে শাফা‘আতকারী হিসাবে গ্রহণ করা বাতিল হয়ে গেল, তিনি যে-ই হোক না কেন?[37]

ইমাম আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবনে জারীর আত-তাবারী তার বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থে লিখেন:

)قُل لِّلَّهِ ٱلشَّفَٰعَةُ جَمِيعٗا( قل لهم أفردوا الله بألوهية فإن الشفاعة لله وحده لا يشفع عنده إلا من أذن له ورضي قوله.

“তুমি তাদেরকে বলে দাও, তোমরা এককভাবে আল্লাহর ইবাতদ কর। কেননা সমস্ত শাফা‘আত একমাত্র আল্লাহরই জন্য। যাকে তিনি অনুমতি দিবেন এবং যার কথায় তিনি সন্তুষ্ট হবেন সে ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ তার নিকট শাফা‘আত করতে পারবে না।”[38]

ইমাম আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবন আহমদ আল-কুরতুবী তাঁর বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ الجامع لأحكام القرآن -এ লিখেন,

 قُل لِّلَّهِ ٱلشَّفَٰعَةُ جَمِيعٗا نص في أن الشفاعة لله وحده كما قال ﴿مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِ﴾ [البقرة: ٢٥٥] فلا شافع إلا من شفاعته ﴿وَلَا يَشۡفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ٱرۡتَضَىٰ﴾ [الانبياء: ٢٨]

(বলে দাও, সব শাফা‘আত একমাত্র আল্লাহর জন্যই) এ আয়াতটি এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট দলীল যে, শাফা‘আত একমাত্র আল্লাহরই এখতিয়ারে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন (কে আছে এমন, যে আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট শাফা‘আত করতে পারবে?) অতএব, তাঁর পক্ষ থেকে শাফা‘আতের অনুমতি ব্যতীত কেউ শাফা‘আতকারী হতে পারবে না। (শাফা‘আতের অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ শুধু তাদের জন্য সুপারিশ করবে যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আায়াত: ২৮]

শাইখ আবু বকর জাবির আল-জাযাইরী তার বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থে লিখেন-

)قُل لِّلَّهِ ٱلشَّفَٰعَةُ جَمِيعٗا) أي أخبرهم أن جميع الشفاعات لله وحده فشفاعة الأنبياء والشهداء والعلماء والأطفال مملوكة لله فلايشفع أحد إلا بإذنه- (ثم أمر تعالى رسوله أن يعلن عن الحقيقة وإن كانت عند المشركين مرّا )قُل لِّلَّهِ ٱلشَّفَٰعَةُ جَمِيعٗا) أي جميع أنواع الشفاعات هي ملك لله مختصة به فلا يشفع أحد إلا بإذنه إذا فاطلبوا من مالكها الذي له ملك السموات والأرض لاممن هو مملوك له.

(বলে দাও, সব শাফা‘আত একমাত্র আল্লাহর জন্য।) অর্থাৎ তুমি তাদেরকে জানিয়ে দাও, সমস্ত শাফা‘আত একমাত্র আল্লাহরই অধিকারে। সুতরাং নবী, শহীদ, ওলামাগণের এবং নাবালক বাচ্চাদের শাফা‘আত আল্লাহরই মালিকানাভুক্ত। অতএব তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ শাফা‘আত করতে পারবে না।

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শাফা‘আতের হাক্বীকত সম্পর্কে পরিষ্কার ঘোষণা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন, যদিও তা অংশীবাদীদের নিকট তিক্ত হয়।

(বলে দাও, সব শাফা‘আত একমাত্র আল্লাহরই অধিকারে।) অর্থাৎ সর্ব প্রকার শাফা‘আত আল্লাহরই মালিকানাধীন। তাঁর জন্য সুনির্দিষ্ট। সুতরাং তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ শাফা‘আত করতে পারবে না। কাজেই তোমরা শাফা‘আত প্রার্থনা কর শাফা‘আতের মালিকের কাছেই, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর মালিক। তার নিকট প্রার্থনা করো না, যে নিজেই আল্লাহর মামলুক বা মালিকাধীন।”[39]

শায়খ আব্দুর রহমান ইবনে নাসির আসসা’দী, তাঁর বিশ্বখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ-

 تيسير الكريم الرحمن فى تفسير كلام المنان -এ লিখেন:

