নিশ্চয়ই সকল আমাল (এর প্রতিদান) নির্ভর করে নিয়াতের উপর, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই রয়েছে, যা সে নিয়াত করে। (১:১ বুখারিঃ তাওহীদ পাবলিকেশন)

নবী (সাঃ) যেভাবে হজ করেছেন

[1]জাবের (রা.) [2] বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মদীনায় বসবাসকালে দীর্ঘ নয় বছর পর্যন্ত হজ করেননি।[3] হিজরী দশম বছরে চারিদিকে ঘোষণা দেয়া হল, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ বছর [4]  হজ করবেন। অসংখ্য লোক মদীনায় এসে জমায়েত হল। বাহনে চড়া অথবা পায়ে হাঁটার সামর্থ রাখে এরকম কোন ব্যক্তি অবশিষ্ট রইলনা [5]। সবাই এসেছেন রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে বের হওয়ার জন্য [6]। সবার উদ্দেশ্য, রাসূলুল্লাহ ﷺএর অনুসরণ করে তাঁর মতই হজের আমল সম্পন্ন করা। জাবের রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন [7] এবং বললেন, মদীনাবাসিদের ইহরাম বাঁধার স্থান হচ্ছে, যুল-হুলাইফা[8]।অন্যপথের (লোকদের ইহরাম বাঁধার স্থান) আল-জুহফা[9], ইরাকবাসিদের ইহরাম বাঁধার স্থান যাতু ইরক।[10] নজদবাসিদের ইহরাম বাঁধার স্থান করন এবং  ইয়ামানবাসিদের ইহরাম বাঁধার স্থান, ইয়ালামলাম [11]
 [12]  তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যিলকদ মাসের পাঁচ দিন অথবা চার দিন অবশিষ্ট থাকতে বের হলেন।[13]  এবং হাদী তথা কুরবানীর পশু পাঠিয়ে দিলেন।[14]  আমরা তাঁর সাথে বের হলাম। আমাদের সাথে ছিল মহিলা ও শিশু।
[15]  যখন আমরা যুল-হুলাইফাতে[16] পৌঁছলাম। তখন আসমা বিন্ত উমায়েস রা. মুহাম্মদ ইবন আবূ বকর নামক এক সন্তান প্রসব করলেন। অতপর তিনি রাসূলুল্লাল্লাহ ﷺ এর কাছে লোক পাঠিয়ে জানতে চাইলেন যে, আমি কী করব? তিনি বললেন, ‘তুমি গোসল কর, রক্তক্ষরণের স্থানে একটি কাপড় বেঁধে নাও এবং ইহরাম বাঁধ।’ এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ মসজিদে সালাত আদায় করলেন এবং চুপচাপ রইলেন।
[17]

ইহরাম

অতপর কাসওয়া [18] নামক উটনীতে সওয়ার হলেন। উটনীটি তাঁকে নিয়ে বাইদা নামক জায়গায় গেলে তিনি ও তাঁর সাথিগণ হজের তালবিয়া পাঠ করলেন।
[19]  জাবের রা. বলেন, আমি আমার দৃষ্টি যতদূর যায় তাকিয়ে দেখলাম, তাঁর সামনে কেবল আরোহী ও পায়ে হেঁটে [20] যাত্রারত মানুষ আর মানুষ। তাঁর ডানে অনুরূপ, তাঁর বামেও অনুরূপ তাঁর পেছনেও অনুরূপ মানুষ আর মানুষ। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের মাঝে অবস্থান করছিলেন। তাঁর ওপর পবিত্র কুরআন নাযিল হয়। তিনিই তো তার ব্যাখ্যা জানেন। তাই তিনি যে আমল করছিলেন আমরা হুবহু তাই আমল করছিলাম।[21]  তিনি তাওহীদ সম্বলিত[22]  তালবিয়া পাঠ করেন, ( লাববাইক আল্লাহুম্মা লাববাইক, লাববাইকা লা শারীকা লাকা লাববাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারীকা লাক )

‘আমি হাযির, হে আল্লাহ, আমি হাযির। তোমার কোন শরীক নেই, আমি হাযির। নিশ্চয় যাবতীয় প্রশংসা ও নিয়ামত তোমার এবং রাজত্বও, তোমার কোন শরীক নেই। [23]

আর মানুষেরাও যেভাবে পারছিল এই তালবিয়া পাঠ করছিল। তারা কিছু বাড়তি বলছিল। যেমন, (লাববাইকা যাল মাআরিজি, লাববাইকা যাল ফাওয়াযিলি)

কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদেরকে তা রদ করতে বলেননি।[24]  তবে তিনি বারবার তালবিয়া পাঠ করছিলেন।  জাবের রা. বলেন, আমরা বলছিলাম, لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ (লাববাইক আল্লাহুম্মা) لَبَّيْكَ ِبالحَجِ (লাববাইকা বিল-হাজ্জ)। আমরা খুব চিৎকার করে তা বলছিলাম। আর আমরা কেবল হজেরই নিয়ত করছিলাম। তখনো আমরা হজের সাথে উমরার কথা জানতাম না।
[25] আর আয়েশা রা. উমরার নিয়ত করে এলেন। ‘সারিফ [26] ’নামক স্থানে এসে তিনি ঋতুবতী হয়ে গেলেন।[27]

মক্কায় প্রবেশ ও বায়তুল্লাহর তাওয়াফ

এমনিভাবে আমরা তাঁর সাথে বায়তুল্লাহ্ এসে পৌঁছলাম। সময়টা ছিল যিলহজের চার তারিখ ভোরবেলা।
[28] নবী ﷺ মসজিদের দরজার সামনে এলেন। অতপর তিনি তাঁর উট বসালেন। তারপর মসজিদে প্রবেশ করলেন। তিনি হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করলেন।এরপর তিনি তাঁর ডান দিকে চললেন।[29] অতপর তিনি তিন চক্করে রমল [30] করতে করতে হাজরে আসওয়াদের কাছে আসলেন। আর চতুর্থ চক্করে স্বাভাবিকভাবে হাঁটলেন। এরপর মাকামে ইবরাহীম আ.-এ পৌঁছে এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন: (ওয়াত্তাখিযূ মিম মাকামি ইবরাহীমা মুসাল্লা)

তিনি উচ্চস্বরে এই আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন যাতে লোকেরা শুনতে পায়।
[31] এরপর মাকামে ইবরাহীমকে তাঁর ও বায়তুল্লাহ্র মাঝখানে রেখে দুই রাক‘আত সালাত আদায় করলেন।[32] তিনি এ দু’রাক‘আত সালাতে সূরা কাফিরূন ও সূরা ইখলাস পড়েছিলেন।
[33] এরপর তিনি যমযমের কাছে গিয়ে যমযমের পানি পান করলেন এবং তাঁর নিজের মাথায় ঢাললেন।
[34] এরপর তিনি হাজরে আসওয়াদের নিকট গিয়ে তা স্পর্শ করলেন।

সাফা ও মারওয়ায় অবস্থান

তারপর সাফা দরজা দিয়ে বের হয়ে সাফা পাহাড়ে গেলেন। সাফা পাহাড়ের কাছাকাছি এসে পাঠ করলেন: নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। আল্লাহ যা দিয়ে শুরু করেছেন, আমিও তা দিয়ে শুরু করছি। অতপর তিনি সাফা দিয়ে শুরু করলেন এবং কাবাঘর দেখা যায় এমন উঁচুতে উঠলেন।অতপর তিনি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর একত্ববাদ, বড়ত্ব ও প্রশংসার ঘোষণা দিয়ে বললেন, ( লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু লাহুল্ মুল্কু ওয়ালাহুল হাম্দু ইউহয়ী ওয়া ইয়ুমীতু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু আনজাযা ওয়াদাহু, ওয়া নাছারা আবদাহু ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহ্ )

আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি এক। তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই। প্রশংসাও তাঁর। তিনি জীবন ও মৃত্যু দেন। আর তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি এক। তাঁর কোন শরীক নেই। তিনি তাঁর অঙ্গীকার পূর্ণ করেছেন; তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই শত্রু-দলগুলোকে পরাজিত করেছেন।
[35] অতপর এর মাঝে তিনি দু‘আ করলেন এবং এরূপ তিনবার পাঠ করলেন। এরপর মারওয়া পাহাড়ের দিকে হেঁটে অগ্রসর হলেন। যখন তিনি বাতনুল-ওয়াদীতে পদার্পন করলেন, তখন তিনি দৌড়াতে লাগলেন। যখন তিনি ‘উপত্যকার অপর প্রান্তে’ [36] এসে গেলেন, তখন তিনি স্বাভাবিক গতিতে চলতে লাগলেন। মারওয়ায় এসে তিনি তাতে আরোহন করলেন এবং বায়তুল্লাহর দিকে তাকালেন।[37] অতপর সাফা পাহাড়ে যা করেছিলেন মারওয়া পাহাড়েও তাই করলেন।

