মসজিদ ও নামায পড়ার জায়গা সম্পর্কিত
মহানবী (সাঃ) বলেন, “---আর সারা পৃথিবীকে আমার জন্য মসজিদ (নামাযের জায়গা) এবং পবিত্রতার উপকরণ বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তির নিকট যে কোন স্থানে নামাযের সময় এসে উপস্থিত হবে , সে যেন সেখানেই নামায পড়ে নেয়।” (বুখারী ৪৩৮নং, মুসলিম প্রমুখ)
কবরস্থান ও গোসলখানা ছাড়া সারা পৃথিবীর (সমস্ত জায়গাই) মসজিদ (নামায ও সিজদার স্থান)। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, দারেমী, সুনান, মিশকাত ৭৩৭নং)
একদা আবূ যার (রাঃ) মহানবী (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোন্ মসজিদ স্থাপিত হয়? উত্তরে তিনি বললেন, “হারাম (কা’বার) মসজিদ।” আবূ যার বললেন, তারপর কোন্টি? তিনি বললেন, “তারপর মসজিদুল আকসা।” আবূ যার বললেন, দুই মসজিদ স্থাপনের মাঝে ব্যবধান কত ছিল? তিনি বললেন, “চল্লিশ বছর। আর শোন, সারা পৃথিবী তোমার জন্য মসজিদ। সুতরাং যেখানেই নামাযের সময় এসে উপস্থিত হবে, সেখানেই নামায পড়ে নেবে।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৭৫৩নং)
নির্মিত গৃহ্ মসজিদ ছাড়া অন্য স্থানেও নামায পড়ার বৈধতা উম্মতে মুহাম্মাদিয়ার জন্য এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য।
মসজিদের মাহাত্ম
মহান আল্লাহ বলেন, وأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلّه অর্থাৎ, আর মসজিদসমূহ আল্লাহর।(কুরআন মাজীদ ৭২/১৮)
মহানবী (সাঃ) বলেন, “আল্লাহর নিকট পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতম স্থান হল মসজিদ এবং সবচেয়ে নিকৃষ্টতম স্থান হল বাজার।” (মুসলিম, মিশকাত ৬৯৬নং)
মাহাত্মপূর্ণ চারটি মসজিদ
মহানবী (সাঃ) বলেন, “তিনটি মসজিদ ছাড়া আর কোন স্থান যিয়ারতের জন্য সফর করা যাবে না; মসজিদুল হারাম, মসজিদুল আকসা ও আমার এই মসজিদ (নববী)।” (বুখারী,মুসলিম, সহীহ মিশকাত ৬৯৩)
তিনি বলেন, “মসজিদুল হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদের তুলনায় আমার এই মসজিদে (নববীতে) একটি নামায হাজার নামায অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৬৯২নং)
“আর অন্যান্য মসজিদের তুলনায় মসজিদুল হারামের একটি নামায এক লক্ষ নামায অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।” (আহমাদ, মুসনাদ, বায়হাকী, জামে ৩৮৩৮, ৩৮৪১ নং)
প্রকাশ যে, এই ফযীলত মহিলাদের জন্য নয়। কারণ, তাদের জন্য স্বগৃহে নামায পড়াই উত্তম। যেমন নফল বা সুন্নত নামাযেও উক্ত সওয়াব নেই, কেননা, সুন্নত বা নফল নামায ঘরে পড়াই আফযল। অথবা মক্কা ও মদ্বীনার মহিলাদের জন্য তাদের স্বগৃহে এবং ঐ স্থানদ্বয়ে সুন্নত ও নফল নামায ঘরে পড়ার ফযীলত আরো অধিক। অল্লাহু আ’লাম।
মসজিদে নববীর একটি বিশেষ জায়গার কথা উল্লেখ করে মহানবী বলেন, “আমার গৃহ্ ও (আমার মসজিদের) মিম্বরের মাঝে বেহেশ্তের এক বাগান রয়েছে। আর আমার মিম্বর রয়েছে আমার হওযের উপর।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৬৯৪নং)
কুবার মসজিদ সম্বন্ধে মহানবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি স্বগৃহে ওযু বানিয়ে কুবার মসজিদে এসে কোন নামায পড়ে, তার একটি উমরাহ্ করার সমান সওয়াব লাভ হয়।” (আহমাদ, মুসনাদ, নাসাঈ, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, বায়হাকী, জামে ৬১৫৪ নং)
প্রথম কিবলা মসজিদুল আকসায় নামায পড়লে ৫০০ বা ১০০০ নামাযের সওয়াবের কথা কোন সহীহ হাদীসে আসে নি। (তামামুল মিন্নাহ্, আলবানী ২৯৩-২৯৪পৃ:) অবশ্য এক বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, হযরত সুলাইমান (আঃ) যখন ঐ মসজিদ নির্মাণ শেষ করেছিলেন, তখন আল্লাহর নিকট দুআ করেছিলেন যে, যে ব্যক্তি কেবলমাত্র নামাযের উদ্দেশ্যেই ঐ মসজিদে উপস্থিত হবে, সে ব্যক্তি যেন ঐ দিনকার মত নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল। (নাসাঈ, সুনান ৬৬৯, ইবনে মাজাহ্, সুনান ১৪০৮ নং)
আর এক বর্ণনা মতে তাতে ২৫০ নামাযের সওয়াব আছে। মহানবী (সাঃ) বলেন, “বায়তুল মাকদিস অপেক্ষা আমার এই মসজিদে নামায চারগুণ উত্তম। আর তা হল শ্রেষ্ঠ নামাযের স্থান।” (হাকেম, মুস্তাদরাক ৪/৫০৯, বায়হাকী শুআবুল ঈমান, ত্বা, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ৬/২/৯৫৪)
মসজিদ নির্মাণের ফযীলত
আল্লাহর নবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর (সন্তুষ্টি লাভের) উদ্দেশ্যে একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেয়, আল্লাহ তার জন্য বেহেশ্তে একটি ঘর বানিয়ে দেন।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৬৯৭নং)
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পাখির বাসার মত অথবা তার চেয়েও ছোট আকারের একটি মসজিদ বানিয়ে দেয়, আল্লাহ তার জন্য বেহেশ্তে একটি গৃহ্ নির্মাণ করে দেন।” (ইবনে মাজাহ্, সুনান, জামে ৬১২৮ নং)
“যে ব্যক্তি তিতির পাখীর (পোকামাকড় খোঁজার উদ্দেশ্যে) আঁচড়ানো স্থান পরিমাণ আয়তনের অথবা তদপেক্ষা ছোট আকারের মসজিদ নির্মাণ করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ্ নির্মাণ করবেন।” (ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, সহিহ তারগিব ২৬৫নং)
আর মহান আল্লাহ বলেন,
في بُيُوْتٍ أَذِنَ اللهُ أَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهُ يُسَبِّحُ لَهُ فِيْهَا بِالْغُدُوِّ وَالآصَال رِجَالٌ لاَّ تُلْهِيْهُمْ تِجَارَةً وَّلاَ بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَإِقَامِ الصَّلاَةِ وَإِيْتَاءِ الزَّكَاةِ يَخَافُوْنَ يَوْماً تَتَقَلَّبُ فِيْهِ الْقُلُوْبُ وَالأَبْصَار
অর্থাৎ, আল্লাহ যে সব গৃহ্কে (মর্যাদায়) উন্নীত করার এবং সেগুলোতে তাঁর নাম স্মরণ করার আদেশ দিয়েছেন, সেখানে সকাল-সন্ধায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এমন লোকেরা; যাদেরকে ব্যবসা-বানিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ, নামায কায়েম এবং যাকাত প্রদান করা হতে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ ভীতি-বিহ্বল হয়ে পড়বে। (কুরআন মাজীদ ২৪/৩৬-৩৭)
মসজিদে যাওয়ার মাহাত্ম
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি সকাল অথবা সন্ধ্যায় মসজিদে যায়, তার জন্য আল্লাহ মেহ্মানীর উপকরণ প্রস্তুত করেন। যখনই সে সেখানে যায়, তখনই তার জন্য ঐ মেহ্মানীর উপকরণ প্রস্তুত করা হয়।” (বুখারী ৬৬২, মুসলিম, সহীহ ৬৬৯নং)
আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, “পুরুষের স্বগৃহে বা তার ব্যবসাক্ষেত্রে নামায পড়ার চেয়ে (মসজিদে) জামাআতে শামিল হয়ে নামায পড়ার সওয়াব পঁচিশ গুণ বেশি। কেননা, সে যখন সুন্দরভাবে ওযু করে কেবল মাত্র নামায পড়ার উদ্দেশ্যেই মসজিদের পথে বের হয় তখন চলামাত্র প্রত্যেক পদক্ষেপের বিনিময়ে তাকে এক-একটি মর্যাদায় উন্নীত করা হয় এবং তার এক-একটি গুনাহ মোচন করা হয়। অতঃপর নামায আদায় সম্পন্ন করে যতক্ষণ সে নামাযের স্থানে বসে থাকে ততক্ষণ ফিরিশতাবর্গ তার জন্য দুআ করতে থাকে; ‘হে আল্লাহ ওর প্রতি করুণা বর্ষণ কর। হে আল্লাহ! ওকে ক্ষমা কর। আর সে ব্যক্তি যতক্ষণ নামাযের অপেক্ষা করে ততক্ষণ যেন নামাযের অবস্থাতেই থাকে।” (বুখারী ৬৪৭নং, মুসলিম, সহীহ ৬৪৯নং, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান)
তিনি বলেন, “অন্ধকারে অধিকাধিক মসজিদের পথে যাতায়াতকারীদেরকে কিয়ামত দিবসের পরিপূর্ণ জ্যোতির সুসংবাদ দাও।” (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, সহিহ তারগিব ৩১০নং)
