সালাত শিক্ষা
[ بنغالي – Bengali – বাংলা ]
ড. আব্দুল্লাহ ইবন আহমাদ আলী আয-যাইদ
অনুবাদক: মুকাম্মাল হক (বীরভূমী)
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
ভূমিকা
الحمد لله والصلاة والسلام على محمد بن عبد الله صلى الله عليه وسلم، وعلى آله وصحبه أجمعين، أما بعد:
সালাত সম্পর্কে যে সকল বই-পুস্তক লেখা হয়েছে, আমি তা একত্রিত করার প্রয়াস পাই। অতঃপর আমি যে বিষয়টি উপলব্ধি করি তা হলো, যেসব কিতাব সালাত সম্পর্কে লিখিত হয়েছে তার মধ্যে প্রায় সবগুলোই বিশেষ বিশেষ দিকের ওপর গুরুত্বারোপ করে লিখিত হয়েছে। উদাহরণত এ বইগুলোর কোনটি সালাতের বিবরণ লিখিত হয়েছে, যার মধ্যে সালাতের ফযীলত ও গুরুত্বের বর্ণনা স্থান পায় নি। আবার কোনটি দ্বান্দ্বিক মাসায়েলের আলোচনায় ভরে দেওয়া হয়েছে, যা প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য আদৌ প্রযোজ্য নয়। তাই আমি এমনসব মাসআলা সংকলন করতে মনস্থ করেছি যেগুলো বাস্তবে প্রয়োগ করা মুসলিমের জন্য অপরিহার্য। কুরআন-সুন্নাহ’র দলীলসমৃদ্ধ করে, দ্বান্দ্বিক মাসায়েলগুলো অনুল্লেখ রেখে এবং বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেণের আশ্রয়ে না গিয়ে সহজ-সরলভাবে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যাতে সংক্ষিপ্ত অথচ তথ্যসমৃদ্ধ এ বইটি সর্বজন সমাদৃত হয় এবং বিদেশী ভাষায় অনুবাদের উপযোগী হয়। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা তিনি যেন আমার এই শ্রমকে ফলপ্রসু করেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, কবুলকারী। আর তিনিই একমাত্র তাওফীকদাতা।
ড. আব্দুল্লাহ ইবন আহমাদ আলী আয-যাইদ
রিয়াদ, তারিখ ১/১/১৪১৪ হিজরী
কিছু কথা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, সহীহ হাদীসে এসেছে , তিনি বলেন,
«بني الإسلام على خمسٍ شهادة أن لا إله إلا الله وأنّ محمداً رسول الله وإقامِ الصلاة وإيتاءِ الزّكاةِ وصومِ رمضانَ وحجِّ البيت لمن استطاع إليه سبيلاً..»
“ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি জিনিসের ওপর স্থাপিত, সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। সালাত প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত প্রদান করা, রমাযান মাসে সাওম পালন করা। সক্ষম ব্যক্তির জন্য আল্লাহর ঘরে (কাবা শরীফে) হজ পালন করা”।[1]
উক্ত হাদীসটি ইসলামের পাঁচটি রুকন বা স্তম্ভকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
প্রথম স্তম্ভ:
«شهادة أن لا إله إلا الله وأن محمداً رسول الله»
“আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য মা‘বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রাসূল- এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা।” আর এখানে ‘লা ইলাহা’ শব্দটি প্রমাণ করছে যে, আল্লাহ ছাড়া যা কিছুর ইবাদত করা হয় তা সবই বাতিল এবং ‘ইল্লাল্লাহ’ শব্দটি প্রমাণ করছে ইবাদত কেবল এক আল্লাহর জন্যই নিবেদিত হতে হবে, যাঁর কোনো অংশীদার নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿شَهِدَ ٱللَّهُ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَأُوْلُواْ ٱلۡعِلۡمِ قَآئِمَۢا بِٱلۡقِسۡطِۚ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ١٨﴾ [ال عمران: ١٨]
“আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে তিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, আর ফিরিশতা ও জ্ঞানীগণও। তিনি ন্যায় দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। তিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮]
আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, এ কথার সাক্ষ্য দানের মাধ্যমে তিনটি জিনিসের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।
প্রথমত: তওহীদুল উলুহিয়্যাহ, অর্থাৎ সকল প্রকার ইবাদত একমাত্র আল্লাহর নিমিত্তে, এ কথার স্বীকারোক্তি দেওয়া এবং ইবাদতের কোনো অংশই আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্যে নিবেদন না করার অঙ্গিকার করা। আর এ উদ্দেশ্যেই আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টিজগতকে অস্তিত্বে এনেছেন। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦﴾ [الذاريات: ٥٦]
“আমি জ্বিন ও মানব জাতিকে কেবল এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা একমাত্র আমারই ইবাদত করবে”। [সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ৫৬]
আর এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্যই আল্লাহ তা‘আলা যুগে যুগে রাসূলগণকে কিতাবসহ পাঠিয়েছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَ﴾ [النحل: ٣٦]
“প্রত্যেক উম্মাতের নিকট আমরা রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা কেবল আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত (আল্লাহ ব্যতীত যে জিনিস বা বস্তুকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করা হয়) থেকে দূরে অবস্থান কর”। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৩৬]
আর তাওহীদের সম্পূর্ণ বিপরীত হলো শির্ক। অতএব, তাওহীদের অর্থ যেহেতু সকল প্রকার ইবাদত একমাত্র আল্লাহ জন্য নির্দিষ্ট করা। তাই শির্ক হলো ইবাদতের কোনো অংশ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য নির্দিষ্ট করা। সুতরাং যে ব্যক্তি নিজ খেয়াল-খুশি মতো আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে সালাত, সাওম, দো‘আ (প্রার্থনা) নযর-মান্নত, জীবজন্তু উৎসর্গ ইত্যাদি করবে অথবা মৃতব্যক্তির কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে, সে ইবাদতের ক্ষেত্রে শির্কের আশ্রয় নিল, আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে অংশীদার হিসেবে সাব্যস্ত করে নিল। শির্ক হলো সবচেয়ে বড় গুনাহ। এটি সমস্ত আমলকে বিনষ্ট করে দেয়। এমনকি শির্কে নিপতিত ব্যক্তির জান-মালের সম্মান পর্যন্ত রহিত হয়ে যায়।