রাসূল (সাঃ) যেভাবে হজ্ব  করেছেন পর্ব – ২
হজকে উমরায় পরিণত করার আদেশ

মারওয়া পাহাড়ে শেষ চক্করকালে তিনি বললেন, হে লোকসকল! “আমি পরে যা বুঝেছি তা যদি আগে বুঝতে পারতাম, তাহলে হাদী বা কুরবানীর পশু সাথে নিয়ে আসতাম না এবং হজকে উমরায় পরিণত করতাম। তোমাদের মধ্যে যার সাথে হাদী বা পশু নেই সে যেন হালাল হয়ে যায় এবং এটাকে উমরায় পরিণত করে।” [38]

অন্য বর্ণনায় এসেছে: “বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার মাঝে সা‘ঈ করে তোমরা তোমাদের ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাও এবং চুল ছোট করে ফেল। অতপর হালাল হয়ে অবস্থান কর। এমনিভাবে যখন তারবিয়া দিবস” [39] (যিলহজের আট তারিখ) হবে, তখন তোমরা হজের ইহরাম বেঁধে তালবিয়া পাঠ কর। আর তোমরা যে হজের ইহরাম করে এসেছ, সেটাকে তামাত্তুতে পরিণত কর।” [40]

তখন সুরাকা ইব্‌ন মালিক ইব্‌ন জু‘শুম রা. মারওয়া পাহাড়ের পাদদেশে ছিলেন, তিনি দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাদের এই উমরায় রূপান্তর করে তামাত্তু করা কি শুধু এ বছরের জন্য নাকি সব সময়ের জন্য? তখন নবী ﷺ দু’হাতের আঙ্গুলগুলো পরস্পরের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে বললেন: “হজের ভেতরে উমরা কিয়ামত দিন পর্যন্ত প্রবিষ্ট হয়েছে। না, বরং তা সবসময়ের জন্য, না, বরং তা সবসময়ের জন্য এ কথাটি তিনি তিনবার বললেন।” [41]

সুরাকা ইব্‌ন মালিক রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাদেরকে দীনের ব্যাখ্যা দিন, আমাদেরকে যেন এখনই সৃষ্টি করা হয়েছে (অর্থাৎ আমাদেরকে সদ্যভূমিষ্ট সন্তানের ন্যায় দীনের তালীম দিন)। আজকের আমল কিসের ওপর ভিত্তি করে? কলম যা লিখে শুকিয়ে গিয়েছে এবং তাকদীর যে বিষয়ে অবধারিত হয়ে গিয়েছে, তার ভিত্তিতে? [42] না কি ভবিষ্যতে রচিতব্য নতুন কোন বিষয়ের ভিত্তিতে? তিনি বললেন: “না, বরং যা লিখে কলম শুকিয়ে গিয়েছে এবং যে ব্যাপারে তাকদীর নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে, তা-ই তোমরা আমল করবে। তিনি বললেন, তাহলে আর আমলের দরকার কী?” [43]

তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন: [اعْمَلُوا فَكُلٌّ مُيَسَّرٌ لِمَا خُلِقَ لَهُ  [44

‘তোমরা আমল করে যাও, তোমাদের কেউ যে জন্য সৃষ্ট হয়েছ তার জন্য সে কাজ করা সহজ করে দেয়া হয়েছে। [45]

জাবের (রা.) বলেন, তিনি আমাদেরকে আদেশ দিলেন, আমরা হালাল হয়ে গেলে যেন হাদীর ব্যবস্থা করি। [46] আমাদের মধ্য থেকে এক উটে সাতজন অংশ নিতে পারে।
[47] যার সাথে হাদী নেই সে যেন হজের সময়ে তিনদিন রোযা রাখে আর যখন নিজ পরিবারের নিকট অর্থাৎ দেশে ফিরে যাবে তখন যেন সাতদিন রোযা রাখে।[48] অতপর আমরা বললাম, কী হালাল হবে? তিনি বললেন, সব কিছু হালাল হয়ে যাবে। [49]

বিষয়টি আমাদের কাছে কঠিন মনে হল এবং আমাদের অন্তর সংকুচিত হয়ে গেল।[50] বাতহা নামক জায়গায় অবস্থান