তিনি আরো বলেন “যে ব্যক্তি কোন ফরয নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে স্বগৃহে থেকে ওযু করে (মসজিদের দিকে) বের হয় সেই ব্যক্তির সওয়াব হয় ইহ্রাম বাঁধাহাজীর ন্যায়। আর যে ব্যক্তি কেবলমাত্র চাশতের নামায পড়ার উদ্দেশ্যেই বের হয়, তার সওয়াব হয় উমরাকারীর সমান। এক নামাযের পর অপর নামায; যে দুয়ের মাঝে কোন অসার (পার্থিব) ক্রিয়াকলাপ না থাকে তা এমন আমল যা ইল্লিয়্যীনে (সৎলোকের সৎকর্মাদি লিপিবদ্ধ করার নিবন্ধ গ্রন্থে) লিপিবদ্ধ করা হয়।” (আবূদাঊদ, সুনান, সহিহ তারগিব ৩১৫নং)
“তিন ব্যক্তি আল্লাহর যামানতে; এদের মধ্যে একজন হল সেই ব্যক্তি যে মসজিদে যায়। মরণ পর্যন্ত সে আল্লাহর যামানতে থাকে। অতঃপর তিনি তাকে বেহেশ্তে প্রবেশ করান। অথবা তাকে তার প্রাপ্ত সওয়াব ও নেকীর সাথে (তার বাড়ি) ফিরিয়ে দেন।” (আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত ৭২৭নং)
“নামাযে সওয়াবের দিক থেকে সবচেয়ে বড় সেই ব্যক্তি, যার (বাড়ি থেকে মসজিদের দিকে) চলার পথ সবচেয়ে দূরের।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৬৯৯নং)
মসজিদে নববীর আশেপাশে কিছু জায়গা খালি পড়েছিল। বনী সালেমাহ্ মসজিদের পাশে (ঐ খালি জায়গায়) ঘর বানাবার ইচ্ছা করল। এ খবর আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর নিকট পৌঁছলে তিনি তাদেরকে বললেন, “আমি শুনলাম যে, তোমরা তোমাদের পূর্বের ঘর-বাড়ি ছেড়ে মসজিদের পাশে এসে বসবাস করতে চাচ্ছ।” তারা বলল, ‘হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! এ রকমই ইচ্ছা আমরা করেছি।’ তিনি বললেন, “হে বনী সালেমাহ্! তোমরা তোমাদের ঐ বাড়িতেই থাক। (দূর হলেও, মসজিদ আসার ফলে) তোমাদের পায়ের চিহ্ন (তোমাদের নেকীর খাতায়) লিপিবদ্ধ করা হবে।” এরুপ তিনি দু’বার বললেন। (মুসলিম, মিশকাত ৭০০নং)
মসজিদের প্রতি আসক্তি ও তথায় অবস্থানের ফযীলত
মহান আল্লাহ বলেন,
إِنّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهِ مَنْ آمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَأَقَامَ الصَّلاَةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلاَّ اللهَ، فَعَسَى أُولئِكَ أَنْ يَّكُوْنُوْا مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ
অর্থাৎ, নি:সন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে, যারা আল্লাহতে ও পরকালে ঈমান রাখে, নামায কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে, আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। আশা করা যায়, তারা সৎপথপ্রাপ্তদের দলভুক্ত হবে। (কুরআন মাজীদ ৯/১৮)
আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, “আল্লাহ তাআলা সাত ব্যক্তিকে সেই দিনে তাঁর (আরশের) ছায়া দান করবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না; (তারা হল,)
১। ন্যায় পরায়ণ বাদশাহ্ (রাষ্ট্রনেতা),
২। সেই যুবক যার যৌবন আল্লাহ আযযা অজাল্লার ইবাদতে অতিবাহিত হয়, সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদ সমূহের সাথে লটকে থাকে (মসজিদের প্রতি তার মন সদা আকৃষ্ট থাকে।)
৩। সেই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা স্থাপন করে; যারা এই ভালোবাসার উপর মিলিত হয় এবং এই ভালোবাসার উপরেই চিরবিচ্ছিন্ন (তাদের মৃত্যু) হয়।
৪। সেই ব্যক্তি যাকে কোন কুলকামিনী সুন্দরী (অবৈধ যৌন-মিলনের উদ্দেশ্যে) আহ্বান করে কিন্তু সে বলে, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি।
৫। সেই ব্যক্তি যে দান করে গোপন করে; এমনকি তার ডানহাত যা প্রদান করে তা তার বাম হাত পর্যন্তুও জানতে পারে না। আর সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার উভয় চোখে পানি বয়ে যায়।”
(বুখারী ৬৬০নং, মুসলিম, সহীহ ১০৩১নং)
“কোন ব্যক্তি যখন যিক্র ও নামাযের জন্য মসজিদে অবস্থান করা শুরু করে তখনই আল্লাহ তাআলা তাকে নিয়ে সেইরুপ খুশী হন যেরুপ প্রবাসী ব্যক্তি ফিরে এলে তাকে নিয়ে তার বাড়ির লোক খুশী হয়।” (ইআশা:, ইবনে মাজাহ্, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ,হাকেম, মুস্তাদরাক, সহিহ তারগিব ৩২২নং)
“মসজিদ প্রত্যেক পরহেযগার (ধর্মভীরু) ব্যক্তির ঘর। আর যে ব্যক্তির ঘর মসজিদ সেই ব্যক্তির জন্য আল্লাহ আরাম, করুণা এবং তার সন্তুষ্টি ও জান্নাতের প্রতি পুলসিরাত অতিক্রম করে যাওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন।” (ত্বাবারানী, মু’জাম কাবীর ও আওসাত্ব, বাযযার, সহিহ তারগিব ৩২৫ নং)
“যখন তোমাদের মধ্যে কেউ নিজ ঘরে ওযু করে মসজিদে আসে, তখন ঘরে না ফিরা পর্যন্ত সে নামাযেই থাকে। সুতরাং সে যেন হাতের আঙ্গুলগুলোর মাঝে খাঁজাখাঁজি না করে।” (হাকেম, মুস্তাদরাক, মিশকাত ৯৯৪, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১২৯৪নং)
“যে ব্যক্তি ওযু করে মসজিদে আসে, সে ব্যক্তি আল্লাহর মেহ্মান। আর মেজবানের দায়িত্ব হল, মেহ্মানের খাতির করা।” (সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১১৬৯ নং)
খেয়াল রাখার কথা যে, ই’তিকাফে বসা ছাড়া অন্যান্য দিনে মসজিদের মধ্যে নামাযের জন্য কোন এক কোণ বা স্থানকে নির্দিষ্ট করা বৈধ নয়। কারণ, মহানবী (সাঃ) নিষেধ করেছেন কাকের দানা খাওয়ার মত (ঠকঠক করে) নামায পড়তে, নামাযে হিংস্র জন্তুদের মত হাত বিছিয়ে বসতে এবং উট যেমন একই স্থানকে নিজের জায়গা বানিয়ে নেয়, তেমনি মসজিদে নির্দিষ্ট জায়গা বানাতে। (আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, দারেমী, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ,হাকেম, মুস্তাদরাক, আহমাদ, মুসনাদ, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১১৬৮নং)
মসজিদ যাওয়ার আদব
পূর্বে উল্লেখিত একহাদীসে এসেছে যে, ওযু করে মসজিদ যাওয়ার সময়ও আঙ্গুলসমূহের মাঝে খাঁজাখাঁজি করা নিষিদ্ধ। অনুরুপ এই সময় পথে ইকামত শুনলেও তাড়াহুড়ো করে বা ছুটাছুটি করে দৌড়ে যাওয়া বৈধ নয়। যেহেতু মহানবী (সাঃ) বলেন, “তোমরা ধীর ও শান্তভাবে (মসজিদে বা জামাআতে) যাও। ইমামের সঙ্গে নামাযের যতটুকু অংশ পাও ততটুকু পড়ে নাও এবং যেটুকু অংশ ছুটে যায় তা একাকী পূর্ণ করে নাও।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৬৮৬ নং)
মসজিদ যাওয়ার সময় পথে নিম্নের দুআ পড়তে হয়:-
اَللّهُمَّ اجْعَلْ فِيْ قَلْبِيْ نُوْراً وَّ فِيْ لِسَانِيْ نُوْراً وَّ اجْعَلْ فِيْ سَمْعِيْ نُوْراً وَّ اجْعَلْ فِيْ بَصَرِيْ نُوْراً وَّاجْعَلْ مِنْ خَلْفِيْ نُوْراً ، وَّ مِنْ أَمَامِيْ نُوْراً، وَّاجْعَلْ مِنْ فَوْقِيْ نُوْراً وَ مِنْ تَحْتِيْ نُوْراً،
اَللّهُمَّ أَعْطِنِيْ نُوْراً।
উচ্চারণ- আল্লাহুম্মাজ্আল ফী ক্বালবী নূরা, অফী লিসানী নূরা, অজ্আল ফী সাময়ী নূরা,অজ্আল ফী বাস্বারী নূরা, অজ্আল মিন খালফী নূরা, অমিন আমা-মী নূরা, অজ্আল মিন ফাউক্বী নূরা, অমিন তাহ্তী নূরা, আল্লাহুম্মা আ’তিনী নূরা।
অর্থ- হে আল্লাহ! আমার হৃদয়, রসনা, কর্ণ, চক্ষু, পশ্চাত, সম্মুখ, ঊর্ধ্ব ও নিম্নে জ্যোতি প্রদান কর। হে আল্লাহ! আমাকে নূর (জ্যোতি) দান কর। (বুখারী ৬৩১৬, মুসলিম, সহীহ ৭৬৩ নং)
মসজিদে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার সময় দুআ
মহানবী (সাঃ) যখন মসজিদ প্রবেশ করতেন, তখন ‘বিসমিল্লাহ্’ বলতেন এবং নিজের উপর দরুদ ও সালাম পড়তেন। অনুরুপ বের হওয়ার সময়ও পড়তেন। (ইবনে মাজাহ্, সুনান ৭৭১নং)
তিনি এই সময় নিম্নের দুআও পড়তেন,
أَعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْمِ، وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ، وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ، مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ।
উচ্চারণ:- আঊযু বিল্লা-হিল আযীম, অবিঅজ্হিহিল কারীম, অ সুলত্বা-নিহিল ক্বাদীম, মিনাশ শায়ত্বা-নির রাজীম।
অর্থ- আমি মহিমময় আল্লাহর নিকট এবং তার সম্মানিত চেহারা ও তাঁর প্রাচীন পরাক্রমের অসীলায় বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
