ইসলামে বিয়ের দুনিয়া ও পরকালীন গুরুত্ব এবং উপকারিতা
ইসলামে বিয়ে একটি ইবাদত। এই ইবাদত অনেক ক্ষেত্রে ওয়াজিব এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুন্নত। কিছু কিছু অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিয়ে করা জরুরি নয়।
তবে কোন অবস্থায় বিয়ে করা ওয়াজিব বা সুন্নত আবার কোন অবস্থায় বিয়ে করা জরুরি বা জরুরি নয় এই নিয়ে আমার আজকের লেখা নয়। বরং আজকের লেখা মূলত বিয়ে করার গুরুত্ব এবং উপকারিতা নিয়ে।
উপকারিতা এবং গুরুত্ব দুটি বিষয় ইসলামের আওতার মধ্য থেকে আলোচনা করা হবে। অর্থ্যৎ দুনিয়ার কোন বিজ্ঞান বা চিকিৎসার আলোকে নয় বরং ইসলামের আলোকে আজকে বিয়ের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করবো।
ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব
বিয়ে কি
একজন নারী এবং পুরুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক প্রণয়নের লক্ষ্যে ইসলামি বিধান মোতাবেক দুইজন মুসলিম সাক্ষীর উপস্থিতিতে পরস্পরের দৃঢ় চুক্তিকে বিবাহ বলে।
You can read also
বিয়ের গুরুত্ব
বিয়ের গুরুত্বের ব্যাপারে অসংখ্য কুরআনের আয়াত এবং হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সংক্ষেপে যদি বলি তাহলে বিয়ের ব্যাপারের যেসব বিষয় উঠে আসে তা হল:
- বিবাহ একটি অসম্পূর্ণ মানুষকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলে, যেমন আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন।
- পরিবার গঠনের জন্য।
- আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রেখে যাওয়া সুন্নাহ।
- বিয়ে শান্তি এবং নিরাপত্তা প্রদান করে।
- বিয়ে শুধু মাত্র দুই ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্কের বন্ধন নয় বরং দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের বন্ধন।
- বিয়ে ভালবাসা এবং সুখের অন্যতম একটি উৎস।
এবার চলুন বিয়ের ব্যাপারে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর কিছু হাদিসের দিকে চোখ রাখা যাক:
হজরত আবুনাজি রা: থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লালাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বিয়ের সামর্থ্য রাখে অথচ বিয়ে করে না তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই ।[১]
হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন কোনো বান্দা বিয়ে করলো তখন তার দীনদারির [ধর্মপালনের] অর্ধেক পূর্ণ করলো। এখন বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় পাওয়া প্রয়োজন।[১]
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে যুবকগণ! তোমাদের মধ্যে যে স্ত্রীর ভরণ-পোষণ দানে সক্ষম তার বিয়ে করে নেয়া উচিত। কেননা বিয়ে দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জা স্থান পবিত্র রাখে।
আর যে ভরণ-পোষণ দানে সক্ষম নয় সে যেনও রোজা রাখে । কেননা রোজা তার জন্য পৌরব হীনতার মতো [উত্তেজনা প্রশমিত করে]।[২]
বিয়ের জাগতিক ও পরকালীন উপকারিতা
১. প্রশান্তি বা পার্থিব চিন্তামুক্ত থাকা
হজরত আবুনাজি রা: থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুখাপেক্ষী! মুখাপেক্ষী! ওই পুরুষ যার স্ত্রী নেই। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করেন, যদি তার অনেক সম্পদ থাকে তবুও কি সে মুখাপেক্ষী? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদিও তার অনেক সম্পদ থাকে তবুও সে মুখাপেক্ষী। তিনি আরও বলেন, মুখাপেক্ষী! মুখাপেক্ষী! ওই নারী যার স্বামী নেই। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করেন, যদি তার অনেক সম্পদ থাকে তবুও কি সে মুখাপেক্ষী? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যদিও তার অনেক সম্পদ থাকে তবুও সে মুখাপেক্ষী।[৩]
কেননা সম্পদের উপকারিতা, প্রশান্তি বা পার্থিব চিন্তামুক্ত থাকা সেই পুরুষের ভাগ্যে জুটে না যার স্ত্রী নেই। সে নারীর ভাগ্যেও জুটে না যার স্বামী নেই। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, বিয়েতে জাগতিক ও পরকালীন অনেক বড় উপকার রয়েছে।[৪]