)قل) لهم: (قُل لِّلَّهِ ٱلشَّفَٰعَةُ جَمِيعٗا) لأن الأمر كله لله وكل شفيع فهو يخافه ولا يقدر أن يشفع عنده أحد إلا بإذنه فإذا أراد رحمة عبده أذن للشفيع الكريم عنده أن يشفع رحمة بالاثنين ثم قرر أن الشفاعة كلها له بقوله: ﴿لَهُۥ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ﴾ [البقرة: ١٠٧] أي جميع ما فيها من الذوات والأفعال والصفات فالواجب أن تطلب الشفاعة ممن يملكها وتخلص له العبادة .

“তুমি তাদেরকে বলে দাও, ‘সমস্ত শাফা‘আত একমাত্র আল্লাহরই এখতিয়ারে’। কেননা সর্বপ্রকার কর্তৃত্ব আল্লাহরই এবং প্রত্যেক শাফা‘আতকারীই তাঁকে ভয় করে, এবং তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ শাফা‘আত করার ক্ষমতা রাখে না। অতএব, যখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দার প্রতি দয়ার ইচ্ছা করেন তখন তিনি শাফা‘আতকারী ব্যক্তিকে তাঁর দরবারে শাফা‘আত করার জন্য অনুমতি প্রদান করেন। উভয়ের (শাফা‘আতকারী ও যার জন্য শাফা‘আত করা হবে) প্রতি দয়াদ্র হয়ে। অতঃপর তিনি তাঁর জন্যই সমস্ত শাফা‘আত সাব্যস্ত করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, (আসমান-যমীনের মালিকানা একমাত্র তাঁর)... অতঃএব, অবশ্য করণীয় হচ্ছে, শাফা‘আতের মালিকের নিকট শাফা‘আত প্রার্থনা করা এবং ইবাদতকে শুধুমাত্র তাঁর জন্য খালেস করা।”[40]

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এই হচ্ছে শাফা‘আত সংশ্লিষ্ট কুরআনের তাফসীর। আপনারা এ থেকে নিশ্চয়ই ধারণা পেয়েছেন যে, সমস্ত শাফা‘আতের একচ্ছত্র মালিক হচ্ছেন আল্লাহ তা‘আলা। সর্বপ্রকারের শাফা‘আত তাঁরই অধিকারে। তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ শাফা‘আত করতে পারবে না। তাই ঈমানের অনিবার্য দাবী হলো শাফা‘আতের মালিকের নিকট শাফা‘আত প্রার্থনা করা। কেননা বান্দার সকল চাওয়া-পাওয়া তাঁর মালিক ও মা‘বুদ আল্লাহর কাছেই হওয়া চাই। অন্য কোনো বান্দার কাছে নয়। মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ হলেও নবীজীও আল্লাহর একজন বান্দা মাত্র। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য নিম্নোক্ত কুরআনের তাফসীর গ্রন্থসমূহ দেখতে পারেন:

নং

তাফসীর গ্রন্থ

গ্রন্থকার

পৃষ্ঠা-খণ্ড

তাফসীরে ফতহুল কাদীর

ইমাম শাওকানী

খ. ৪, পৃ. ৪৬৭

তাফসীরুল কুরআনিল আজীম

ইবনু কাসীর

খ. ১, পৃ. ৩৩১, খ. ৩ পৃ. ৫৮৯

তাফসীরে জালালাইন

সয়ূতী-মহল্লী

পৃ. ৩৮৮, ৪৮১

তাফসীরে রুহুল মায়ানী

আলূসী বগদাদী

২৪শ পারা পৃ. ৯-১১

সাফওয়াতুত তাফাসীর

মুহাম্মদআলী সাবূনী

খ. ২, পৃ. ১৫৪

তাফসীর ফী জিলালিল কুরআন

সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ

খ. ৫, পৃ. ৩০৫৫

তাফসীরে কাশশাফ

ইমাম যমখশরী

খ. ৩, পৃ. ৪০০

মুখতাসারু তাফসীরিত তাবারী

সাবূনী

খ. ১, পৃ. ৩৪৬

তাফসীরে হক্কানী

আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী

খ. ৬, পৃ. ১২০-২১-৮৯

১০

ফাতহুল বায়ান

আবু তৈয়্যেব বুখারী

খ. ১২, পৃ. ১২৩

১১

বাহরুল মুহীত

আবু হায়্যান আন্দুলুসী

খ. ৭, পৃ. ৪৩১

১২

তাফসীরে কবীর

ইমাম রাযী

খ. ২৪/২৫, পৃ. ২৮৫

বইয়ের কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় তাফসীর সংক্রান্ত আলোচনা এতটুকুতেই সীমিত রাখালাম।