এই দুআ পড়ে মসজিদ প্রবেশ করলে শয়তান বলে, ‘সারা দিন ও আমার অনিষ্ট থেকে নিরাপত্তা লাভ করল।’ (আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত ৭৪৯ নং)
(بِسْمِ الله)، وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلى رَسُوْلِ الله، اَللّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِك।
উচ্চারণ- বিসমিল্লা-হ্, অসসালা-তু অসসালা-মু আলা রাসূলিল্লা-হ্, আল্লা-হুম্মাফ্ তাহ্লী আবওয়া-বা রাহ্মাতিক।
অর্থ- আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করছি, সালাম ও দরুদ বর্ষিত হোক আল্লাহর রসূলের উপর। হে আল্লাহ! আমার জন্য তুমি তোমার করুণার দুয়ার খুলে দাও।(জামে১/৫২৮,মুসলিম, সহীহ১/৪৯৪,ইবনুস সুন্নী ৮৮)
বের হওয়ার সময় বলতেন,
(بِسْمِ الله)، وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلى رَسُوْلِ الله، اللّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ।
‘বিসমিল্লাহ্’ ও দরুদের পর এ দুআও পড়া যায়,
اَللّهُمَّ اعْصِمْنِيْ مِنَ الشَّيْطَان।
উচ্চারণ:- আল্লাহুম্মা’সিমনী মিনাশ শাইত্বান।
অর্থ:- হে আল্লাহ! আমাকে শয়তান থেকে রক্ষা কর। (নাসাঈ, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, বায়হাকী, ইবনে হিব্বান, সহীহ, জামে ৫১৪নং)
আনাস (রাঃ) বলেন, ‘এক সুন্নাহ্ (নবী (সাঃ) এর তরীকা) এই যে, যখন তুমি মসজিদ প্রবেশ করবে, তখন ডান পা আগে বাড়াবে এবং যখন মসজিদ থেকে বের হবে, তখন বাম পা আগে বাড়াবে।’ (হাকেম, মুস্তাদরাক ১/২১৮)
তাহিয়্যাতুল মাসজিদ নামায
তাহিয়্যাতুল মাসজিদ বা মসজিদ সেলামীর নামায (২ রাক্আত) মসজিদ প্রবেশ করার পর বসার পূর্বেই পড়তে হয়। এর জন্য কোন সময়-অসময় নেই। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, “তোমাদের মধ্যে যে কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন সে যেন বসার পূর্বে ২ রাক্আত নামায পড়ে নেয়।” অন্য এক বর্ণনায় আছে, “সে যেন ২ রাক্আত নামায পড়ার পূর্বে না বসে।” (বুখারী, মুসলিম, সহীহ প্রমুখ ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৪৬৭নং)
এই দুই রাকআত নামায বড় গুরুত্বপূর্ণ। তাই তো জুমআর দিনে খুতবা চলাকালীন সময়েও মসজিদে এলে হাল্কা করে তা পড়ে নিতে হয়। (মুসলিম, মিশকাত ১৪১১নং)
আযান চলাকালে মসজিদ প্রবেশ করলে না বসে আযানের জওয়াব দিয়ে শেষ করে তারপর ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ পড়তে হবে। তবে জুমআর দিন খুতবার আযান হলে জওয়াব না দিয়ে ঐ ২ রাকআত নামায আযান চলা অবস্থায় পড়ে নিতে হবে। যেহেতু খুতবা শোনা আরো জরুরী। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩৩৫)
মসজিদে প্রবেশ করে সুন্নাতে মুআক্কাদাহ পড়তে হলে ঐ নামায আর পড়তে হয় না। কারণ, তখন এই সুন্নতই ওর স্থলাভিষিক্ত ও যথেষ্ট হয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৬৭, লিকাউবাবিল মাফতূহ্, ইবনে উসাইমীন ৫৩/৬৯)
যেমন হারামের মসজিদে প্রবেশ করে (বিশেষ করে মুহ্রিমের জন্য) ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ হল তওয়াফ; ২ রাকআত সুন্নত নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৬/২৬৪-২৬৫)
মসজিদ হবে পবিত্র ও সুগন্ধময়
মসজিদ আল্লাহর ঘর। ইবাদতের জায়গা। তা হবে পবিত্র ও সুগন্ধময়। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাঃ) মহ্ল্লায় মসজিদ বানাতে এবং তা পরিষ্কার ও সুগন্ধময় করে রাখতে আদেশ করেছেন।’ (আবূদাঊদ, সুনান ৪৫৫ নং, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, ইবনে হিব্বান, সহীহ আহমাদ, মুসনাদ)
সামুরাহ্ (রাঃ) নিজের ছেলেকে পত্রে লিখেছিলেন, ‘অতঃপর বলি যে, আল্লাহর রসূল (সাঃ) আমাদেরকে আমাদের মহ্ল্লায় মসজিদ বানাতে, তার তরমীম করতে এবং তা পবিত্র রাখতে আদেশ করতেন।’ (আবূদাঊদ, সুনান ৪৫৬নং)
মহানবী (সাঃ) বলেন, “নিশ্চয়ই এই মসজিদসমূহে কোন প্রকার নোংরা, পেশাব-পায়খানা (ইত্যাদি ময়লা দ্বারা অপবিত্র করা) সঙ্গত নয়। মসজিদ তো কুরআন পাঠ, আল্লাহর যিক্র এবং নামাযের জন্য (বানানো হয়)। (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, জামে ২২৬৮নং) তিনি মসজিদের দরজায় পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। (জামে ৬৮১৩ নং)
মসজিদে থুথু বা কফ্ ফেলা গুনাহর কাজ। থুথু ইত্যাদি নোংরা বস্তু মসজিদ থেকে পরিষ্কার করা সওয়াবের কাজ। (আহমাদ, মুসনাদ, ত্বাবারানী, মু’জাম, জামে ২৮৮৫ নং) যেমন ঋতুমতী মহিলা প্রভৃতি অপবিত্রের জন্য মসজিদে অবস্থান করা বৈধ নয়। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১৪৩১নং)
মহানবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি (কাঁচা) পিঁয়াজ, রসুন বা কুর্রাস খাবে, সে যেন আমাদের মসজিদে আমাদের নিকটবর্তী না হয়। কেননা, যে বস্তু দ্বারা মানুষ কষ্ট পায়, সেই বস্তুতে ফিরিশ্তারাও কষ্ট পেয়ে থাকেন।” (মুসলিম, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, জামে ৬০৮৯ নং)
বলাই বাহুল্য যে, কাঁচা পিঁয়াজ-রসুন অপেক্ষা বিড়ি-সিগারেট, গুল-জর্দা, গালি-তামাক প্রভৃতি মাদকদ্রব্যের দুর্গন্ধ আরো বেশী। সুতরাং তা খেয়েও মসজিদে এসে মুসল্লী তথা আল্লাহর ফিরিশ্তাদেরকে কষ্ট দেওয়া বৈধ নয়। বরং এসব বস্তু খাওয়াইহারাম এবং তা বর্জন করা ওয়াজেব। (আদর্শ পরিবার ও পরিবেশ দ্র:)
মসজিদে যা অবৈধ
১। হারানো জিনিস খোঁজা; মহানবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি কাউকে মসজিদে তার হারানো বস্তু খোঁজ করতে দেখবে, সে ব্যক্তি যেন তাকে বলে, ‘আল্লাহ তোমার জিনিস ফিরিয়ে না দিক।’ কারণ, মসজিদসমূহ এ উদ্দেশ্যে বানানো হয়নি।” (মুসলিম, সহীহ ৫৬৮নং)
২। বেচা-কেনা; মহানবী (সাঃ) বলেন, “যখন তোমরা দেখবে যে, মসজিদে কেউ কিছু বেচা-কেনা করছে, তখন তাকে বলবে যে, ‘আল্লাহ তোমার বেচা-কেনায় লাভ না দিক।” (তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, দারেমী, সুনান, মিশকাত ৭৩৩নং)
৩। অসার, বাজে ও অশ্লীল কবিতা, গজল বা ছড়া পাঠ। আম্র বিন শুআইবের পিতামহ্ বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাঃ) মসজিদে আপোসে কবিতা আবৃতি ও বেচা-কেনা করতে, জুমআর দিন (জুমআর) নামাযের পূর্বে গোল হয়ে বসতে নিষেধ করেছেন। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ৭৩২নং)
অবশ্য বৈধ শ্রেণীর ইসলামী গজল পাঠ নিষিদ্ধ নয়। একদা হাসসান (রাঃ) মসজিদে কবিতা পাঠ করছিলেন। হযরত উমার (রাঃ) প্রতিবাদের দৃষ্টিতে তাঁর প্রতি তাকালে তিনি বললেন, ‘আমি কবিতা পাঠ করতাম, আর তখন মসজিদে আপনার থেকে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি [নবী (সাঃ)] উপস্থিত থাকতেন।’ অতঃপর তিনি আবূ হুরাইরার দিকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘আল্লাহর ওয়াস্তে বলুন, আপনি কি আল্লাহর রসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছেন, “(হে হাসসান! মুশরিকদেরকে) আমার তরফ থেকে (ওদের কবিতার) জবাব দাও। হে আল্লাহ! জিবরীল দ্বারা ওকে সাহায্য কর?” আবূ হুরাইরা বললেন, ‘জী হ্যাঁ, (আমি এ কথা শুনেছি)। (বুখারী ৪৫৩, মুসলিম, সহীহ ২৪৮৫ নং)
৪। হৈ-হাল্লা করা ও উচ্চস্বরে কথা বলা। (বুখারী, মিশকাত ৭৪৪নং) এমন কি কেউ নামায বা কুরআন পড়লে সেখানে সশব্দে কুরআন পাঠও করা যাবে না। একদা মহানবী (সাঃ) দেখলেন, লোকেরা নামাযে জোরে-শোরে কুরআন পাঠ করছে। তিনি বললেন, “মুসল্লী (নামাযী) তো আল্লাহর সাথে চুপিসারে কথা বলে। সুতরাং কি নিয়ে তাঁর সাথে কথা বলছে তা লক্ষ্য করা দরকার। আর তোমরা এমন উচ্চস্বরে কুরআন পড়ো না, যাতে অপরের নামাযে ব্যাঘাত ঘটে।” (আহমাদ, মুসনাদ, মিশকাত ৮৫৬নং)