দ্বিতীয়ত: তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ, অর্থাৎ এ কথা স্বীকার করা যে, একমাত্র আল্লাহই সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, জীবন দানকারী, মৃত্যু প্রদানকারী, মুদাব্বির (ব্যবস্থাপক) এবং আসমান ও যমীনে একমাত্র তাঁরই বাদশাহী। এ প্রকার তাওহীদকে স্বীকৃতি দেওয়া সৃষ্টিজগতের একটি স্বভাবজাত ফিতরত-প্রকৃতি, এমনকি যেসব মুশরিকের মাঝে আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেরিত হয়েছিলেন তারাও তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহকে স্বীকার করত এবং তা অস্বীকার করত না।
আল্লাহ বলেন,
﴿قُلۡ مَن يَرۡزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ أَمَّن يَمۡلِكُ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡأَبۡصَٰرَ وَمَن يُخۡرِجُ ٱلۡحَيَّ مِنَ ٱلۡمَيِّتِ وَيُخۡرِجُ ٱلۡمَيِّتَ مِنَ ٱلۡحَيِّ وَمَن يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَۚ فَسَيَقُولُونَ ٱللَّهُۚ فَقُلۡ أَفَلَا تَتَّقُونَ ٣١﴾ [يونس: ٣١]
“বল, আসমান ও যমীন থেকে কে তোমাদের রিযিক দেন? অথবা কে (তোমাদের) শ্রবণ ও দৃষ্টিসমূহের মালিক? আর কে মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন আর জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন? কে সব বিষয় পরিচালনা করেন? তখন তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ’। সুতরাং তুমি বল, ‘তার পরও কি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে না?” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৩১]
এ প্রকার তাওহীদকে খুব কম সংখ্যক মানুষই অস্বীকার করে, যারা অস্বীকার করে তারাও আবার বাহ্যিক অস্বীকার সত্ত্বেও হৃদয়ের মনিকোঠায়, নিভৃতে, স্বীকৃতি জ্ঞাপন করে থাকে। তাদের বাহ্যিক অস্বীকৃতিটা হয় কেবলই জেদ ও অহংকারের বশবর্তী হয়ে। এ বিষয়টির প্রতিই আল্লাহ তা‘আলা ইঙ্গিত করে বলেন,
﴿وَجَحَدُواْ بِهَا وَٱسۡتَيۡقَنَتۡهَآ أَنفُسُهُمۡ ظُلۡمٗا وَعُلُوّٗا﴾ [النمل: ١٤]
“তারা অন্যায় ও উদ্ধতভাবে অহংকার করে নিদর্শনগুলোকে প্রত্যাখ্যান করল, যদিও তাদের অন্তর এগুলো সত্য বলে দৃঢ়বিশ্বাস করেছিল”। [সূরা আন-নামল, আয়াত: ১৪]
তৃতীয়ত: তাওহীদুল আসমা ওয়াসসিফাত, অর্থাৎ আল্লাহ যেসব নাম ও গুণে নিজকে গুণান্বিত করেছেন অথবা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব নাম ও গুণে তাঁকে গুণান্বিত করেছেন, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং কোনোরূপ সুনির্দিষ্ট আকার, সাদৃশ্য, বিকৃতি ও বিলুপ্তি ইত্যাদির আশ্রয়ে না গিয়ে, তাঁর মহত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, এমনভাবে সে নাম ও গুণরাজির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَا﴾ [الاعراف: ١٨٠]
“আর আল্লাহর রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাক।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৮০]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ﴾ [الشورا: ١١]
“তাঁর মতো কিছু নেই, আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]
সুতরাং কালেমায়ে “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু” উক্ত তিন প্রকার তাওহীদের স্বীকারোক্তিকে শামিল করে।
অতএব, যে ব্যক্তি এই কালেমা সম্যকরূপে অনুধাবন করে তার দাবি মোতাবেক আমল করল, অর্থাৎ শির্ক বর্জন এবং তাওহীদে বিশ্বাস করে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ উচ্চারণ করল এবং সে অনুযায়ী আমল করল সেই প্রকৃত মুসলিম বলে পরিগণিত হবে। আর যে ব্যক্তি অন্তরে বিশ্বাস না রেখে কেবল বাহ্যিকভাবে মুখে উচ্চারণ করল, সাথে বাহ্যিক আমলগুলোও করে গেল, সে প্রকৃত মুসলিম নয়, সে বরং মুনাফিক। আর যে ব্যক্তি এই কালেমা মুখে উচ্চারণ করে তার দাবির বিপরীত আমল করল, সে কাফির, যদিও সে মৌখিকভাবে এই কালেমা বার বার উচ্চারণ করে চলে, তবুও।
“মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহ প্রেরিত রাসূল”- এ কথার সাক্ষ্য প্রদানের তাৎপর্য হলো, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নিকট থেকে যে রিসালাত (বার্তা) নিয়ে এসেছেন তার ওপর ঈমান ও বিশ্বাস স্থাপন করা। অর্থাৎ তাঁর আনীত বিধি-বিধানের আনুগত্য করা ও নিষেধাবলি থেকে বিরত থাকা এবং সকল কাজ তাঁর প্রদর্শিত পদ্ধতি মোতাবেক প্রতিপালন করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لَقَدۡ جَآءَكُمۡ رَسُولٞ مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ عَزِيزٌ عَلَيۡهِ مَا عَنِتُّمۡ حَرِيصٌ عَلَيۡكُم بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ رَءُوفٞ رَّحِيمٞ ١٢٨﴾ [التوبة: ١٢٨]
“নিশ্চয় তোমাদের নিজদের মধ্যে তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছেন, তা তার জন্য কষ্টদায়ক যা তোমাদেরকে পীড়া দেয়। তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১২৮]
এ বিষয়ে আল-কুরআনের আরো অনেক বাণী প্রনিধানযোগ্য, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَ﴾ [النساء: ٨٠]
“যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করল সে আল্লাহর আনুগত্য করল”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮০]
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ١٣٢﴾ [ال عمران: ١٣٢]
“আর তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ ও তার রাসূলের যাতে তোমাদেরকে দয়া করা হয়।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩২]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿مُّحَمَّدٞ رَّسُولُ ٱللَّهِۚ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلَى ٱلۡكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيۡنَهُمۡ﴾ [الفتح: ٢٩]
“মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয়”। [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ২৯]
দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্তম্ভ: সালাত প্রতিষ্ঠিত করা ও যাকাত প্রদান করা।
এ সম্পর্কে আল্লাহর ঘোষণা:
﴿وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلۡقَيِّمَةِ ٥﴾ [البينة: ٥]
“আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর, ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়; আর এটিই হলো সঠিক দীন।” [সূরা আল-বায়্যিনাহ, আয়াত: ৫]
আল্লাহ আরো বলেন,
﴿وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱرۡكَعُواْ مَعَ ٱلرَّٰكِعِينَ ٤٣﴾ [البقرة: ٤٣]
“আর তোমরা সালাত সুপ্রতিষ্ঠিত কর, যাকাত প্রদান কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ৪৩]
সালাত: এটা হলো আমাদের মূল আলোচ্য বিষয়।
যাকাত: আর তা হচ্ছে ঐ সম্পদ যা ধনবানের নিকট থেকে সংগৃহীত হয় এবং ধনহীন ও যাকাতের অন্যান্য হকদারদেরকে দেওয়া হয়। যাকাত ইসলামের একটি মহান বিধান, যা দ্বারা সমাজের সদস্যদের মাঝে সংহতি, সৌহার্দ, সহযোগিতা সুনিশ্চিত হয়। যাকাতের বিধানের মাধ্যমে দরিদ্র, অসহায় ও যাকাতের হকদারের প্রতি কোনোরূপ দয়াপ্রদর্শন নয় বরং ধনীদের সম্পদে বিত্তহীনদের এটি একটি নির্দিষ্ট অধিকার।
চতুর্থ স্তম্ভ: রমযান মাসে সাওম পালন করা।
এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣﴾ [البقرة: ١٨٣]
“হে মুমিনগণ, তোমাদের ওপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৮৩]
পঞ্চম স্তম্ভ: সক্ষম ব্যক্তির জন্য হজ পালন করা। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহর ঘোষণা:
﴿وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ ٱلۡعَٰلَمِينَ﴾ [ال عمران: ٩٧]
“সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরয। আর যে কুফুরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৭]
সালাতের ফযীলত
উল্লিখিত নাতিদীর্ঘ আলোচনায় উঠে এসেছে যে ইসলামে সালাতের গুরুত্ব অপরিসীম। সালাত ইসলামের দ্বিতীয় রুকন, যা সুপ্রতিষ্ঠিত করা ব্যতীত মুসলিম হওয়া যায় না। সালাতে অবহেলা, অলসতা মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা মোতাবেক সালাত পরিত্যাগ করা কুফুরী, ভ্রষ্টতা এবং ইসলামের গণ্ডিবহির্ভূত হয়ে যাওয়া। সহীহ হাদীসে এসেছে,
«بين الرجل وبين الكفر والشرك ترك الصلاة»
“মুমিন ও কুফর-শির্কের মধ্যে ব্যবধান হলো সালাত পরিত্যাগ করা”।[2]
এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«العهد الذي بيننا وبينهم الصلاة فمن تركها فقد كفر»
“আমাদের ও তাদের মধ্যকার অঙ্গীকার হলো সালাত। অতঃপর যে ব্যক্তি তা পরিত্যাগ করবে সে কাফির হয়ে যাবে।”[3]
সালাত ইসলামের স্তম্ভ ও বড় নিদর্শন এবং বান্দা ও তার প্রতিপালকের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনকারী। সহীহ হাদীসে এর প্রমাণ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إن أحدكُم إذا صَلَّى يُناجي ربَّه
“নিশ্চয় তোমাদের কেউ যখন সালাত আদায় করে তখন সে তার রবের সাথে (মোনাজাত করে) নির্জনে কথা বলে। সালাত বান্দা ও তার রবের মহব্বত এবং তাঁর দেওয়া অনুকম্পার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রতীক। সালাত আল্লাহর নিকট অতি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার প্রমাণসমূহের একটি এই যে, সালাত হলো প্রথম ইবাদত যা ফরয হিসেবে পালনের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং মি‘রাজের রাতে, আকাশে, মুসলিম জাতির ওপর তা ফরয করা হয়েছে। তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে, ‘কোন আমল উত্তম’ জিজ্ঞাসা করা হলে তার প্রত্যুত্তরে তিনি বলেছেন:
«الصلاة على وقتها»
“সময় মত সালাত আদায় করা”।[4]
সালাতকে আল্লাহ তা‘আলা পাপ ও গুনাহ থেকে পবিত্রতা অর্জনের উসীলা বানিয়েছেন। হাদীসে এসেছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
«أرأيتُم لو أن نهراً بباب أحدكم يغتسل فيه كل يوم خمس مرات، هل يبقى من درنه شيء؟ قالوا: لا، قال: كذلك مثل الصلوات الخمس يَمْحُوا اللهُ بهنّ الخطايا»
“যদি তোমাদের কারো (বাড়ীর) দরজার সামনে প্রবাহমান নদী থাকে এবং তাতে প্রত্যেক দিন পাঁচবার গোসল করে, তাহলে কি তার (শরীরে) ময়লা বাকী থাকবে? (সাহাবীগণ) বললেন, ‘না’। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘অনুরূপভাবে আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের দ্বারা (বান্দার) গুনাহকে মিটিয়ে দেন”।[5]
এ বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে আরো হাদীস বর্ণিত হয়েছে:
«أنه كان آخر وصيته لأمته، وآخر عهده إليهم عند خروجه من الدنيا أن اتّقوا الله في الصلاة وفيما ملكت أيمانُكم».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুকালে তাঁর উম্মাতের জন্য সর্বশেষ অসিয়ত (উপদেশ) এবং অঙ্গীকার গ্রহণ ছিল, তারা যেন সালাত ও তাদের দাস-দাসীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে।”[6]
আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে মাজীদে সালাতের ব্যাপারে খুবই গুরুত্বারোপ করেছেন এবং সালাত ও সালাত আদায়কারীকে সম্মানিত করেছেন। কুরআনের অনেক জায়গায় বিভিন্ন ইবাদতের সাথে বিশেষভাবে সালাতের কথা উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া সালাতকে তিনি বিশেষভাবেও উল্লেখ করেছেন।
এ বিষয়ে কয়েকটি আয়াত নিম্নরূপ:
﴿حَٰفِظُواْ عَلَى ٱلصَّلَوَٰتِ وَٱلصَّلَوٰةِ ٱلۡوُسۡطَىٰ وَقُومُواْ لِلَّهِ قَٰنِتِينَ ٢٣٨﴾ [البقرة: ٢٣٨]
“তোমরা সকল সালাতের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে (মাধ্যম) আসরের সালাত। আর আল্লাহর সমীপে কাকুতি-মিনতির সাথে দাঁড়াও”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৩৮]