বিয়ের মাধ্যমে যেহেতু একজন নারী এবং পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয় আর এর মধ্যে দিয়ে একজন আর একজনের অর্ধাঙ্গ হিসাবে রূপ লাভ করে তাই স্বভাবতই দায়িত্ব দুইজনের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়।
২. বিয়ে আল্লাহর বিশেষ দান বা উপহার
বিষণ্ণতা, দুঃশ্চন্তা ও নানা কর্মব্যস্ততার মাঝে স্ত্রী শান্তি ও স্বস্তির মাধ্যম। মানুষ প্রাকৃতিক ভাবেই ভালোবাসা ও বন্ধুত্বরে অনুরাগী । স্ত্রীর সঙ্গে মানুষের বিরল ও আশ্চর্য ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়! বিয়ে ছাড়া জীবনের কোন লক্ষ্য থাকতো না এবং মানবজাতির তার স্বকীয়তা হারাতো। অনাচার আর ব্যভিচার হতো মানুষের নৃত্য সঙ্গী ফলে সমাজে কোন শান্তি ও ন্যয়বিচার থাকতো না।
৩.মন্দ চিন্তা, অস্থিরতা ও পাপ থেকে দূরে রাখে
বিয়ের মাধ্যমে জৈবিক চাহিদা পূরণ করলে মানুষের অন্তরে প্রকৃত ভালোবাসা ও পবিত্র চিন্তা-চেতনা তৈরি হয় । আর অবৈধভাবে পূরণ করা হলে তা মানুষকে অপবিত্র জীবনের প্রতি নিয়ে যায়। অন্তরে নোংরা চিন্তা ও কল্পনা সৃষ্টি করে । সুতরাং বিয়ে পবিত্র জীবনের অনুগামী করে এবং নোংরা জীবন থেকে ফিরিয়ে রাখে।[৫] তবে বলে রাখা ভাল পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়লা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন বিয়ের উদ্দেশ্য কেবল যৌন চাহিদা মেটানো নয় বরং পবিত্রতা রক্ষা করা।
৪. পুণ্য অর্জন
ইবাদত বলেই ধর্মবেত্তা মনীষীগণ ধর্মীয় শিক্ষাগ্রহণ করা, অন্যকে ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া এবং নীরবে আল্লাহর ইবাদত করার চেয়ে উত্তম বলেছেন।[৬] বিয়ে রাসূল সা: এর সুন্নাত যা ইতোপূর্বে বলা হয়েছে।
৫. একে অপরের কল্যাণকামী হয়
হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, নারীকে বিয়ে করো সে তোমার জন্য সম্পদ টেনে আনবে।
এখানে সম্পদ টেনে আনার উদ্দেশ্য হলো, স্বামী-স্ত্রী দু’জনই জ্ঞানসম্পন্ন এবং একে অপরের কল্যাণকামী হয়ে থাকে। স্বামী এ কথা স্মরণ রাখে- আমার দায়িত্বে খরচ বেড়ে গেছে তখন বেশি-বেশি উপার্জন করার চেষ্টা করে। নারীও এমন কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করে যা পুরুষ গ্রহণ করতে পারে না। ফলে তারা প্রশান্তি ও চিন্তামুক্ত হতে পারে। আর সম্পদের মুল উদ্দেশ্যই এটি।[৭]
মেয়েরা সমষ্টিগতভাবে দুর্বল। সন্তান প্রতিপালন, গৃহ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বশীল ও সবকাজের শ্রেষ্ঠ সহযোগী । ফলে তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে স্ত্রী ইজ্জত, সম্মান, সম্পদ ও সন্তান সংরক্ষণকারী ও এর পরিচালক। স্বামীর অনুপস্থিতিতে সে তার সম্পদ, সম্মান ও দীনের সংরক্ষণ করে।
৬. সন্তান, বংশ ও মুসলমান বৃদ্ধি
হজরত মাকাল ইবনে ইয়াসার রা: থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা অধিক সন্তান প্রসবকারী নারীকে বিয়ে করো। কেননা আমি তোমাদের অধিক্যতা দ্বারা অন্যান্য উম্মতের উপর গর্ব করবো যে, আমার উম্মত এতো বেশি![৮]
শেষ কথা
বিবাহিত ব্যক্তি অধিক উপার্জনের চিন্তা করে, অযথা কাজ করে না; তার মধ্যে ভালোবাসা, লজ্জা, আনুগত্য সৃষ্টি হয়। মানুষ সমৃদ্ধ ও সুস্থ জীবনযাপন করে | বিয়ে মানবসভ্যতার জন্য আল্লাহর অনন্য উপহার।
সূত্র:
১. তারগিব
২. মেশকাত, ইমদাদুল ফতোয়া: খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৫৮
৩. রাজিন
৪. হায়াতুল মুসলিমিন; পৃষ্ঠা: ১৮৭
৫. আল মাসালিহুল আকলিয়্যাঃ পৃষ্ঠা: ১৯২
৬. ফতোয়ায়ে শামি, ইমদাদুল ফতোয়া
৭. হায়াতুল মুসলিমিন
৮. আবুদাউদ, নাসায়ি, হায়াতুল মুসলিমিন: পৃষ্ঠা: ১৮৯
Related Posts
- নারী পুরুষের অবৈধ সম্পর্ক full part শাইখ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ
- স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব | ড. আবুল কালাম আজাদ বাশার by abul kalam azad bashar
- স্বামীর ভালবাসা অর্জনের উপায়
- যে ভুলের কারণে নেককার সন্তান কম হয় ( কারণটা কি ? ) । Golam Sarwar Saide
- Shami Strir Odhikar | Tariq Munawar | Sreejon Audio Visual Center | Bangla New Waz 2018
- ইসলাম কি নারীদেরকে যৌন অধিকার দিয়েছে?
"ইসলামে বিয়ের দুনিয়া ও পরকালীন গুরুত্ব এবং উপকারিতা"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
সুন্দর স্বাবলম্বী ভাষায় কমেন্ট করার অনুরোধ রইলো.....