 শাফা‘আত সম্বন্ধে আকাঈদ শাস্ত্রবিদদের মতামত

ইমাম ইবনু আবিল ইজ্জ আল হানাফী شرح العقيدة الطحاوية -গ্রন্থে লিখছেন:

فالحاصل: أن الشفاعة عند الله ليست كالشفاعة عند البشر فإن الشفيع عند البشر كما أنه شافع للطالب شفعه فى الطلب بمعنى أنه صار شفعا فيه بعد أن كان وترا فهو أيضا قد شفع المشفع المشفوع إليه وبشفاعته صار فاعلا للمطلوب فقد شفع الطالب والمطلوب منه والله تعالى وتر لايشفعه أحد فلايشفع عنده أحد إلا بإذنه فالأمر كله إليه فلاشريك له بوجه , فسيد الشفعاء يوم القيامة إذا سجد وحمد الله فقال له الله: (ارْفَعْ رَأسَكَ وَقُلْ تُسْمَعُ وَسَلْ تُعْطَ وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ) فيحد له حدا فيدخلهم الجنة فالأمر كله لله كما قال: ﴿قُلۡ إِنَّ ٱلۡأَمۡرَ كُلَّهُۥ لِلَّهِ﴾ [ال عمران: ١٥٤] وقال تعالى ﴿لَيۡسَ لَكَ مِنَ ٱلۡأَمۡرِ شَيۡءٌ﴾ [ال عمران: ١٢٨] وقال تعالى: ﴿أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُ﴾ [الاعراف: ٥٤]

মোদ্দাকথা: আল্লাহর কাছে সুপারিশ করার বিষয়টি মানুষের কাছে সুপারিশ করার মত নয়। কেননা মানুষের কাছে যে ব্যক্তি সুপারিশ করে প্রার্থনার ক্ষেত্রে সে যেমন সুপারিশ প্রার্থীর জন্য সুপারিশ করে তার শরীক ও সহযোগী হয়ে যায় তেমনিভাবে সুপারিশ প্রার্থী ব্যক্তি একাও বেজোড় থাকার পর সে প্রার্থনার ক্ষেত্রে সুপারিশকারীর সহযোগী বা জোড় হয়ে যায়। সুপারিশকারী এবং তার নিকট সুপারিশ প্রার্থনাকারী ব্যক্তি উভয়ে শাফা‘আতের মাধ্যমে উদ্দেশ্য অর্জন করে। অর্থাৎ সুপারিশ প্রার্থী এবং সে যাকে সুপারিশকারী ধরেছে উভয় মিলে প্রার্থনা করে বা সুপারিশ করে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বেজোড় যার সহযোগী বা জোড় হওয়ার মত কেউ নেই। কাজেই তাঁর নিকট তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ সুপারিশ করতে পারবে না। বরং শাফা‘আতের যাবতীয় ব্যাপার তাঁরই দিকে সমর্পিত। এবং কোনো দিক থেকেই কেউ তাঁর শরীক নয়। তিনি সম্পূর্ণ লা-শরীক। এ কারণেই শাফা‘আতকারীদের সরদার-মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও কিয়ামতের দিন যখন সাজদায় লুটিয়ে পড়বেন এবং মহান আল্লাহর প্রশংসা করবেন তখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে বলবেন: “হে মুহাম্মাদ! তুমি মাথা উঠাও এবং বল, শ্রবণ করা হবে, তুমি যাঞ্চা কর দেওয়া হবে, তুমি সুপারিশ কর তোমার সুপারিশ কবুল করা হবে”। অতঃপর তাঁকে একটি সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে এবং এ সীমা অনুযায়ী তিনি লোকদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (সে দিনের) যাবতীয় কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর । যেমন, তিনি বলেন,

﴿قُلۡ إِنَّ ٱلۡأَمۡرَ كُلَّهُۥ لِلَّهِ﴾ [ال عمران: ١٥٤]