﴿وَأَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَۖ إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ تَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِ﴾ [العنكبوت: ٤٥]
“আর তুমি সালাত সুপ্রতিষ্ঠিত কর। নিশ্চয় সালাত অশালীন এবং অন্যায় কাজ থেকে বারণ করে”। [সূরা আল-‘আনকাবুত, আয়াত: ৪৫]
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱسۡتَعِينُواْ بِٱلصَّبۡرِ وَٱلصَّلَوٰةِۚ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٥٣﴾ [البقرة: ١٥٣]
“হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৫৩]
﴿إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ كَانَتۡ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ كِتَٰبٗا مَّوۡقُوتٗا ١٠٣﴾ [النساء: ١٠٣]
“নিশ্চয় সালাত মুমিনদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০৩]
সালাত পরিত্যাগকারীর জন্য আল্লাহর আযাব অপরিহার্য।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَخَلَفَ مِنۢ بَعۡدِهِمۡ خَلۡفٌ أَضَاعُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَٱتَّبَعُواْ ٱلشَّهَوَٰتِۖ فَسَوۡفَ يَلۡقَوۡنَ غَيًّا ٥٩﴾ [مريم: ٥٩]
“অতঃপর তাদের পরে আসল এমন এক অসৎ বংশধর যারা সালাত বিনষ্ট করল এবং কু-প্রত্তির অনুসরণ করল। সুতরাং তারা শীগ্রই জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে”। [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৫৯]
আল্লাহর বিধান অনুযায়ী, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের মাধ্যমে, তাঁর ক্রোধ ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে সালাত সুপ্রতিষ্ঠিত করা ও সময়মত তা আদায় করা প্রতিটি মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য।
তাহারাত (পবিত্রতা)
তাহারাত বলতে শরীর, কাপড় এবং সালাতের স্থান সবগুলোর পবিত্রতাকেই বুঝায়। শরীরের পবিত্রতা দু’ভাবে হয়:
প্রথমত: হাদসে আকবর বা বড় নাপাকী থেকে গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন, বড় নাপাকী স্বামী-স্ত্রীর মিলন অথাব অন্য কোনো কারণে বীর্যস্খলন কিংবা হায়েয-নিফাসের কারণে হয়ে থাকে, তা থেকে পবিত্রতা অর্জনের নিয়তে চুলসহ শরীরের সর্বাঙ্গে পানি বয়ে দেওয়ার মাধ্যমে এ গোসল সম্পন্ন হয়।
দ্বিতীয়ত: অযু। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا قُمۡتُمۡ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ فَٱغۡسِلُواْ وُجُوهَكُمۡ وَأَيۡدِيَكُمۡ إِلَى ٱلۡمَرَافِقِ وَٱمۡسَحُواْ بِرُءُوسِكُمۡ وَأَرۡجُلَكُمۡ إِلَى ٱلۡكَعۡبَيۡنِ﴾ [المائدة: ٦]
“হে মুমিনগণ! তোমরা যখন সালাতে দণ্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬]
উক্ত আয়াতে এমন কয়েকটি কার্য অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যেগুলো অযু করাকালীন সম্পাদন করা অত্যাবশ্যক। আর তা হলো:
১। মুখমণ্ডল ধৌত করা। এর মধ্যে কুলি করা এবং নাকে পানি দিয়ে নাক পরিস্কার করাও অন্তর্ভুক্ত।
২। কনুইসহ দুই হাত ধৌত করা।
৩। সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করা। আর সম্পূর্ণ মাথা বলতে দুই কানও অন্তর্ভুক্ত।
৪। দুই পায়ের গিরাসহ ধৌত করা।
কাপড় ও সালাতের স্থানের তাহারাতের অর্থ হলো পেশাব, পায়খানা এবং এ জাতীয় অন্যান্য অপবিত্র বস্তু থেকে পবিত্র হওয়া।
ফরয সালাত
ইসলাম মুসলিমদের ওপর দিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছে। আর এগুলো হলো, ফজরের সালাত, যোহরের সালাত, আসরের সালাত, মাগরিবের সালাত এবং এশার সালাত।
১। ফজরের সালাত: ফজরের (ফরয) সালাত দুই রাকাত। এর সময় সুবহে সাদিক উদিত হওয়া অর্থাৎ রাতের শেষাংশে, পূর্বাকাশে, শ্বেত আভা প্রসারিত হওয়া থেকে নিয়ে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত।
২। যোহরের সালাত: যোহরের (ফরয) সালাত চার রাকাত। এর সময় মধ্যকাশ থেকে সূর্য ঢলে যাওয়ার পর মূল ছায়া ব্যতীত প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার সমান হওয়া পর্যন্ত।
৩। আসরের সালাত: আসরের (ফরয) সালাত চার রাকাত। এর সময় যোহরের সময় শেষ হবার পর আরম্ভ হয় সূর্য হেলে যাওয়ার ছায়া ব্যতীত প্রত্যেকটি জিনিসের ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত। (এটি সবচেয়ে উত্তম ওয়াক্ত) আর জরুরী ওয়াক্ত সূর্য নিস্তেজ হয়ে রোদের হলুদ রং হওয়া পর্যন্ত।
৪। মাগরিবের সালাত: মাগরিবের (ফরয) সালাত তিন রাকাত। এর সময় সূর্যাস্তের পর থেকে শফক্বে আহমার অর্থাৎ পশ্চিম আকাশে লোহিত রং অদৃশ্য হওয়ার আগ পর্যন্ত।
৫। এশার সালাত: এশার (ফরয) সালাত চার রাকাত। এর সময় মাগরিবের সময় শেষ হওয়ার পর থেকে রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। অথবা রাতের প্রথম অর্ধাংশ পর্যন্ত।
সালাত যেভাবে আদায় করবেন
উল্লিখিত বিবরণ অনুযায়ী সালাতের স্থান ও শরীরের পবিত্রতা অর্জনের পর সালাতের সময় হলে নফল অথবা ফরয, যে কোনো সালাত পড়ার ইচ্ছা করুন না কেন, অন্তরে দৃঢ়সংকল্প নিয়ে কিবলা অর্থাৎ পবিত্র মক্কায় অবস্থিত কাবা শরীফের দিকে মুখ করে একাগ্রতার সাথে দাঁড়িয়ে যাবেন এবং নিম্নবর্ণিত কর্মগুলো করবেন:
১। সাজদাহ’র জায়গায় দৃষ্টি রেখে তাক্বীরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলবেন।
২। তাকবীরের সময় কান বরাবর অথবা কাঁধ বরাবর উভয় হাত উঠাবেন।
৩। তাকবীরের পর সালাত শুরুর একটি দো‘আ পড়বেন, পড়া সুন্নাত। দো‘আটি নিম্নরূপ:
«سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلا إلَهَ غَيْرُكَ»
উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তা‘আলা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা।
“প্রশংসা এবং পবিত্রতা বর্ণনা করছি আপনার হে আল্লাহ! বরকতময় আপনার নাম। অসীম ক্ষমতাধর ও সুমহান আপনি। আপনি ভিন্ন আর কোনো উপাস্য নেই”।
ইচ্ছা করলে উক্ত দো‘আর পরিবর্তে এই দোআ পড়া যাবে:
«اَللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اَللَّهُمَّ نَقِّنِي مِنْ خَطَايَايَ كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اَللَّهُمَّ اغْسِلْنِي مِنْ خَطَايَايَ بِالْمَاْءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ»
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা বাইদ্ বাইনী ওয়া বাইনা খাতাইয়াইয়া কামা বা’আত্তা বাইনাল মাশরিকি ওয়াল মাগরিবি, আল্লাহুম্মা নাক্কিনী মিন খাতাইয়াইয়া কামা য়ুনাক্কাছ ছাওবুল আবইয়াযু মিনাদ্দানাসি, আল্লাহুম্মাগ্সিল্নী মিন্ খাতাইয়াইয়া বিল মায়ি ওয়াছ্ ছালজি ওয়াল বারাদি”।
“হে আল্লাহ! আমার ও আমার গুনাহের মাঝে এতটা দূরত্ব সৃষ্টি করুন যতটা দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ঠিক ঐভাবে পাপমুক্ত করুন যেভাবে সাদা কাপড় ময়লামুক্ত হয়। হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাহসমূহকে পানি দিয়ে ও বরফ দিয়ে এবং শিশির দ্বারা ধুয়ে দিন”।[7]
৪। তারপর বলবেন:
«أَعُوْذُ باللهِِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ»
«بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ»
উচ্চারণ: “আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম, বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম”।
“আমি আশ্রয় চাচ্ছি আল্লাহর নিকট অভিশপ্ত শয়তান থেকে। আরম্ভ করছি দয়াবান কৃপাশীল আল্লাহর নামে।” এর পর সূরা ফাতিহা পড়বেন:
﴿ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ٣ مَٰلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ ٤ إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ ٥ ٱهۡدِنَا ٱلصِّرَٰطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ ٦ صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ ٧﴾ [الفاتحة: ٢، ٧]
“সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি সৃষ্টিকুলের রব। পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। বিচার দিবসের মালিক। আপনারই আমরা ইবাদত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য চাই। আমাদেরকে সরল পথের হিদায়াত দিন। তাদের পথ, যাদেরকে আপনি নি‘আমত দিয়েছেন। যাদের ওপর আপনার ক্রোধ আপতিত হয় নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়।”
৫। তারপর কুরআন থেকে মুখস্থ যা সহজ তা পড়বেন। যেমন,
﴿إِذَا جَآءَ نَصۡرُ ٱللَّهِ وَٱلۡفَتۡحُ ١ وَرَأَيۡتَ ٱلنَّاسَ يَدۡخُلُونَ فِي دِينِ ٱللَّهِ أَفۡوَاجٗا ٢ فَسَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّكَ وَٱسۡتَغۡفِرۡهُۚ إِنَّهُۥ كَانَ تَوَّابَۢا ٣﴾ [النصر: ١، ٣]
“যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দীনে প্রবেশ করতে দেখবেন, তখন আপনি আপনার রবের পবিত্রতা ঘোষণা করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল।”
৬। তারপর ‘আল্লাহু আকবার’ (আল্লাহ সবচেয়ে বড়) বলে দু হাত কাঁধ বরাবর অথবা কান বরাবর উত্তোলন করে দুই হাত হাঁটুর উপর রেখে পিঠ সোজা ও সমান করে রুকু করবেন এবং বলবেন سُبْحَانَ رَبِّيِ الْعَظِيمِ
উচ্চারণ: “সুবহানা রাবিবয়্যাল ‘আযীম” (পবিত্র মহান রবের পবিত্রতা ঘোষণা করছি) এটি তিনবার অথবা তিনের অধিকবার বলা সুন্নাত।
তারপর বলবেন: سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه
“সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ” (আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে শুনলেন যে তাঁর প্রশংসা করল) বলে রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে, ইমাম হোক অথবা একাকী হোক, সোজা দাঁড়িয়ে গিয়ে দু হাত কাঁধ বরাবর অথবা কান বরাবর উত্তোলন করে বলতে হবে:
رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْداً كَثِيراً طَيِّباً مُبَارَكاً فِيهِ مِلْءَ السَّماَوَاتِ وَمِلْءَ الأَرْضِ وَمِلْءَ ما بَيْنَهُمَا وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ
উচ্চারণ: রববানা ওয়া লাকাল হামদু, হামদান কাসীরান তাইয়্যেবান মুবারাকান ফীহ, মিল্ আস্সামাওয়াতি ওয়া মিলআলআরযি, ওয়ামিলআ মা বাইনাহুমা ওয়া মিলআ মা শী’তা মিন শাইয়িন বা‘দু”।
“হে আমার রব! প্রশংসা আপনারই জন্য, প্রচুর প্রশংসা, যে প্রশংসা পবিত্র-বরকতময়, আকাশ ভরে, যমীন ভরে এবং এ উভয়ের মধ্যস্থল ভরে, এমনকি আপনি যা ইচ্ছে করেন তা ভরে পরিপূর্ণরূপে আপনার প্রশংসা”।
আর যদি মুক্তাদী হয় তাহলে রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে উপরোল্লেখিত দো‘আ رَبَّنَا ولَكَ الْحَمْد .... (রাব্বানা ওয়ালাকাল হামদু...) শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
৮। তারপর اللهُ أَكْبَرُ (আল্লাহু আকবর) বলে বাহুকে তার পার্শ্বদেশ থেকে এবং ঊরুকে উভয় পায়ের রান থেকে আলাদা রেখে সাজদাহ করবেন। সাজদাহ পরিপূর্ণ হয় সাতটি অঙ্গের উপর, কপাল-নাক, দুই হাতের তালু, দুই হাঁটু এবং দুই পায়ের অঙ্গুলির তলদেশ। সেজদার অবস্থায় তিনবার অথবা তিন বারেরও বেশি এই দো‘আ পড়বেন।
سُبْحَانَ رَبِّيَ الاَعْلَى
উচ্চারণঃ সুবহানা রাবিবয়াল আ’লা (পবিত্রতা ঘোষণা করছি আমার মহান প্রতিপালকের) বলবেন এবং ইচ্ছা মত বেশী করে দো‘আ করবেন।
৯। তারপর اللهُ أَكْبَرُ (আল্লাহু আকবার) বলে মাথা উঠিয়ে পা খাড়া রেখে বাম পায়ের ওপর বসে দুই হাত, রান ও হাঁটুর উপর রেখে বলবেন,
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَعَافِنِي وَارَزُقْنِي وَاهْدِنِي، وَاجْبُرْنِيْ
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মাগফির্লী ওয়ার্হামনী ওয়া আফিনী ওয়ারজুকনী ওয়াহদিনী ওয়াজবুরনী”।
“হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, দয়া করুন, নিরাপদে রাখুন, জীবিকা দান করুন, সরল পথ দেখান, শুদ্ধ করুন”।
১০। তারপর اللهُ أَكْبَر (আল্লাহু আকবার) বলে দ্বিতীয় সাজদাহ করবেন এবং প্রথম সেজদায় যা করেছেন তাই করবেন।