বলাই বাহুল্য যে, মসজিদের যে প্রতিবেশী অথবা অন্য লোক যে (মাইক, টেপ, রেডিও প্রভৃতির) শব্দ বা গান-বাজনা দ্বারা অথবা কোন রঙ-তামাশা দ্বারা মসজিদের পবিত্রতা-হানি করে এবং মসজিদে অবস্থিত নামাযীদের নামাযে, তেলাঅতে ও আল্লাহর যিক্রে ব্যাঘাত ও বাধা সৃষ্টি করে তার ভয় হওয়া উচিৎ। কারণ, মহান আল্লাহর সাধারণ উক্তি এই যে,
ومَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ مَنَعَ مَسَاجِدَ اللهِ أَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهُ وَسَعى فِيْ خَرَابِهَا أُولئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَنْ يَّدْخُلُوْهَا إِلاَّ خَائِفِيْنَ، لَهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَّلَهُمْ فِي الآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি আল্লাহর মসজিদে তাঁর নাম স্মরণ (যিক্র) করতে বাধা দেয় ও তার ধ্বংস-সাধনে প্রয়াসী হয়, তার চেয়ে বড় যালেম আর কে হতে পারে?” (কুরআন মাজীদ ২/১১৪)
৫। হদ্দ্ (ইসলামী দন্ডবিধি; যেমন মদখোরকে চাবুক মারা, চোরের হাত কাটা, ব্যভিচারীকে কোড়া মারা প্রভৃতি) কায়েম করা। মহানবী (সাঃ) মসজিদে হদ্দ্ কায়েম করতে নিষেধ করেছেন। (হাকেম, মুস্তাদরাক ৪/৩৬৯, আহমাদ, মুসনাদ ৩/৪৩৪, আবূদাঊদ, সুনান ৪৪৯০, মিশকাত ৭৩৪ নং)
উল্লেখ্য যে, আধুনিক যুগের মোবাইল টেলিফোন বা ব্লিফার সঙ্গে নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করার পূর্বে তা বন্ধ করে দেওয়া জরুরী। কারণ, এ সবে যে রিং বা মিউজিকের শব্দ আছে তাতে মসজিদবাসীর ডিষ্টার্ব হয়ে থাকে।
মসজিদে যা করা বৈধ
এমন কতক কাজ আছে, যে সম্বন্ধে ধারণা হওয়া স্বাভাবিক যে, তা মসজিদে করা হয়তো বৈধ নয়। অথচ শরীয়তের দৃষ্টিতে তা বৈধ। যেমন;
১। দ্বীনী কথাবার্তা, বৈধ আলোচনা, প্রয়োজনীয় সাংসারিক কথা। জাবের বিন সামুরাহ্ (রাঃ) বলেন, ‘নবী (সাঃ) ফজরের নামায পড়ে সূর্য না ওঠা পর্যন্ত মুসাল্লা থেকে উঠতেন না। সূর্য উঠে গেলে তিনি উঠে যেতেন। ঐ অবসরে লোকেরা আপোসে কথা বলত। বলতে বলতে তারা ইসলাম-পূর্ব জাহেলিয়াতের কথা শুরু করে দিত। এতে তারা হাসত এবং তিনিও মুচকি হাসতেন।’ (মুসলিম, সহীহ ৬৭০নং)
অবশ্য নিছক দুনিয়াদারীর কথা বলা বৈধ নয়। মহানবী (সাঃ) বলেন, “আখেরী যামানায় এমন এক শ্রেণীর লোক হবে, যারা মসজিদে গোল-বৈঠক করে পার্থিব ও সাংসারিক গল্প-গুজব করবে। সুতরাং তোমরা তাদের সাথে বসো না। কারণ, এমন লোকেদের নিয়ে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।” (ত্বাব, বায়হাকী, মিশকাত ৭৪৩, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১১৬৩ নং)
২। খাওয়া-পান করা। আব্দুল্লাহ বিন হারেস (রাঃ) বলেন, ‘আমরা রসূল (সাঃ) এর আমলে মসজিদের ভিতর রুটী ও গোশত খেতাম।’ (ইবনে মাজাহ্, সুনান ৩৩০০ নং)
যে জিনিস খাওয়া হারাম, তা মসজিদে খাওয়া তথা সকল স্থানেই খাওয়া হারাম। মসজিদের সম্মান রক্ষার্থে সে সব হারাম জিনিস সঙ্গে নিয়ে বা পকেটে রেখে মসজিদে যাওয়া বা নামায পড়াও বৈধ নয়। যেমন গুল, জর্দা, বিড়ি, সিগারেট, তামাক প্রভৃতি খাওয়া বৈধ নয়, বিধায় তা মসজিদে খাওয়া বা নিয়ে যাওয়া অবৈধ। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৭/৫৮)
৩। শয়ন করা। একদা আব্বাদ বিন তামীমের চাচা (রাঃ) দেখলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) মসজিদে এক পা অপর পায়ের উপর রেখে চিৎ হয়ে শয়ন করে আছেন। সাঈদ বিন মুসাইয়িব বলেন, ‘উমার এবং উসমান (রাঃ)ও এরুপ করতেন।’ (বুখারী ৪৭৫ নং, মুসলিম, সহীহ)
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, ‘আমরা আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর যুগে মসজিদে ঘুমাতাম। আর আমরা তখন ছিলাম অবিবাহিত যুবক।’ (বুখারী ৪৪০, তিরমিযী, সুনান ৩২১, ইবনে মাজাহ্, সুনান ৭৫১নং, আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ)
তবে ঘরে জায়গা থাকতে মসজিদকে অভ্যাসগতভাবে শয়নাগার ও বিশ্রামাগার বানানো উচিৎ নয়। কারণ, ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘কেউ যেন মসজিদকে শয়নাগার ও বিশ্রামাগার বানিয়ে না নেয়।’ (তিরমিযী, সুনান ১/১০৩)
মসজিদ নির্মাণ বিষয়ক কিছু ফতোয়া
মুসলিম থাকতে কোন কাফের মিস্ত্রী-শ্রমিক দ্বারা মসজিদ নির্মাণ বৈধ নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ২১/২০-৩৮)
মুসলিমদের (সামাজিক, রাজনৈতিক) কোন ক্ষতির আশঙ্কা না হলে মসজিদ ও মাদ্রাসার জন্য অমুসলিমদের নিকট থেকে -তারা খুশী হয়ে হালাল অর্থ সাহায্য দিতে চাইলে- গ্রহণ করা বৈধ। (ইবনে বায প্রমুখ, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৩২/৯০)
মসজিদ নির্মাণ হবে মুসলিমদের নিজস্ব পবিত্র মাল দ্বারা। এতে যাকাত ব্যবহার বৈধ নয়। কারণ, যাকাত হল গরীব-মিসকীন প্রভৃতি ৮ প্রকার খাতে ব্যয়িতব্য অর্থ। আর মসজিদ এ সব পর্যায়ে পড়ে না। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৮/১৫২)
ওয়াকফের যে কোনও বস্তু বিক্রয় করা যায় না, হেবা (দান) করা যায় না এবং কেউ তার ওয়ারিস হতেও পারে না। (বুখারী ২৭৩৭ নং, মুসলিম, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান)
অবশ্য যদি কোন ওয়াক্ফের জিনিস এমন অবস্থায় পৌঁছে যায়, যাতে কোন প্রকার উপকারই অবশিষ্ট না থাকে এবং তার তরমীম ও সংস্কার সম্ভব না হয়, অনুরুপ কোন মসজিদ সংকীর্ণ হলে এবং প্রশস্ত করার জায়গা না থাকলে সেই ওয়াক্ফ বা মসজিদের জায়গা বিক্রয় করে সেই অর্থে অন্য কোন উপযুক্ত স্থানে মসজিদ নির্মাণ করা বৈধ। কারণ, কোনও মসজিদ বা স্থান খামাখা ফেলে রাখা নিষ্ফল।
ইবনে রজব বলেন, ইমাম আহমাদ (রহঃ) প্রমুখ যে কথা স্পষ্টাকারে বর্ণিত হয়েছে তা এই যে, পোড়ো মসজিদ বিক্রয় করে তার মূল্য দ্বারা অন্য মসজিদ নির্মাণ করতে হবে। ঐ গ্রাম বা শহরে প্রয়োজন না থাকলে অন্য গ্রাম বা শহরে মসজিদ নির্মাণের খাতে ঐ অর্থ ব্যয় করতে হবে।
মসজিদ স্থানান্তরিত করা সাহাবা কর্তৃকও প্রমাণিত। (এ ব্যাপারে ইসলাহুল মাসাজিদ, উর্দু ৩১৫-৩১৭পৃ:, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১০/৬৩, ২৩/৯৯, ২৪/৬০, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ২/৯ দ্রষ্টব্য)
পক্ষান্তরে মসজিদ পোড়ো না হলে, নামায পড়া হলে বা চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রয়োজন না পড়লে মসজিদ ভেঙ্গে অন্য কিছু (মাদ্রাসা, মুসাফিরখানা ইত্যাদি) করা বৈধ নয়, এমনকি ইমাম রাখার জন্য বাসাও নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১০/৮১, ২৩/১০৩)
এক মসজিদের আসবাব-পত্র অন্য মসজিদে লাগানো বৈধ। মসজিদের প্রয়োজন না থাকলে অথবা মসজিদের সম্পদ উদ্বৃত্ত হলে তা হতে সাধারণ কল্যাণ-খাতে; যেমন ঈদগাহ্ বা দ্বীনী মাদ্রাসা নির্মাণ, কবরস্থান ঘেরা, এতীম-মিসকীনদের দেখাশুনা প্রভৃতি কাজে দান করা যায়। (ইসলাহুল মাসাজিদ, উর্দু ৩১৬পৃ:, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৩/৩৬১, কিতাবুদ্দা’ওয়াহ্, ইবনে বায ২০৩পৃ:)
মসজিদের বর্ধিত স্থান মসজিদের অন্তর্ভুক্ত। উভয়ের মান সমান। তাই তো মহানবী (সাঃ) এর নির্মিত মসজিদে নামায পড়ে যে সওয়াব লাভ হয়, বর্তমানে ঐ মসজিদের বর্ধিত স্থানসমূহে নামায পড়লেও ঐ একই পরিমাণ সওয়াব লাভ হবে। অবশ্য প্রথম কাতারসমূহের ফযীলত তো পৃথক আছেই। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৭২, ১৭/৬৯)
ইসলামের স্বর্ণযুগে যদিও মসজিদে নারী-পুরুষের মুসাল্লা পৃথক ছিল না তবুও বর্তমানে ফিতনা ও ফাসাদ থেকে বাঁচার জন্য মহিলাদের মুসাল্লা পৃথক করে মাঝে পর্দা দেওয়া দূষণীয় নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৯/১৪৭) অবশ্য এই উদ্দেশ্যে মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট ও পৃথক দরজা হওয়া বাঞ্ছনীয়। (আবূদাঊদ, সুনান ৪৬২ নং)
মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হলে সমবেত হয়ে অনুষ্ঠান করে ফিতে কেটে বা অন্য কিছু করে উদ্বোধন করা বিদআত। এ ধরনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাহায্য ও যোগদান করাও বৈধ নয়। যেমন বিশেষভাবে কোন নূতন (বা পুরাতন) মসজিদে নামায পড়ার জন্য দূর থেকে সফর করাও বৈধ নয়। যেহেতু কা’বার মসজিদ, মসজিদে নববী ও মসজিদুল আকসা (অনুরুপ কুবার মসজিদ) ছাড়া অন্য মসজিদের জন্য সফর বৈধ নয়। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৬৯৩, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/১৮-১৯)
উপরতলায় মসজিদ ও নিচের তলায় বসত-বাড়ি অথবা নিচের তলায় মসজিদ ও উপর তলায় বসত-বাড়ি হলে কোন দোষের কিছু নয়। (ইসলাহুল মাসাজিদ, উর্দু, ৩১৩পৃ:)
তদনুরুপ উপর তলায় মসজিদ এবং নিচের তলায় দোকান ইত্যাদি করে তা ভাড়া দেওয়া এবং সেই অর্থ মসজিদের খাতে ব্যয় করা বৈধ। (ঐ ৩১৭পৃ:) অবশ্য ঐ সমস্ত দোকানে যেন হারাম ও অবৈধ কোন কিছু ক্রয়-বিক্রয় না হয়। নচেৎ হারাম ব্যবসায় দোকান ভাড়া দিয়ে নেওয়া অর্থ হারাম তথা মসজিদে তা লাগানো অবৈধ হবে। বলাই বাহুল্য যে, সূদী বাংক, মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়, দাড়ি চাঁছার সেলুন, বাদ্যযন্ত্র বিক্রয়, কোন অশ্লীল কর্ম প্রভৃতি করার জন্য দোকান বা বাড়ি ভাড়া দেওয়া হারাম। (আসইলাতুম মুহিম্মাহ্, ইবনে উসাইমীন ১৪পৃ:)
মসজিদ দ্বিতল বা প্রয়োজনে আরো অধিকতল করা দূষণীয় নয়। তবে কাতার শুরু হবে ইমামের নিকট থেকে। যে তলায় ইমাম থাকবেন, সে তলা পূর্ণ হলে তবেই তার পরের তলায় দাঁড়ানো চলবে। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৬/২৬০)
মসজিদ হবে সাদা-সিধে প্রকৃতির। এতে অধিক নক্সা ও চাকচিক্য পছন্দনীয় নয়। অধিক কারুকার্য-খচিত ও রঙচঙে করা বিধেয় নয়।
আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, “আমি মসজিদসমূহকে রঙচঙে করতে আদিষ্ট হ্ইনি।” ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘অবশ্যই তোমরা মসজিদসমূহকে সৌন্দর্য-খচিত করবে, যেমন ইয়াহুদ ও খ্রিষ্টানরা (তাদের গির্জাগুলোকে) করেছে।’ (আবূদাঊদ, সুনান ৪৪৮ নং) অথচ তাদের অনুকরণ অবৈধ।
আনাস (রাঃ) বলেন, ‘(কিছু মুসলমান হবে) তারা মসজিদের সৌন্দর্য নিয়ে গর্ব করবে। কিন্তু তা আবাদ করবে (নামায পড়বে) খুব কমই।’ (ইআশা: ৩১৪৭ নং)
উমার (রাঃ) বলেন, ‘খবরদার! মসজিদকে লাল বা হ্লুদ রঙের বানিয়ে লোকদেরকে (নামাযের সময়) ফিতনায় (ঔদাস্যে) ফেলো না।’ (বুখারী, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ১/৬৪২)
মহানবী (সাঃ) বলেন, “যখন তোমরা তোমাদের মসজিদসমূহকে সৌন্দর্য-খচিত করবে এবং কুরআন শরীফকে অলঙ্কৃত করবে, তখন তোমাদের উপর ধ্বংস নেমে আসবে।” (ইআশা: ৩১৪৮ নং)
তিনি আরো বলেন, “মসজিদ (তার নির্মাণ-সৌন্দর্য) নিয়ে গর্ব না করা পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবে না।” (আবূদাঊদ, সুনান ৪৪৯ নং) অর্থাৎ এ কাজ হল কিয়ামতের একটি পূর্ব লক্ষণ।
অবশ্য তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান (রাঃ) মসজিদে নববীর দেওয়াল নক্সা-খচিত পাথর ও চুনসুরকি দ্বারা নির্মাণ করেন। থামগুলোকেও নক্সাদার পাথর দিয়ে তৈরী করেন। আর ছাত করেন সেগুন কাঠের। (বুখারী ৪৪৬, আবূদাঊদ, সুনান ৪৫১নং)
ইবনে বাত্ত্বাল প্রমুখ বলেন, মসজিদ নির্মাণে সুন্নত হল মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করা এবং তার সৌন্দর্যে অতিরঞ্জিত না করা। হযরত উমার (রাঃ) নিজের আমলে বহু বিজয় ও ধন লাভ সত্ত্বেও তিনি মসজিদে নববীতে কিছু অতিরিক্ত বা বর্ধিত করেননি। খেজুর ডালের ছাত নষ্ট হয়ে গেলে তিনি তা নতুন করে তৈরী করেছিলেন মাত্র। অতঃপর হযরত উসমান (রাঃ) তাঁর নিজের আমলে অর্থ-সম্পদের প্রাচুর্য দেখা দিলে তিনি মসজিদের কিছু সৌন্দর্য বর্ধিত করেছিলেন। কিন্তু তাকে চাকচিক্য বা রঙচঙে বলা চলে না। এতদসত্ত্বে ও অন্যান্য সাহাবীগণ তাঁর এ কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
ইসলামে প্রথম মসজিদসমূহকে অধিক সৌন্দর্য-খচিত ও নক্সাদার করেন বাদশা অলীদ বিন আব্দুল মালেক। এ সময়টি ছিল সাহাবাদের যুগের শেষ সন্ধিক্ষণ। তখন ফিতনার ভয়ে বহু উলামা বাদশার কোন প্রতিবাদ না করতে পেরে চুপ থেকেছেন।
পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) প্রমুখ আহলে ইলমদের নিকটে মসজিদের তা’যীম প্রদর্শনার্থে চাকচিক্য করণে অনুমতি রয়েছে। (ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ১/৬৪৪)
মসজিদে শির্ক ও বিদআত
মহান আল্লাহ বলেন,
وأَنَّ الْمَسَاجِدَ للهِ فَلاَ تَدْعُوْا مَعَ اللهِ أَحَداً
অর্থাৎ, আর অবশ্যই মসজিদসমূহ আল্লাহর। সুতরাং আল্লাহর সঙ্গে আর কাউকে আহবান করো না। (কুরআন মাজীদ ৭২/১৮)
তিনি আরো বলেন, “নিজেদের উপর কুফরের সাক্ষ্য দিয়ে মুশরিকদের জন্য আল্লাহর মসজিদ আবাদ করা শুদ্ধ ও শোভনীয় নয়। ওরা তো এমন, যাদের সকল আমল ব্যর্থ এবং ওরা দোযখে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে।” (কুরআন মাজীদ ৯/১৭)
মসজিদে কবর থাকা শির্কের এক অসীলা। তাই তো মসজিদে কোন মাইয়্যেত দাফন করা বৈধ নয়। বৈধ নয় কবর-ওয়ালা মসজিদে নামায পড়া। এ জন্য মসজিদে কবর থাকলে তা তুলে কবরস্থানে পুনর্দাফন করা ওয়াজেব। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১০/৭৭)
কা’বার মসজিদে বিবি হা-জার (হাজেরা) বা অন্য কারো কবর নেই। এ ব্যাপারে কোন কোন ঐতিহাসিকদের কথা মান্য নয়। কারণ, তাঁদের নিকট কোন দলীল ও প্রমাণ নেই। অনুরুপ মহানবী (সাঃ) এর কবর হযরত আয়েশার হুজরায় হয়েছে, মসজিদে নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১০/৮০, ২৬/৮৬)
মৃত্যু-শয্যায় শায়িত থেকে মহানবী (সাঃ) উম্মতকে অসিয়ত করে বলেছেন, “আল্লাহ ইয়াহুদ ও খ্রীষ্টানদেরকে অভিশাপ করুন; তারা তাদের আম্বিয়ার কবরসমূহকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৭১২নং)
তিনি আরো বলেছেন, “সাবধান! তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা তাদের আম্বিয়া ও নেক লোকেদের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিত। শোন! তোমরা যেন কবরসমূহকে মসজিদ বানিয়ে নিও না। আমি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে নিষেধ করছি।” (মুসলিম, মিশকাত ৭১৩ নং)
তিনি বলেন, “তোমাদের নিজ নিজ ঘরে কিছু (নফল বা সুন্নত) নামায পড়; আর তা (ঘর) কে কবর করে নিওনা।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৭১৪নং) অর্থাৎ কবরস্থানে যেমন নামায পড়া হয় না, ঠিক তেমনি নামায না পড়ে ঘরকে কবরের মত করে রেখো না।
তিনি আরো বলেন, “তোমরা কবরের উপর বসো না এবং কবরের দিকে মুখ করে নামায পড়ো না।” (মুসলিম, সহীহ ৯২৭ নং, প্রমুখ)
ঈদগাহ্ বা মসজিদের সীমানার বাইরে কবর হলে এবং মাঝে দেওয়াল বা প্রাচীর থাকলে ঐ ঈদগাহ্ বা মসজিদে নামায দূষণীয় নয়। তবে যদি ঐ কবরবাসীর তা’যীমের উদ্দেশ্যে তার পাশে মসজিদ বানানো হয়ে থাকে, তাহলে তাতে নামায বৈধ নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৭৮-৭৯)
রমযান, ঈদ, শবে কদর, শবেবরাত(?) প্রভৃতির দিবারাত্রে মসজিদকে ফুল বা অতিরিক্ত আলোকমালা দিয়ে সুসজ্বিত করা বিদআত। পরন্তু এমন কাজ কাফেরদের অনুরুপ। আর কাফেরদের অনুকরণ মুসলিমদের জন্য বৈধ নয়। (ঐ ২৫/৬৮-৬৯)
কোন মসজিদে বিদআত কর্ম হতে থাকলে তা দূর করার চেষ্টা করতে হবে। সম্ভব না হলে সে মসজিদ ত্যাগ করে বিদআতশূন্য মসজিদে নামায পড়া কর্তব্য। (ঐ ১৮/৮৯) মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, একদা আমি ইবনে উমার (রাঃ) এর সঙ্গে ছিলাম। নামায পড়ার জন্য তিনি এক মসজিদে প্রবেশ করলেন। সেখানকার মুআযযিন যোহ্র বা আসরের আযানের পর পুনরায় নামাযের জন্য ডাক-হাঁক শুরু করলে তিনি বললেন, ‘এখান হতে বের হয়ে চল। কারণ এখানে বিদআত রয়েছে।’ অন্য এক বর্ণনায় তিনি বললেন, ‘(এই মসজিদ থেকে) বিদআতে আমাকে বের করে দিল।’ (আবূদাঊদ, সুনান ৫৩৮, বায়হাকী ১/৪২৪, ত্বাব)