“বল! সমস্ত কর্তৃত্ব আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট”[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৫৪]

তিনি অন্যত্র বলেন,

﴿لَيۡسَ لَكَ مِنَ ٱلۡأَمۡرِ شَيۡءٌ﴾ [ال عمران: ١٢٨]

“হে নবী তোমার কোনো কর্তৃত্ব নেই”[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১২৮]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُ﴾ [الاعراف: ٥٤]

“জেনে রাখ, সৃষ্টিও আদেশ একমাত্র তাঁরই”[সূরা আল-আ‘রাফ, আায়াত: ৫৪][41]

 শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন,

 وأخبر أن الشفاعة كلها له أنه لايشفع عنده أحد إلا لمن أذن الله أن يشفع له فيه ورضي له قوله وعمله وهم أهل التوحيد الذين لم يتخذوا من دون الله شفعاء من دونه فيكون أسعد الناس بشفاعته من يأذن الله تعالى صاحب التوحيد الذي لم يتخذ شفيعا من دون الله والشفاعة التي اثبتها الله تعالى ورسوله صلى الله عليه وسلم هي الشفاعة الصادرة عن إذنه لمن وحده والتي نفاها الله تعالى هي الشفاعة الشركية التي في قلوب المشركين المتخذين من دون الله شفعاء فيعاملون بنقيض مقصودهم من شفاعتهم ويفوز بها الموحدون

“আল্লাহ তা‘আলা জানিয়ে দিয়েছেন যে, সমস্ত শাফা‘আত তাঁরই এখতিয়ারভুক্ত। যাদের তিনি অনুমতি দান করবেন এবং যার কথা ও কাজে তিনি সন্তুষ্ট, সে ব্যতীত আর কেউ তাঁর নিকট শাফা‘আত করতে পারবে না। তারা হচ্ছেন নির্ভেজাল-একনিষ্ঠ তাওহীদবাদী, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সুপারিশকারী হিসেবে গ্রহণ করে নি। আর তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তাকে সুপারিশ করার অনুমতি দিবেন। আর তারা যেহেতু তাকে ছাড়া অন্য কাউকে সুপারিশকারী হিসেবে গ্রহণ করে নি, সেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফা‘আত দ্বারা সর্বাপেক্ষা ভাগ্যবান ঐ ব্যক্তি হবে যার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা অনুমতি দান করবেন। আর সে হচ্ছে একনিষ্ঠ তাওহীদবাদী যে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে সুপারিশকারী হিসাবে গ্রহণ করে নি। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে শাফা‘আতের স্বীকৃতি দান করেছেন, তা হচ্ছে ঐ শাফা‘আত যা তাঁর অনুমতিক্রমে একনিষ্ঠ তাওহীদবাদীর জন্য প্রকাশ পাবে এবং আল্লাহ তা‘আলা যে শাফা‘আতের অস্বীকার করেছেন, তা হচ্ছে শির্কী শাফা‘আত যা ঐ সমস্ত শির্কবাদীদের অন্তরে বদ্ধমূল রয়েছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে সুপারিশকারী হিসাবে গ্রহণ করেছে। অতএব, শির্কবাদীদের ব্যাপারে তাদের শির্কী শাফা‘আতের কারণে তাদের উদ্দশ্যের বিপরীত আচরণ করা হবে এবং একনিষ্ঠ তাওহীদবাদীরা স্বীকৃত শাফা‘আতের দ্বারা সফলকাম হবেন।”[42]

শাইখ মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহ্‌হাব كشف الشبهات কিতাবে লিখেন:

فإذا كانت الشفاعة كلها لله ولا تكون إلا بعد إذنه ولايشفع النبي صلى الله عليه وسلم و لاغيره في أحد حتى يأذن الله فيه ولا يأذن إلا لأهل التوحيد تبين لك أن الشفاعة كلها لله واطلبها منه واقول: اللهم لا تحرمنى شفاعته ، اللهم شفعه فيّ، وأمثال هذا...