১১। তারপর اللهُ أَكْبَر (আল্লাহু আকবার) বলে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য উঠে দাঁড়াবেন। (এভাবে প্রথম রাকাত পূর্ণ হবে।)
১২। তারপর দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা ফাতিহা ও কুরআনের কিছু অংশ পড়ে রুকু করবেন এবং দুই সাজদাহ করবেন, অর্থাৎ পুরোপুরিভাবে প্রথম রাকাতের মতোই করবেন।
১৩। তারপর দ্বিতীয় রাকাতের দুই সাজদাহ থেকে মাথা উঠানোর পর দুই সাজদার মাঝের ন্যায় বসে তাশাহ্হুদের এই দো‘আ পড়বেন:
«اَلتَّحِيَاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، اَلسَّلامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، اَلسَّلامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِاللهِ الصَالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وأَشهدُ أَنَّ مُحَمَّداً عبْدُهُ وَرَسُولُهُ»
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্সলাওয়াতু ওয়াত্তাইয়েবাতু, আস্সালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবিয়্যু ওয়া রহ্মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্ সলেহীন, আশ্হাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ”।
“সকল তা‘যীম ও সম্মান আল্লাহর জন্য, সকল সালাত আল্লাহর জন্য এবং সকল ভালো কথা ও কর্মও আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপানার প্রতি শান্তি, আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকত বর্ষিত হোক। আমাদের ওপর এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল।”
তবে সালাত যদি দুই রাকাত বিশিষ্ট হয়। যেমন, ফজর, জুমু‘আ, ঈদ তাহলে ‘আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি’..... পড়ার পর একই বৈঠকে এই দুরূদ পড়বেন:
«اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، وَ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ»
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়ালা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ, ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়ালা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাক্তা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ”।
“হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ ও তার বংশধরদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন, যেরূপভাবে আপনি ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও তার বংশধরদের ওপর রহমত বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত সম্মানিত।”
আপনি মুহাম্মাদ ও তার বংশধরদের ওপর বরকত বর্ষণ করুন, যেরূপভাবে আপনি ইবরাহীম ও তার বংশধরদের ওপর বরকত বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত, সম্মানিত”।
তারপর চারটি জিনিস থেকে এই বলে পানাহ চাইবেন:
«اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ»
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন আযাবি জাহান্নামা ওয়া মিন আযাবিল্ ক্বাবরি ওয়ামিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া ওয়াল্মামাতি ওয়া মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ্দাজ্জাল”।
“হে আল্লাহ! আমি অবশ্যই আপনার নিকট জাহান্নাম ও কবরের শাস্তি থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। দাজ্জালের ফিতনা এবং জীবন মৃত্যুর ফিতনা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।”
উক্ত দো‘আর পর ইচ্ছেমত দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কামনার্থে মাসনূন দো‘আ পড়বেন। ফরয সালাত হোক অথবা নফল সকল ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি প্রযোজ্য। তারপর ডান দিকে ও বাম দিকে (গর্দান ঘুরিয়ে)
«اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ»
উচ্চারণ: “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলবেন।
আর সালাত যদি তিন রাকাত বিশিষ্ট হয়, যেমন মাগরিব। অথবা চার রাকাত বিশিষ্ট হয়, যেমন যোহর, আসর ও এশা, তাহলে দ্বিতীয় রাকাতের পর (সালাম না ফিরিয়ে) “আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি.... পড়ার পর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে দু হাত কাঁধ বরাবর অথবা কান বরাবর উত্তোলন করে সোজা দাঁড়িয়ে গিয়ে শুধু সূরা ফাতিহা পড়ে প্রথম দু’ রাকাতের মতো রুকু ও সাজদাহ করতে হবে এবং চতুর্থ রাকাতেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। তবে (শেষ তাশাহ্হুদে) বাম পা, ডান পায়ের নিচে রেখে ডান পা খাড়া রেখে মাটিতে নিতম্বের (পাছার) উপর বসে মাগরিবের তৃতীয় রাকাতের শেষে এবং যোহর, আসর ও এশার চতুর্থ রাকাতের শেষে, শেষ তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহ......, ও দুরূদ পড়বেন। ইচ্ছে হলে অন্য দো‘আও পড়বেন। এরপর ডান দিকে (গর্দান) ঘুরিয়ে (আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বলবেন। আর এভাবেই সালাত সম্পন্ন হয়ে যাবে।
জামা‘আতের সহিত সালাত
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱرۡكَعُواْ مَعَ ٱلرَّٰكِعِينَ ٤٣﴾ [البقرة: ٤٣]
“তোমরা সালাত সুপ্রতিষ্ঠিত কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ৪৩]
জামা‘আতের সাথে সালাত পড়ার আগ্রহ ও উৎসাহ প্রদানে এবং তার ফযীলত সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে, অপর দিকে জামা‘আত বর্জন ও জামা‘আতের সাথে সালাত আদায়ে অবহেলাকারীর বিরুদ্ধেও তার অবহেলার ক্ষেত্রে সতর্কতকারী হাদীস এসেছে।
ইসলামের কিছু ইবাদত একত্রিত ও সম্মিলিতভাবে করার বিধান রয়েছে। এ বিষয়টি ইসলামের উত্তম বৈশিষ্ট্যসমূহের একটি বলা যায়। যেমন, হজপালনকারীরা হজের সময় সম্মিলিতভাবে হজ পালন করেন, বছরে দু’বার ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় (কুরবানী ঈদে) মিলিত হন এবং প্রতিদিন পাঁচবার জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যে একত্রিত হন।