বিদআতের বিরুদ্ধে লড়ে সফল না হয়ে বিদআতশূন্য সালাফী জামাআত পৃথক মসজিদ করলে, সে মসজিদকে ‘মাসজিদে যিরার’ বলা যাবে না। বরং বিদআত কর্মে সহমত প্রকাশ না করে ফিতনা দূর করার মানসে পৃথক মসজিদ করাই যুক্তিযুক্ত। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৩৫/৮২) যে মসজিদ সৎপথের পথিক হকপন্থী মুসলিমদের কোন ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে, জামাআতের প্রতি বিদ্রোহ করে, মুসলিমদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির ইচ্ছায় এবং আল্লাহ ও তদীয় রসূলের বিরুদ্ধে যারা সংগ্রাম করে তাদের গোপন ঘাঁটি স্বরুপ নির্মাণ করা হয়, তাই হল কুরআন মাজীদে উল্লেখিত ‘মাসজিদে যিরার।’ (কুরআন মাজীদ ৯/১০৭ দ্র:)
মসজিদ বিষয়ক আরো কিছু মাসায়েল
কোন প্রকার জুলুম ও অন্যায়ভাবে দখলকৃত জায়গার উপর মসজিদ নির্মাণ এবং জেনে-শুনে তাতে নামায পড়া বৈধ নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৭/৫৩)
মসজিদের কোন সম্পত্তি বা অন্য কোন জিনিস ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার কারো জন্য বৈধ নয়। (ইসলাহুল মাসাজিদ, উর্দু৩১১পৃ:)
কোনও বিষয় নিয়ে কারো সাথে বিরোধ ঘটলে তাকে মসজিদে আসতে বাধা দেওয়া উচিৎ নয়। কারণ, মহান আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর মসজিদে তাঁর নাম স্মরণ (যিক্র) করতে বাধা দেয় ও তার ধ্বংস-সাধনে প্রয়াসী হয়, তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে?” (কুরআন মাজীদ ২/১১৪)
কোন অমুসলিম যদি বাহ্যিক পবিত্র অবস্থায় আদবের সাথে মসজিদ প্রবেশ করতে চায়, তবে তাতে কোন ক্ষতি হয় না। অবশ্য মক্কা (ও মদ্বীনার) হারাম ও মসজিদে তারা প্রবেশ করতে পারে না। (কুরআন মাজীদ ৯/২৮, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ২১/২০, ৩২/৯৪, ১০৫)
মসজিদের উপর দিয়ে রাস্তা করায় মসজিদের সম্মানহানি হয়। মহানবী (সাঃ) বলেন, “যিক্র ও নামায ছাড়া অন্য কিছুর জন্য মসজিদসমূহকে রাস্তা করে নিও না।” (ত্বাবারানী, মু’জাম, জামে ৭২১৫ নং) মসজিদকে রাস্তায় পরিণত করে তার সম্মান নষ্ট করা কিয়ামতের অন্যতম পূর্বলক্ষণ। (ত্বাবারানী, মু’জাম আউসাত্ব, জামে ৫৮৯৯ নং)
প্রকাশ যে, মসজিদের প্রতি তা’যীম প্রদর্শনের অর্থ এই নয় যে, মসজিদকে সালাম (প্রণাম) করতে হবে বা তার ধুলো খেতে হবে অথবা তার মেঝে ধুয়ে পানি খেতে হবে। কারণ এসব কাজ শির্কের পর্যায়ভুক্ত।
মসজিদে কোন প্রকার খেলাও বৈধ নয়। অবশ্য যে খেলা জিহাদ বিষয়ক অথবা জিহাদের সহায়ক (অস্ত্রচালনার খেলা) তা বৈধ। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘একদা হাবশী দল মসজিদে তাদের যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে খেলা করছিল। আর আমি আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর পশ্চাতে আড়ালে হুজরার দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে তাদের খেলা দেখছিলাম।’ (বুখারী ৪৫৪, ৪৫৫নং, প্রমুখ)
প্রয়োজনে কোন রোগীর জন্য মসজিদে তাঁবু লাগিয়ে বা অন্য স্থানে স্থান দেওয়া দূষণীয় নয়। এতে রক্ত পড়লেও ক্ষতি নেই, যা পরে ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। খন্দকের যুদ্ধে হযরত সা’দ (রাঃ) আহত হলে তাঁকে মসজিদে নববীতে রাখা হয়েছিল এবং সেখানেই তাঁর ইন্তেকাল হয়েছিল। (বুখারী ৪৬৩নং, প্রমুখ)
যে পত্র-পত্রিকায় মানুষ বা পশু-পক্ষীর ছবি থাকে, তা মসজিদে পড়া বা রাখা বৈধ নয়। প্রয়োজনে কালি দ্বারা প্রাণীর মাথা নষ্ট করে রাখা যায়। অশ্লীল ছবি ও পত্রিকা তো কোন স্থানেই দেখা ও পড়া বৈধ নয়। মসজিদে আরো বেশী নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ২২/১০১)
বাড়ির কোন একটা কামরা বা নির্দিষ্ট জায়গাকে মসজিদ বানানো চলে। যাতে নফল নামায এবং মসজিদে যেতে না পারলে ফরয নামাযও পড়া যাবে। ইতবান বিন মালেক (রাঃ) এই রকমই একটি আবেদন আল্লাহর রসূল (সাঃ)কে জানালেন। তিনি তাঁর আবেদন মঞ্জুর করে তাঁর ঘরে গিয়ে তাঁর পছন্দমত এক স্থানে ২ রাকআত নামায পড়লেন। অনুরুপ বারা’ বিন আযেব (রাঃ) নিজ বাড়িতে (বাড়ির লোকদের নিয়ে) জামাআত করে নামায পড়তেন। (বুখারী ৪২৫নং)
নূতন মসজিদ অপেক্ষা পুরাতন মসজিদের অধিক কোন ফযীলত ও বৈশিষ্ট্য বা অধিক সওয়াব আছে -এর কোন দলীল নেই। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৪/২১৬, ফাতাওয়া নাযীরিয়্যাহ্ ১/৩৫৯) তবে অপ্রয়োজনে যেহেতু একই মহ্ল্লায় একাধিক মসজিদ বিদআত, সেহেতু এর ফলে যেখানে ‘যিরার’ হওয়ার আশঙ্কা থাকে সেখানে নূতন ছেড়ে পুরাতন মসজিদে নামায পড়া উত্তম। কিছু সাহাবা ও সলফ এই আশঙ্কাতেই কোন কোন স্থানে পুরাতন মসজিদে নামায পড়েছেন। অবশ্য সেই মসজিদে নামায পড়া উত্তম, যে মসজিদ বিদআতশূন্য, যার জামাআত সংখ্যা অধিক (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৪/২১৩) এবং যার ইমাম ফাসেক বা বিদআতী বলে আশঙ্কা নেই।
আল্লাহর রসূল (সাঃ) ও তাঁর সাহাবাবর্গের যুগে কোন মসজিদকে তালাবদ্ধ করা হ্তো না। তবে সে যুগে মসজিদের ভিতর এমন কোন মূল্যবান আসবাব-পত্র থাকত না, যা চুরি বা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করা যেত। পরন্তু সে যুগের লোকেরাও এমন হৃদয়বিশিষ্ট ছিলেন যে, তাঁদের দ্বারা মসজিদের কোন প্রকার ক্ষতি হবে, সে আশঙ্কাই ছিল না। কিন্তু বর্তমান যুগের অবস্থা তার বিপরীত। সুতরাং আসবাব-পত্র ও সম্মান রক্ষার্থে মসজিদকে তালাবদ্ধ করা দূষণীয় নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৩/৭৯, ১৭/৭০)
যে সব স্থানে নামায পড়া মাকরুহ ও অবৈধ
১। গোরস্থানে নামায পড়া বৈধ নয়। মহানবী (সাঃ) বলেন, “সাবধান! তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা তাদের আম্বিয়া ও আউলিয়াদের কবরসমূহকে মসজিদ বানিয়ে নিত। শোন! তোমরা যেন কবরসমূহকে মসজিদ (নামাযের স্থান) বানিয়ে নিও না। আমি তোমাদের উপর এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারী করে যাচ্ছি।” (মুসলিম, মিশকাত ৭১৩নং)
তিনি বলেন, “তোমাদের নিজ নিজ ঘরে কিছু (নফল বা সুন্নত) নামায পড়; আর তা (ঘর)কে কবর করে নিওনা।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৭১৪নং) কারণ, কবরস্থানে নামায পড়া হয় না।
“তোমরা কবরের উপর বসো না এবং কবরের দিকে মুখ করে নামায পড়ো না।” (মুসলিম, সহীহ ৯৭২ নং, প্রমুখ)
২। উট বাঁ ধার জায়গায় নামায নিষিদ্ধ। মহানবী (সাঃ) বলেন, “তোমরা ছাগল-ভেঁড়া বাঁধার জায়গায় নামায পড়, আর উট বাঁধার জায়গায় নামায পড়ো না।” (মুসলিম, তিরমিযী, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ প্রমুখ, মিশকাত ৭৩৯নং)
৩। গোসলখানায় নামায মাকরুহ। যেহেতু এ স্থান সাধারণত: নাপাকী ধোওয়ার জন্য ব্যবহৃত। মহানবী (সাঃ) বলেন, “কবরস্থান ও গোসলখানা ছাড়া সারা পৃথিবীর সকল জায়গা মসজিদ (নামায পড়ার জায়গা)।” (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, দারেমী, সুনান, মিশকাত ৭৩৭নং)
৪। কসাইখানা পবিত্র হলে তাতে নামায শুদ্ধ।
৫। রাস্তার মাঝে গাড়ি বা লোকজনের আসা-যাওয়া না থাকলে নামায নিষিদ্ধ নয়। অনুরুপ মসজিদ ভরে গেলে লাগালাগি রাস্তাতেও নামায শুদ্ধ। তবে কেউ যেন ইমামের সামনের দিকে রাস্তায় না দাঁড়ায়। কারণ, ইমামের সামনে দাঁড়ালে নামায শুদ্ধ হয় না। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৬৪)
৬। ময়লা ফেলার জায়গাতে যেহেতু নাপাকীই থাকার কথা, তাই সেখানে নামায শুদ্ধ নয়।
৭। কা’বা শরীফের ভিতরে এবং হাতীম বা হিজরে ইসমাঈল (কা’বা শরীফের পার্শ্বে যে জায়গাটা গোলাকার ঘেরা আছে সেই জায়গা) এর সীমার ভিতরেও নামায শুদ্ধ। আল্লাহর রসূল (সাঃ) একদা কা’বা-ঘরের ভিতরে ২ রাকআত নামায পড়েছেন। (বুখারী, মুসলিম, আহমাদ, মুসনাদ, মিশকাত ৬৯১ নং)