“বস্তুতপক্ষে যখন সমস্ত শাফা‘আত একমাত্র আল্লাহরই জন্য সংরক্ষিত এবং তা আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষ। আর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা অন্য কেউ আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কারো জন্য শাফা‘আত করতে সক্ষম হবেন না। আল্লাহর অনুমতি একমাত্র একনিষ্ঠ তাওহীদবাদীদের জন্যই নির্দিষ্ট। এখন তোমার কাছে এ কথা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, সকল প্রকার শাফা‘আতের মালিক হচ্ছেন আল্লাহ। সুতরাং আমি তাঁরই নিকট শাফা‘আত প্রার্থনা করি এবং বলি: “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফা‘আত থেকে বঞ্চিত করো না। হে আল্লাহ! তুমি তাঁকে আমার জন্য শাফা‘আতকারী বানিয়ে দাও। অনুরূপ অন্যান্য দো‘আও আল্লাহর নিকট করতে হবে।”[43]

শাইখ সালেহ ইবন ফাওযান বলেন,

والشفاعة حق ولكنها ملك لله وحده كما قال تعالى ﴿قُل لِّلَّهِ ٱلشَّفَٰعَةُ جَمِيعٗا﴾ فهي تطلب من الله لا من الأموات لأن الله لم يرخص فى طلب الشفاعة من الملائكة ولا من الأنبياء ولا غيرهم لأنها ملكه سبحانه وتطلب منه ليأذن للشافع أن يشفع

“শাফা‘আত অবশ্যই সত্য। কিন্তু এর মালিকানা একমাত্র আল্লাহরই। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, (বলে দাও, সমস্ত শাফা‘আত আল্লাহর।) এতএব, শাফা‘আত প্রার্থনা আল্লাহরই নিকট করতে হবে মৃতদের নিকট নয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা ফিরিশতাগণ, নবীগণ এবং অন্যানের নিকট শাফা‘আত প্রার্থনা করার অনুমতি দেন নি। এজন্য যে, তিনিই শাফা‘আতের একচ্ছত্র মালিক এবং তার নিকট শাফা‘আত প্রার্থনা করবে যেন, তিনি সুপারিশকারীকে তার জন্য শাফা‘আত করার অনুমতি প্রদান করেন।”[44]

আল্লামা আবু বকর জাবের আল জাযায়েরী তাঁর সুবিখ্যাত عقيدة المؤمن গ্রন্থে শাফা‘আতের প্রার্থনা প্রসঙ্গে বলেছেন:

فلا يطلب الشفاعة من أحد ولا يسألها من غير الله عز وجل إذ الشفاعات كلها لله تعالى وليس لأحد سواه منها شيء قال تعالى: ( قُل لِّلَّهِ ٱلشَّفَٰعَةُ جَمِيعٗا) وقال تعالى ﴿مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِ﴾ [البقرة: ٢٥٥] ومن أراد شفاعة النبي صلى الله عليه وسلم فليسألها من الله تعالى وليقل اللهم شفع فيّ نبيك أو اللهم ارزقني شفاعة نبيك أو يارب اجعلني ممن تشفع فيهم نبيك ...

সুতরাং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে শাফা‘আত চাওয়া কিংবা প্রত্যাশা করা যাবে না। কেননা শাফা‘আতের একচ্ছত্র অধিকার একমাত্র আল্লাহরই এবং তিনি ব্যতীত অন্য কারো এতে বিন্দুমাত্র অধিকার নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “বল, হে রাসূল! শাফা‘আত সম্পূর্ণটাই আল্লাহর হাতে”। তিনি আরও বলেন, “কে আছে, আল্লাহর কাছে তার অনুমতি ব্যতীত শাফা‘আত চাইবে”? যে ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফা‘আত প্রত্যাশা করে সে যেন আল্লাহরই কাছে চায় এবং বলে, হে আল্লাহ! আমার জন্য তোমার নবীকে শাফা‘আতকারী করে দিন” অথবা বল, হে আল্লাহ! আমার জন্য তোমার নবীর শাফা‘আত নসীব করুন” অথবা বল, হে আমার রব! আমাকে ঐ সকল লোকদের অন্তর্ভুক্ত করে দিন যাদের জন্য আপনি আপনার নবীকে শাফা‘আতকারী বানাবেন।”[45]

 একটি বিশেষ আবেদন

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে জানিয়েছেন যে, “আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। তারপর দুনিয়াবাসীকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেন:

«مَنْ يَدْعُوْني فَاسْتَجِيْب لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِي فَأعْطِيْهِ مَنْ يَسْتَغْفِرْنِي فَأغْفِر لَهُ»