সালাতের জন্য এই দৈনিক সম্মিলন মুসলিমদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ, সহযোগিতা এবং সুন্দর সম্পর্ক স্থাপনের প্রশিক্ষণ দেয়। এটি মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ, সহযোগিতা, পরিচিতি, যোগাযোগ এবং প্রীতিপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টির গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
জামা‘আতের সাথে সালাত মুসলিমদের মধ্যে সাম্য, আনুগত্য, সততা এবং প্রকৃত ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়। কেননা ধনী-গরীব, রাজা-প্রজা, ছোট-বড় একই স্থানে ও কাতারে দাঁড়ায়, যা দ্বারা আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়। দ্বন্দ্ব, বিচ্ছিন্নতা, বর্ণ-জাতি, স্থান ও ভাষাগত গোঁড়ামি বিলুপ্ত হয়।
জামা‘আতের সাথে সালাত কায়েমের মধ্যে রয়েছে মুসলিমদের সংস্কার, ঈমানের পরিপক্কতা ও তাদের মধ্যে যারা অলস তাদের জন্য উৎসাহ প্রদানের উপকরণ। জামা‘আতের সাথে সালাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর দীন প্রকাশ পায় এবং কথায় ও কর্মে মহান আল্লাহর প্রতি আহবান করা হয়, জামা‘আতের সাথে সালাত কায়েম ঐ সকল বৃহৎ কর্মের ন্তর্ভুক্ত যা দ্বারা বান্দাগণ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে এবং এটি মর্যাদা ও নেকি বৃদ্ধির কারণ।
জুমু‘আর সালাত
দীন ইসলাম একতাকে পছন্দ করে। মানুষকে একতার প্রতি আহবান করে। বিচ্ছিন্নতা ও ইখতেলাফকে ঘৃণা ও অপছন্দ করে। তাই ইসলাম মুসলিমদের পারস্পরিক পরিচিতি, ভালোবাসা ও একতার এমন কোনো ক্ষেত্র বাদ রাখে নি যার প্রতি আহ্বান করে নি। জুমু‘আর দিন মুসলিমদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন। তারা সেদিন আল্লাহর স্মরণ ও গুণাগুণ বর্ণনায় সচেষ্ট হয় এবং দুনিয়াবী কাজ-কর্ম ও ব্যস্ততা পরিত্যাগ করে আল্লাহ প্রদত্ত অপরিহার্য বিধান ফরয সালাত আদায় করার জন্য এবং সাপ্তাহিক দারস তথা জুমু‘আর খুতবা (যার মাধ্যমে খতীব ও আলিমগণ কল্যাণমুখী জীবনযাপনের পন্থা ও পদ্ধতি বয়ান করে থাকেন, সমাজের নানা সমস্যা তুলে ধরে ইসলামের দৃষ্টিতে তার সমাধান কী তা উপস্থাপন করেন) শোনার জন্য আল্লাহর ঘর মসজিদে জমায়েত হয়।
আল-কুরআনে বলা হয়েছে:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَوٰةِ مِن يَوۡمِ ٱلۡجُمُعَةِ فَٱسۡعَوۡاْ إِلَىٰ ذِكۡرِ ٱللَّهِ وَذَرُواْ ٱلۡبَيۡعَۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٩ فَإِذَا قُضِيَتِ ٱلصَّلَوٰةُ فَٱنتَشِرُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَٱبۡتَغُواْ مِن فَضۡلِ ٱللَّهِ وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ كَثِيرٗا لَّعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ١٠﴾ [الجمعة: ٩، ١٠]
“হে মুমিনগণ! জুমু‘আর দিনে যখন সালাতের আযান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে এসো এবং বেচা-কেনা বন্ধ কর, এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝ। অতঃপর সালাত সমাপ্ত হলে ভূপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর যাতে তোমরা সফলকাম হও”। [সূরা আল-জুমু‘আ, আয়াত: ৯-১০]
জুমু‘আ প্রতিটি মুক্বীম (বাড়ীতে অবস্থানকারী), আযাদ (স্বাধীন), বালিগ (প্রাপ্ত বয়স্ক) মুসলিমের ওপর ওয়াজিব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত জুমু‘আর সালাত আদায় করেছেন এবং তিনি জুমু‘আ পরিত্যাগকারী সম্পর্কে কঠোর উক্তি পেশ করে বলেছেন:
«لَيَنتَهِيَنَّ أَقْوامٌ عَنْ وَدْعِهِمْ الجمعاتِ أو لَيختُمَنَّ الله على قُلوبِهِمْ ثُمَّ لَيَكُونَنَّ من الغافِلِينَ»
“যারা জুমু‘আ পরিত্যাগ করে তাদের অবশ্যই ক্ষান্ত হওয়া উচিত, অন্যথায় আল্লাহ নিশ্চয় তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেবেন। ফলে তারা গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হবে নিশ্চিতরূপেই”।[8]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«مَنْ تَرَكَ ثلاثَ جَمَعٍ تَهَاوَناً طَبَعَ الله عَلى قَلْبِهِ»
“যে ব্যক্তি অবহেলা করে তিন জুমু‘আ পরিত্যাগ করবে আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দেবেন”।
জুমু‘আর (ফরয) সালাত দু’রাকাত। জুমু‘আর ইমামের পিছনে একতেদা করে জুমু‘আর এ দু’রাকাত সালাত আদায় করতে হবে।
জুমু‘আর সালাতের জন্য জামে মসজিদ হওয়া শর্ত। অর্থাৎ যে মসজিদে জুমু‘আর সালাত আদায় করা হয়, যেখানে মুসলিমগণ একত্রিত হয় এবং তাদের ইমাম তাদেরকে সম্বোধন করে কথা বলেন, নসীহত-উপদেশ দেন, সরল পথ দেখান।
জুমু‘আর খুতবা চলাকালীন কথা বলা হারাম। এমনকি যদি কেউ তার পাশের ব্যক্তিকে বলে, ‘চুপ থাক’ তাহলেও সে ‘কথা না বলার’ বিধান ভঙ্গ করল বলে পরিগণিত হবে।
মুসাফিরের সালাত
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ﴾ [البقرة: ١٨٥]
“আল্লাহ তোমাদের সহজ চান, কঠিন চান না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৮৫]
ইসলাম একটি সহজ ধর্ম। আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কোনো দায়িত্ব অর্পন করেন না এবং এমন কোনো আদেশ তার ওপর চাপিয়ে দেন না, যা পালনে সে অক্ষম। তাই সফরে কষ্টের আশংকা থাকায় আল্লাহ সফর অবস্থায় দু’টি কাজ সহজ করে দিয়েছেন।
এক: সালাত কসর করে পড়া। অর্থাৎ চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয সালাত দু’রাকাত করে পড়া। অতএব, (হে প্রিয় পাঠক পাঠিকা) আপনি সফরকালে যোহর, আসর এবং এশার সালাত চার রাকাতের পরিবর্তে দু’রাকাত পড়বেন। তবে মাগরিব ও ফজর আসল অবস্থায় বাকি থাকবে। এ দু’টি কসর করে পড়লে চলবে না। সালাতে কসর আল্লাহর তরফ থেকে রুখসত তথা সহজিকরণ। আর আল্লাহ যা সহজ করে দেন তা মেনে নেওয়া ও সে অনুযায়ী আমল করা আল্লাহর কাছে পছন্দের বিষয়। যেরূপভাবে তিনি পছন্দ করেন আযীমত (আবশ্যিক বিধান) যথার্থরূপে বাস্তবায়িত হওয়া।