প্রকাশ যে, সাত জায়গায় নামায পড়া নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে যে হাদীস উল্লেখ করা হয়, তা খুবই দুর্বল। (মিশকাত ৭৩৭ নং হাদীসের টীকা, আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ২/২৫২ দ্র:)
৮। অমুসলিমদের উপাসনালয়ে কোন মূর্তি বা ছবি না থাকলে তাতে নামায পড়া বৈধ। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) মূর্তি না থাকলে গির্জায় নামায পড়েছেন। (বুখারী বিনা সনদে, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ১/৬৩২)
হযরত আবূ মূসা আশআরী, উমার বিন আব্দুল আযীয কর্তৃকও গির্জায় নামায পড়ার ব্যাপারে বর্ণনা এসেছে। (ইআশা: ১/৪২৩, নাইলুল আউতার, শাওকানী, ফিকহুস সুন্নাহ্ উর্দু১৩৫ পৃ:)
প্রকাশ যে, নিরুপায় অবস্থা বা দাওয়াতী উদ্দেশ্য ছাড়া অমুসলিমদের কোন ভজনালয়ে যাওয়া বৈধ নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৩২/১০৪)
অমুসলিমদের সমাজে এবং তাদের মালিকানাভুক্ত জায়গা-জমিতেও নামায শুদ্ধ। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৬৮) বরং তাদের বাড়ির ভিতরেও (মূর্তি না থাকলে) নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। (ঐ ৩২/১০৪) তবে পবিত্রতা ইত্যাদি অন্যান্য শর্তাবলী সর্বক্ষেত্রে অবশ্য পালনীয়।
৯। নক্সাদার মুসাল্লায় নামায শুদ্ধ হলেও তাতে নামায পড়া মাকরুহ (অপছন্দনীয়)। যেহেতু এতে নামাযীর মনে কেড়ে নিয়ে উদাসীন করে ফেলে। এই জন্যই বিশ্বনবী (সাঃ) নক্সাদার কাপড়ে নামায পড়াকে অপছন্দ করেছেন। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৭৫৭ নং দ্র:)
একদা হযরত আয়েশা (রাঃ) এর হুজরার দেওয়ালে ছবিযুক্ত পর্দা টাঙ্গা থাকতে দেখলে তিনি তাঁকে বললেন, “তোমার এই পর্দা আমাদের নিকট থেকে সরিয়ে নাও। কারণ, ওর ছবিগুলো আমার নামাযে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে।” (বুখারী ৩৭৪ নং, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৫/২৯৩, ১৫/৭৪, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৭৮)
তদনুরুপ সামনে ছবিযুক্ত ক্যালেন্ডার ইত্যাদি রেখে নামায পড়া মাকরুহ। (ইআশা: ১/৩৯৯ দ্র:)
বলা বাহুল্য, এ জন্যই মসজিদের সামনের দেওয়ালে কোন প্রকার দৃষ্টি-আকর্ষক নক্সা, বস্তু বা বিজ্ঞপ্তি, সময়সূচী ইত্যাদি রাখাও মাকরুহ।
১০। বিছানা পবিত্র হলে তাতে নামায পড়া দূষণীয় নয়। হযরত আনাস (রাঃ) নিজ বিছানায় নামায পড়েছেন। (ইআশা: ২৮১০ নং, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ১/৫৮৬)
১১। পেশাব-পায়খানা ঘরের ছাদে বা পিছনে (পেশাব-পায়খানা ঘরকে সামনে করে নামায শুদ্ধ। ছাত বা সামনের দেওয়াল পবিত্র হলে নামায মাকরুহ নয়। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৭০, দারেমী, সুনান ৯৫পৃ:) আড়াল থাকলে প্রস্রাব-পায়খানার নালা বা পাইপ সামনে করে, অথবা তার উপর ব্রিজে, অথবা মলমূত্রের পাইপের নিচে নামায শুদ্ধ। (বুখারী ৮২পৃ দ্র:)
১২। যে রুমে মাদকদ্রব্য থাকে সে রুমে নামায পড়তে হলে নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ১/৪২৬)
১৩। ভাড়া দেওয়া বাড়ির মালিক ভাড়া গ্রহণকারীকে ঐ ঘরে থাকতে না দিতে চাইলে এবং সে সেখান হতে বের হতে না চাইলে তথা জোরপূর্বক বাস করলেও সে ঘরে নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে এ কাজে সে নিরুপায় না হলে গুনাহগার হতে পারে। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৯/১৫৫)
সুতরাহ্
নামাযীর সামনে বেয়ে কেউ পার হবে না এমন ধারণা থাকলেও সামনে সুতরাহ্ রেখে নামায পড়া ওয়াজেব। (সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ৮২পৃ:) যেমন সফরে, বাড়িতে, মসজিদে,হারামের মসজিদদ্বয়ে সর্বস্থানে একাকী ও ইমামের জন্য সুতরাহ্ ব্যবহার করা জরুরী।
মহানবী (সাঃ) বলেন, “সুতরাহ্ ছাড়া নামায পড়ো না।” (ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ ৮০০ নং)
“যে ব্যক্তি সক্ষম হয় যে, তার ও তার কিবলার মাঝে কেউ যেন না আসে, তাহলে সে যেন তা করে।” (আহমাদ, মুসনাদ, দারাক্বুত্বনী, সুনান, ত্বাবারানী, মু’জাম)
“যখন তোমাদের কেউ নামায পড়বে, তখন সে যেন সামনে সুতরাহ্ রেখে নামায পড়ে।” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে হিব্বান, সহীহ,হাকেম, মুস্তাদরাক, জামে ৬৫০, ৬৫১ নং)
পক্ষান্তরে আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর বিনা সুতরায় নামায পড়ার হাদীস যয়ীফ।।
সুতরাহ্ বলে কোন কিছুর আড়ালকে। নামাযী যখন নামায পড়ে তখন তার হৃদয় জোড়া থাকে সৃষ্টিকর্তা মা’বূদ আল্লাহর সাথে। বিচ্ছিন্ন থাকে পার্থিব সকল প্রকার কর্ম ও চিন্তা থেকে। ইবাদত করা অবস্থায় সে যেন মা’বূদ আল্লাহকে দেখতে পায়। কিন্তু তার সম্মুখে যখন এমন কোন ব্যক্তি বা পশু এসে উপস্থিত হয়, যে তার একাগ্রতা ও ধ্যান ভঙ্গ করে দেয়, মনোযোগ কেড়ে নেয়, দৃষ্টি চুরি করে ফেলে এবং কোন ভয় বা কামনা তার মনে জায়গা নিয়ে তাকে আল্লাহর দরবার হতে সরিয়ে পার্থিব জগতে ফিরিয়ে দেয়, তখন তার জন্য জরুরী এমন এক আড়াল ও অন্তরালের, যার ফলে সে নিজের দৃষ্টি ও মনকে তার ভিতরে সীমাবদ্ধ রাখতে পারে। আর তার পশ্চাতে কোন কিছু অতিক্রম করলেও সে তা ভ্রুক্ষেপ না করতে পারে।
সুতরাং সুতরাহ্ রেখে নামায না পড়া গুনাহর কাজ। পরন্তু ঐ অবস্থায় নামাযীর সম্মুখ বেয়ে কেউ পার হয়ে গেলে তার নামাযের সওয়াব কম হয়ে যায়। (ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ১/৫৮৪)
সুতরাহ্ কিসের হবে?
আল্লাহর রসূল (সাঃ) কর্তৃক বিভিন্ন প্রকার সুতরাহ্ প্রমাণিত। যেমন, কখনো তিনি মসজিদের থামকে সামনে করে নামায পড়তেন। (সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ৮২পৃ:) ফাঁকা ময়দানে নামায পড়লে এবং আড়াল করার জন্য কিছু না পেলে সামনে বর্শা গেড়ে নিতেন। আর লোকেরা তাঁর পিছনে বিনা সুতরায় নামায পড়ত। (বুখারী ৪৯৪, ৪৯৮নং, মুসলিম, ইবনে মাজাহ্, সুনান) কখনো বা নিজের সওয়ারী উটকে আড়াআড়ি দাঁড় করিয়ে তাকে সুতরাহ্ বানিয়ে নামায পড়তেন। (বুখারী ৫০৭ নং, আহমাদ, মুসনাদ) কখনো জিনপোশ (উটের পিঠে বসবার আসন) কে সামনে রেখে তার কাষ্ঠাংশের সোজাসুজি নামায পড়তেন। (বুখারী ৫০৭নং, মুসলিম, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, আহমাদ, মুসনাদ) তিনি বলতেন, “তোমাদের কেউ যখন তার সামনে জিনপোশের শেষে সংযুক্ত কাষ্ঠখন্ডের মত কিছু রেখে নেয়, তখন তার উচিৎ, (তার পশ্চাতে) নামায পড়া এবং এরপর তার সম্মুখ বেয়ে কেউ পার হয়ে গেলে কোন পরোয়া না করা।” (মুসলিম, সহীহ ৪৯৯ নং, আবূদাঊদ, সুনান) একদা তিনি একটি গাছকে সুতরাহ্ বানিয়ে নামায পড়েছেন। (নাসাঈ, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ) কখনো তিনি আয়েশা (রাঃ) এর খাটকে সামনে করে নামায পড়েছেন। আর ঐ সময় আয়েশা (রাঃ) তার উপর চাদর ঢাকা দিয়ে শুয়ে থাকতেন। (বুখারী ৫১১ নং, মুসলিম, সহীহ)
সুফয়্যান বিন উয়াইনাহ্ বলেন, তিনি শারীককে কোন ফরয নামায পড়ার সময় তাঁর টুপীকে সামনে রেখে সুতরাহ্ বানাতে দেখেছেন। (আবূদাঊদ, সুনান ৬৯১নং)
প্রকাশ যে, কিছু না পেলে দাগ টেনে নেওয়ার হাদীস সহীহ নয়। (যইফ আবূদাঊদ, সুনান ১৩৪, যইফ ইবনে মাজাহ্, সুনান ১৯৬, ৯৪৩, যইফ জামে ৫৬৯নং)
সুতরাহ্ হবে উটের পিঠে স্থাপিত জিনপোশের পেছনে সংযুক্ত কাষ্ঠখন্ডের মত (কম-বেশী একহাত, আধ মিটার বা ৪৭ সেমি. উঁচু) কোন বস্তু । কোন দাগ সুতরাহ্ বলে গণ্য হবে না। তবে যে বস্তু মাটি বা মুসাল্লা থেকে একটুও উঁচু হয়ে থাকে তাকেই সুতরাহ্ বলে ধরে নেওয়া যাবে। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৩/৩৮৪)
প্রকাশ যে, মুসাল্লা, চাটাই বা কার্পেটের শেষ প্রান্তকে সুতরাহ্ বলে গণ্য করা যাবে না। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩১৭)
সুতরাহ্ কতদূরে রাখতে হবে?