“কে আছে আমাকে ডাকবে, তার ডাকে আমি সাড়া দিব, কে আছে আমার কাছে প্রার্থনা করবে আমি তাকে দান করব, আর কে আছে আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দিব”[46]

আমরা সবাই জানি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলার ব্যাপারে যে সংবাদ দান করেছেন তা হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিবেশিত খবর । আর তিনি হচ্ছেন এমন এক মহান ব্যক্তি যিনি ‘আপন রব ও মা‘বুদ’ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী, সবচেয়ে উত্তম নসীহতকারী, সবচেয়ে বেশি সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত। আর তিনি নিজেই তাঁর উম্মতকে জানিয়েছেন যে, আল্লাহ তা‘আলা রাতের তিন ভাগের একভাগ সময় বাকী থাকতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করে তাঁরই নিকট প্রার্থনা করতে বলেন এবং এ সময়ের প্রার্থনা কবুল করবেন বলে ওয়াদা করেছেন।

এহেন অবস্থায় কী করে একজন মুসলিম নিজেকে রাসূলের উম্মত বলে পরিচয় দেয় আবার শেষ রাতে গাইরুল্লাহকে আহ্বান করে! এটি কি রাসূলের শিক্ষা নিয়ে উপহাসের শামিল নয়? আর কেমন করেই বা তারা শেষ রাত্রে অর্থাৎ ফজরের আযানের পূর্বে এবং রমযান মাসে সাহরীর সময় নিয়মিত বলে: মুহাম্মাদ ইয়া রাসূলাল্লাহ! শাফা‘আত কি-জিয়ে লিল্লাহ!

“হে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহর ওয়াস্তে শাফা‘আত করুন!”

তারা দূর দূরান্ত থেকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ডেকে তাঁরই নিকট শাফা‘আত প্রার্থনা করলেন। তারা ভুলে গেলেন যে, শেষ রাতে আল্লাহকে ডেকে একমাত্র আল্লাহরই কাছে প্রার্থনা করার জন্য স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে আদেশ করেছেন।

সকলের প্রতি সম্মান রেখে অনুরোধ জানাচ্ছি যে, আপনারা অন্যান্য প্রার্থনার মত শাফা‘আতের প্রার্থনাও কেবল আল্লাহর কাছেই জানান। কেননা তিনি দো‘আ কবুলের ওয়াদা দিয়েছেন এবং নিশ্চয় তিনি ওয়াদা ভঙ্গ করেন না।

﴿وَيَسۡتَجِيبُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ وَيَزِيدُهُم مِّن فَضۡلِهِ﴾ [الشورا: ٢٦]

“তিনি ঈমানদার সৎ কর্মীদের দো‘আ কবুল করেন এবং তাদের প্রতি স্বীয় অনুগ্রহ বাড়িয়ে দেন।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ২৬]

তাই আমরা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে বলি:

রোজ হাশরের মালিক ওগো তুমি মেহেরবান,

মুহাম্মাদের শাফা‘আত করো মোদের দান।

এমন বললে শির্ক মুক্ত থাকা যায়, তাওহীদ রক্ষা পায় এবং শাফা‘আতের প্রার্থনাও সঠিক জায়গায় করা হয়। আল্লাহই একমাত্র তাওফীকদাতা, তিনি সকলের আশ্রয়, তিনি করুণা ও অনুগ্রহের একক আকর তাঁরই সমীপে আকুতি ও প্রার্থনা জানাই- হে আল্লাহ! তোমার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফা‘আত থেকে আমাদের বঞ্চিত করো না। বঞ্চিত করো না তোমার করুণা থেকে।

سبحان ربك رب العزة عما يصفون وسلام على المرسلين والحمد لله رب العلمين.