পায়ে হেঁটে, জীব-জন্তুর পিঠে চড়ে, ট্রেনে, নৌযানে, প্লেনে এবং মোটর গাড়িতে সফর করার ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য নেই। সফরের মাধ্যম যাই হোক না-কেন, সালাত কসর করে পড়ার ক্ষেত্রে এর কোনো প্রভাব নেই। অর্থাৎ শরী‘আতের পরিভাষায় যাকে সফর বলা হয় এমন সকল সফরেই চার রাকাতবিশিষ্ট সালাত কসর করে পড়ার বিধান রয়েছে।
দুই: দুই সালাত একত্র করে আদায় করা।
মুসাফিরের জন্য দুই ওয়াক্তের সালাত এক ওয়াক্তে জমা করা বৈধ। অতএব, মুসাফির যোহর ও আসর একত্র করে অনুরূপভাবে মাগরিব ও এশা একত্র করে পড়তে পারবে। অর্থাৎ দুই সালাতের সময় হবে এক এবং ঐ একই সময়ে দুই ওয়াক্তের সালাত আলাদা আলাদাভাবে আদায় করার অবকাশ রয়েছে। যোহরের সালাত পড়ার পর বিলম্ব না করে আসরের সালাত পড়বে অথবা মাগরিবের সালাত পড়ার পরেই সাথে সাথে এশার সালাত পড়বে। যোহর-আসর অথবা মাগরিব-এশা ছাড়া অন্য সালাত একত্রে আদায় করা বৈধ নয়। যেমন, (এশার সাথে ফজর বা) ফজরের সাথে যোহর অথবা আসরের সাথে মাগরিবকে জমা করা বৈধ নয়।
মাসনূন যিকিরসমূহ
সালাতের পর তিন বার ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি), পড়া সুন্নাত। তারপর এই দো‘আ পড়বে:
«اَللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلامُ ومِنْكَ السَّلامُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الجِلالِ وَالإِكْرَامِ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، اَللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الجَدُّ»
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা আনতাস্সালামু ওয়া মিনকাস্ সালামু তাবারাকতা ইয়া যাল্জালালি ওয়াল ইকরাম, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইইন ক্বাদীর। আল্লাহুম্মা লা মানিয়া’ লিমা আ’তাইতা, ওয়া লা মু’তিয়া লিমা মানা‘তা, লা ইয়ানফাউ যালজাদ্দি মিনকালজাদ্দু”।
“হে আল্লাহ! আপনি শান্তিময়, আপনার কাছ থেকেই শান্তি আসে। আপনি বরকতময় হে প্রতাপশালী সম্মানের অধিকারী! আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই। তিনি একক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই। তাঁরই বিশাল রাজ্য এবং তাঁরই সমস্ত প্রশংসা। আর তিনিই সমস্ত কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! আপনি যা দান করতে চান তা কেউ রোধ করতে পারে না। আপনার শাস্তি হতে কোনো ধনীকে তার ধন রক্ষা করতে পারে না”।
তারপর ৩৩ বার করে আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা, প্রশংসা বর্ণনা এবং তাকবীর পড়বে। অর্থাৎ ৩৩ বার سُبْحَانَ الله (সুবহানাল্লাহ), ৩৩ বার اَلحَمْدُ لِلَّهِ (আলহামদুলিল্লাহ) এবং ৩৩ বার اَللهُ أَكْبَرْ (আল্লাহু আকবার) পড়বে। সবগুলো মিলে ৯৯ বার হবে অতঃপর একশত পূর্ণ করার জন্য বলবে,
«لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ»
উচ্চারণ: “লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইইন ক্বাদীর”।
“আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই। তিনি একক তাঁর কোনো অংশীদার নেই। তাঁর বিশাল রাজ্য এবং সমস্ত প্রশংসা। আর তিনিই যাবতীয় বস্তুর ওপর শক্তিমান”।
তারপর “আয়াতুল্ কুরসী”, قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ “কুল হুয়াল্লাহু আহাদ”, قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ “কুল আউযুবি রব্বিল ফালাক”, قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ “কুল আউযুবি রব্বিন নাস” পড়বে।
কুলহু আল্লাহু আহাদ, ফালাক, নাস এই তিনটি সূরা ফজর ও মাগরিবের সালাতের পর তিন বার করে পড়া মুস্তাহাব।
উল্লিখিত যিকির ছাড়া ফজর ও মাগরিবের পর এই দো‘আ দশবার পড়া মুস্তাহাব।
«لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِ وَ يُمِيْتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ»
উচ্চারণ: “লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ইউহয়ী ওয়া ইয়ুমীতু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইইন ক্বাদীর”।
“আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই। তিনি একক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই। তাঁরই রাজত্ব এবং তাঁরই সমস্ত প্রশংসা। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। আর তিনিই সকল বস্তুর ওপর শক্তিমান”।
এ সমস্ত যিকির ফরয নয়, সুন্নাত।
সুন্নাত সালাত
সফর ছাড়া বাড়ীতে অবস্থান কালে বারো রাকাত সুন্নাত সালাত নিয়মিত আদায় করা সকল মুসলিম নর নারীর জন্য মুস্তাহাব। আর তা হলো যোহরের পূর্বে চার রাকাত ও পরে দু’রাকাত। মাগরিবের পরে দু’রাকাত। এশার পর দু’ রাকাত ও ফজরের আগে দু’রাকাত।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর অবস্থায় যোহর, মাগরিব ও এশার সুন্নাত ছেড়ে দিতেন। তবে ফজরের সুন্নাত ও বিতরের সালাত সফর অবস্থায়ও নিয়মিত আদায় করতেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ﴾ [الاحزاب: ٢١]
“নিশ্চয় আল্লাহর রাসূলের জীবনে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদশ।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ২১]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صَلُّوا كَما رَأَيْتُمُوني أُصَلِّي»
“তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত পড়তে দেখেছ ঠিক সেভাবে সালাত পড়”।[9]
আল্লাহই তাওফীক দাতা।
وصلى الله على نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين.
আমীন
সংক্ষিপ্ত ও সাবলীলভাবে লিখিত এ বইটি সালাত শিক্ষা বিষয়ে একটি চমৎকার রচনা। বিস্তারিত মাসআলা-মাসায়েলের আলোচনায় না গিয়ে সহজ-সরলভাবে সালাত সংক্রান্ত সকল তথ্যই স্থান পেয়েছে এ বইটিতে। আশা করি সবাই এর দ্বারা উপকৃত হবেন।
Source: Islamhouse.com
"সালাত শিক্ষা"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
সুন্দর স্বাবলম্বী ভাষায় কমেন্ট করার অনুরোধ রইলো.....