মহানবী (সাঃ) বলেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ যখন নামায পড়বে, তখন সে যেন সামনে সুতরাহ্ রেখে নামায পড়ে এবং তার নিকটবর্তী হয়। যাতে শয়তান যেন তার নামাযকে নষ্ট করে না দিতে পারে।” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে হিব্বান, সহীহ,হাকেম, মুস্তাদরাক, জামে ৬৫০নং)
একদা তিনি কা’বা শরীফের ভিতরে নামায পড়লে তাঁর ও দেওয়ালের মাঝে ৩ হাত ব্যবধান ছিল। (বুখারী ৫০৬, আহমাদ, মুসনাদ, নাসাঈ, সুনান) তাঁর মুসাল্লা (সিজদার জায়গা) ও দেওয়ালের মাঝে একটি ছাগল (অথবা ভেঁড়া) পার হয়ে যাওয়ার মত (প্রায় আধহাত) ফাঁক বা দূরত্ব থাকত। (বুখারী ৪৯৬নং, মুসলিম, সহীহ)
প্রকাশ থাকে যে, সুতরার একেবারে সোজাসুজি না দাঁড়িয়ে তার একটু ডানে বা বামে সরে দাঁড়ানোর হাদীস শুদ্ধ নয়। (যইফ আবূদাঊদ, সুনান ১৩৬নং)
ইমামের সুতরাই মুক্তাদীদের সুতরাহ্
ইমামের সামনে সুতরাহ্ থাকলে মুক্তাদীদের জন্য পৃথক সুতরার দরকার হয় না। মহানবী (সাঃ) ঈদের দিন নামায পড়তে বের হলে তাঁর সামনে বর্শা গাড়া হত। তিনি তা সুতরাহ্ বানিয়ে নামায পড়তেন এবং লোকেরা তাঁর পশ্চাতে (বিনা সুতরায়) নামায পড়ত। (বুখারী ৪৯৪, মুসলিম, সহীহ ৫০১নং)
একদা তিনি বাত্বহায় নামায পড়লেন। তাঁর সামনে (সুতরাহ্) ছিল ছোট একটি বর্শা। আর তাঁর সম্মুখ বেয়ে মহিলা ও গাধা পার হয়ে যাচ্ছিল। (বুখারী ৪৯৫নং, মুসলিম, সহীহ ২৫২নং)
বিদায়ী হ্জ্জের সময় মহানবী (সাঃ) মিনায় নামায পড়ছিলেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) একটি গাধীর পিঠে চড়ে কিছু কাতারের সামনে বেয়ে পার হয়ে এসে নামলেন। অতঃপর গাধীটিকে চরতে ছেড়ে দিয়ে কাতারে শামিল হলেন। তা দেখে কেউ তাঁর প্রতিবাদ করল না। (বুখারী ৪৯৩, মুসলিম, মিশকাত ৭৮০নং)
নামাযীর সামনে বেয়ে পার হওয়া হারাম
মহানবী (সাঃ) বলেন, “যে নামাযীর সামনে বেয়ে পার হয়, সে যদি জানত যে, এতে তার কত পাপ হবে, তাহলে সে ৪০ (বছর বা মাস বা দিন নামাযীর সালাম ফিরার) অপেক্ষা করাকে ভাল মনে করত, তবুও নামাযীর সামনে বেয়ে অতিক্রম করত না।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৭৭৬ নং)
অবশ্য নামাযীর সামনে সুতরা থাকলে পার হওয়া হারাম বা গুনাহর কাজ নয়। অনুরুপ সুতরাহ্ না থাকলেও যদি নামাযীর সামনে প্রায় ৩ হাত দূর থেকে পার হয়, তাহলেও গুনাহ হবে না। (মাজমূ’ ফাতাওয়া, ইবনে বায ২/২৬৭)
কেউ সামনে বেয়ে পার হলে নামাযীর কর্তব্য
মহানবী (সাঃ) বলেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ সামনে সুতরাহ্ রেখে নামায পড়লে এবং কেউ তার ঐ সুতরার ভিতর দিয়ে পার হতে চাইলে সে যেন তার বুকে ঠেলে পার হতে বাধা দেয় ও যথাসম্ভব রুখতে চেষ্টা করে।” এক বর্ণনায় আছে, “তাকে যেন দু’ দু’ বার বাধা দেয়। এর পরেও যদি সে মানতে না চায় (এবং ঐ দিকেই পার হতেই চায়) তাহলে সে যেন তার সাথে লড়াই করে। কারণ, (বাধাদান সত্ত্বেও যে বাধা মানে না) সে তো শয়তান।” (বুখারী, মুসলিম,ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, মিশকাত ৭৭৭নং)
তিনি বলেন, “সুতরাহ্ ছাড়া নামায পড়ো না। কাউকে তোমার সামনে বেয়ে পার হতেও দিও না। (সুতরার ভিতর বেয়ে যেতে) সে যদি মানা না মানে, তবে তার সাথে লড়। কারণ, তার সাথে শয়তান আছে।” (ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ ৮০০নং)
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) জুমআর দিন একটি থামকে সুতরাহ্ করে নামায পড়ছিলেন। ইত্যবসরে বানী উমাইয়ার এক ব্যক্তি তাঁর ও থামের মাঝ বেয়ে পার হতে গেলে তিনি তাকে বাধা দিলেন। কিন্তু লোকটি পুনরায় পার হওয়ার চে ষ্টা করল। তিনি তার বুকে এক থাপ্পড় দিলেন। লোকটি মদ্বীনার গভর্নর মারওয়ানের নিকট তাঁর বিরুদ্ধে নালিশ জানাল। মারওয়ান আবূ সাঈদ (রাঃ) কে বললেন, ‘আপনি আপনার ভাইপোকে মেরেছেন কি কারণে?’ আবূ সাঈদ (রাঃ) বললেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ যখন কিছুকে সুতরাহ্ বানিয়ে নামায পড়ে, অতঃপর কেউ তার ঐ সুতরার ভিতর দিয়ে পার হতে চায়, তবে সে যেন তাকে বাধা দেয়। এতেও যদি সে না মানে, তাহলে সে যেন তার সাথে লড়াই করে। কারণ, সে তো শয়তান।” সুতরাং আমি শয়তানকেই তো মেরেছি!’ (ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ ৮১৭নং)
শুধু মানুষই নয়, কোন পশুও সামনে বেয়ে পার হতে চাইলে তাকেও বাধা দেওয়া উচিৎ। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘একদা নবী (সাঃ) নামায পড়ছিলেন। এমন সময় একটি ছাগল (বা ভেঁড়া) তাঁর সামনে দিয়ে ছুটে পার হতে চাইল। কিন্তু তিনি তার আগেই তাকে ধরে ফেললেন। এমনকি তার পেটকে দেওয়ালের সাথে লাগিয়ে দিলেন। অতঃপর ছাগল (বা ভেঁড়া)টি তাঁর পিছন দিক হতে পার হয়ে গেল।’ (আবূদাঊদ, সুনান ৭০৮-৭০৯, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ ৮২৭নং, ত্বাবা,হাকেম, মুস্তাদরাক)
সুতরাং বাধা দেওয়া ওয়াজেব এবং তাতে একটু নড়া-সরা দূষণীয় নয়।
বিনা সুতরায় নামায বাতিল কখন?
সুতরা রেখে নামায পড়লে এবং তার পশ্চাৎ বেয়ে কেউপার হয়ে গেলে নামাযীর নামাযে কোন ক্ষতি হয় না। (বুখারী ৪৯৯, মুসলিম, সহীহ ২৫২নং)
সুতরার ভিতর দিয়েও কোন পুরুষ, শিশু বা পশু পার হয়ে গেলে নামাযীর মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে ঠিকই, তবে নামায একেবারে নষ্ট হয়ে যায় না। পরন্তু বিনা সুতরায় নামায পড়লে এবং সামনে দিয়ে সাবালিকা মেয়ে, গাধা বা মিশমিশে কালো কুকুর পার হয়ে গেলে নামায বাতিল হয়ে যায়।
মহানবী (সাঃ) বলেন, “(সুতরাহ্ না হলে) সাবালিকা মেয়ে, গাধা ও কালো কুকুর নামায নষ্ট করে ফেলে।” আবূ যার বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! হ্লুদ ও লাল না হয়ে কালো কুকুরেই নামায নষ্ট করে তার কারণ কি?’ বললেন, “কারণ, কালো কুকুর শয়তান।” (মুসলিম, সহীহ ৫১০,আবূদাঊদ, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ)
নাবালিকা মেয়ে অতিক্রম করলে নামায নষ্ট হয় না। একদা বানী আব্দুল মুত্তালিবের দু’টি ছোট মেয়ে মারামারি করতে করতে তাঁর সামনে এসে তাঁর হাঁটু ধরে ফেলল। তিনি উভয়কে দু’দিকে সরিয়ে দিলেন। আর এতে তিনি নামায ভাঙ্গলেন না। (আবূদাঊদ, সুনান ৭১৬, ৭১৭, নাসাঈ, সুনান ৭২৭নং)
যেমন নিজের স্ত্রী বা কোন মহিলা নামাযীর সামনে ঢাকা নিয়ে অন্ধকারে ঘুমিয়ে থাকলে নামাযের কোন ক্ষতি হয় না। আল্লাহর রসূল (সাঃ) রাত্রে তাহাজ্জুদ পড়তেন, আর আয়েশা (রাঃ) তাঁর সামনে জানাযার লাশের মত শুয়ে ঘুমাতেন। (বুখারী ৫০৮, মুসলিম, সহীহ ৫১২, মিশকাত ৭৭৯নং) যেমন তিনি কখনো কখনো চাদরের ভিতর থেকে পায়ের দিকে চুপে চুপে নিজের প্রয়োজনে বের হয়ে যেতেন। এতেও তাঁর নামাযের কোন ক্ষতি হ্তো না। (ঐ) এক বর্ণনায় আছে, ‘তখন ঘরে বাতি ছিল না।’ (বুখারী ৫১৩, মুসলিম, সহীহ ৫১২নং)
প্রকাশ যে, কোন মহিলা-নামাযীর সামনে বেয়ে (বিনা সুতরায়) কোন (সাবালিকা) মেয়ে পার হলেও নামায নষ্ট হয় না। (আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ ২৩৫৬ নং, মুহাল্লা ৪/১২, ২০)
Copy from হাদিস বিডি
"মসজিদ ও নামায পড়ার জায়গা সম্পর্কিত "
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
সুন্দর স্বাবলম্বী ভাষায় কমেন্ট করার অনুরোধ রইলো.....