সমাপ্ত



[1] শরহু আকীদাতিত তাহাবিয়া, পৃ. ২২৬।

[2] বর্ণনায় তিরমিযী, হাকিম, মিশকাত ও সহীহুল আযকার, পৃ. ৫০।

[3] আল-ইরশাদ ইলা সহীহিল ই‘তিক্বাদ: ২৬৭।

[4] আল-কাওয়াশিফুল জালিয়্যাহ: ৪র্থ সংস্করণ, পৃ. ৪৯০।

[5] দেখুন: মাজমু‘আতুত তাওহীদ পৃ. ২৭৮; কাওয়াশিফুল জালিয়্যাহ পৃ. ৪৯০, ৪র্থ সংস্করণ ও আকাইদের কিতাবসমূহ।

[6] মুজমুআতুত তাওহীদ, পৃ. ২৭৮।

[7] দেখুন: শরহুল আকীদাতিল ওয়াসিতিয়্যা, পৃ. ১৫৭-১৫৮; শরহুল আক্বীদাতিত তাহাবিয়া পৃ. ২২৭-২২৮; আল-কাওয়াশিফুল জালিয়্যাহ, পৃ. ৪৯১, ৪র্থ সংস্কারণ।

[8] সহীহ বুখারী।

[9] শরহু আকীদাতুত তাহাভী পৃ. ১৩৫।

[10] ফাতহুল মাজীদ: ১৭৮।

[11] সহীহ বুখারী ও মুসলিম।

[12] বর্ণনায় আবু দাউদ।

[13] বর্ণনায় সহীহ মুসলিম।

[14] শরহুল আক্বিদাতিল ওয়াসিতিয়্যাহ, পৃ. ১৫৯; কাওয়াশিফুল জালিয়্যাহ, পৃ. ৪৯০।

[15] শরহু আক্বীদাতিত্ তাহাভীয়া পৃ. ২২৬।

[16] রূহুল মা‘আনী, ২৪শ পারা, পৃ. ৯-১১।

[17] শরহু আকাঈদ আন্নাসাফী।

[18] সহীহ বুখারী ও মুসলিম।

[19] সহীহ বুখারী ও মুসলিম। সূত্র আকীদাতুল মুমিন: ১২৭।

[20] شرح العقيدة الطحاوية كذا في مختصر الأسئلة والأجوبة )الأصولية على العقيدة الواسطية /119(

[21] বর্ণনায়: সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম ও আহমদ।

[22] সহীহ মুসলিম, শরহু আকীদাতুত্ তাহাবিয়া: ২৩০।

[23] বর্ণনায় সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম; আহমদ খ. ৬, পৃ. ১২৫; শরহু আকীদাতুত্ তাহাবিয়া, পৃ. ৫০৬।

[24] বর্ণনায়: আবু দাউদ, নাসাঈ ও ইবন হিব্বান।

[25] বর্ণনায়: তিরমিযী ২/১৭৫।

[26] তিরমিযী ২/১৭৫।

[27] তিরমিযী, ইবন মাজাহ, আদাবুল মুফরাদ ও আহমদ।

[28] হাকিম, সহীহুল আযকার পৃ. ৪৯।

[29] তিরমিযী।

[30] আকীদাতুল মুমিন: ১২৯।

[31] তিরমিযী।

[32] সহীহ মুসলিম।

[33] তিরমিযী।

[34] সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম।

[35] শরহু আকীদাতুত তাহাবিয়া: ২৩৭।

[36] বর্ণনায়: সহীহ বুখারী ও মুসলিম।

[37] বায়যাভী: ২য় খণ্ড, পৃ. ১৫৪; বায়যাভী কামিল, পৃ. ৬১৩।

[38] মুখতাসারু তাফসীরিত তাবারী: ২য় খণ্ড, পৃ. ২৮১।

[39] আয়সারুত তাফাসীর: ৪৯-৫০, ৪র্থ খণ্ড।

[40] তাইসীরুল কারীমির রহমান, পৃ. ৬৭২।

[41] শরহুল আকীদাতিত তাহাবিয়া: ২৩৫-২৩৬।

[42] তাইসীরুল আযীযিল হামীদ: ২৪৭।

[43] কাশফুশ শুবহাত: ১৬।

[44] আল ইরশাদ ইলা সহীহিল ইতিক্বাদ: ৫১-৫২।

[45] আকীদাতুল মুমিন, পৃ. ১২৯।

[46] মুয়াত্তা ইমাম মালিক, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম।

 Source: Islamhouse.com

Related Posts

"কোরআন-হাদীসের আলোকে শাফাআত "

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সুন্দর স্বাবলম্বী ভাষায় কমেন্ট করার অনুরোধ রইলো.....

Iklan Atas Artikel

Middle Ad

Middle 2

Registered ad