জাবের (রা.) বলেন: “আমরা বের হয়ে বাতহা নামক স্থানে গেলাম।” [51] তিনি বলেন, এমতাবস্থায় এক লোক বলতে লাগল, আজকে আমার পরিবারের সাথে আমার সাক্ষাতের পালা। [52]
জাবের রা. বলেন, আমরা পরস্পর আলোচনা করতে লাগলাম। অতপর আমরা বললাম, আমরা হাজী হিসেবে বের হয়েছিলাম। হজ ছাড়া আমরা অন্য কিছুর নিয়ত করিনি। এমতাবস্থায় আমাদের কাছে আরাফা দিবস আসতে যখন আর মাত্র চার দিন বাকী।[53] এক বর্ণনায় এসেছে,” পাঁচ রাত্রি, তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে নির্দেশ দিলেন, যেন আমরা আমাদের স্ত্রীদের সাথে মিলিত হই। অতপর আমরা আরাফার উদ্দেশ্যে (মিনা) গমন করি, অথচ আমাদের পুরুষাঙ্গগুলি সবে মাত্র বীর্যস্খলন করেছে। জাবের রা. এটি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে দেখাচ্ছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি যেন জাবের রা. এর কথার সাথে হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে দেখানোর ব্যাপারটি দেখতে পাচ্ছি। মোট কথা, তাঁরা বললেন, আমরা কিভাবে তামাত্তু করব অথচ আমরা শুধু হজের নাম উল্লেখ করেছি।“ [54]

জাবের (রা.) বলেন: “বিষয়টি নবী ﷺএর কাছে পৌঁছল। আমরা জানি না এটা কি আসমান থেকে তাঁর নিকট পৌঁছল নাকি মানুষের নিকট থেকে পৌঁছল।” [55]

হজকে উমরায় পরিণত করার জোর তাগিদ দিয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ভাষণ এবং সাহাবীগণের তাঁর আনুগত্য। অতপর রাসূলুল্লাহ ﷺ দাঁড়িয়ে [56] মানুষের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণাবলি বর্ণনা করে বললেন,[57] হে মানুষ, তোমরা কি আমাকে আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান দিচ্ছ? [58] তোমরা জানো, নিশ্চয় আমি তোমাদের চেয়ে আল্লাহকে বেশি ভয় করি, তোমাদের চেয়ে অধিক সত্যবাদী, তোমাদের চেয়ে অধিক সৎকর্মশীল।আমি তোমাদেরকে যা নির্দেশ করছি তা পালন কর। [59] আমার সাথে যদি হাদী (যবেহের পশু) না থাকত, তাহলে আমি অবশ্যই হালাল হয়ে যেতাম যেরূপ তোমরা হালাল হয়ে যাচ্ছ। কিন্তু যতক্ষণ না হাদী তার নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছবে, [অর্থাৎ দশ তারিখ হাদী যবেহ না হবে] ততক্ষণ আমার পক্ষে হারামকৃত বিষয়াদি হালাল হবে না।[60] যদি আমি পরে যা জেনেছি পূর্বেই তা জানতাম, তাহলে হাদী সাথে নিয়ে আসতাম না। অতএব, তোমরা হালাল হয়ে যাও।[61]

জাবের (রা.) বলেন, আমরা আমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করলাম এবং সুগন্ধি ব্যবহার করলাম।[62] আমরা আমাদের স্বাভাবিক পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করলাম। আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺএর কথা শুনলাম এবং মেনে নিলাম।[63] অতপর নবী ﷺ নিজে এবং যাদের সাথে হাদী ছিল [64] তারা ছাড়া সবাই হালাল হয়ে গেল এবং চুল ছোট করল।[65] রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর মত ইহরাম বেঁধে ইয়ামান থেকে আলী রা.-এর আগমন

এদিকে আলী (রা.) তাঁর কর্মস্থল ইয়ামান থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লমের উটগুলো নিয়ে আগমন করলেন।[66] তিনি ফাতিমা (রা.) কে তাদের মধ্যে পেলেন যারা হালাল হয়েছেন। তিনি মাথা আঁচড়িয়েছেন, [67] রঙ্গীন পোশাক পরেছেন এবং সুরমা ব্যবহার করেছেন। তিনি ফাতিমা রা. কে এই অবস্থায় দেখে তা অপছন্দ করলেন। তিনি বললেন, তোমাকে এ রকম করার জন্য কে নির্দেশ দিয়েছে? [68] ফাতেমা (রা.) বললেন, আমার পিতা আমাকে এ রকম করার নির্দেশ দিয়েছেন।

জাবের (রা.) বলেন, আলী রা. ইরাকে থাকা অবস্থায় বলতেন, ফাতেমার কৃতকর্মের ওপর উত্তেজিত অবস্থায় আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে গেলাম, ফাতেমা যা রাসূলের বরাত দিয়ে বলেছেন সে সম্পর্কে তাঁর কাছে জিজ্ঞেস করলাম। আমি রাসূলকে জানালাম যে, আমি ফাতেমার এ কাজ অপছন্দ করেছি; কিন্তু সে আমাকে বলেছে, আমার পিতা আমাকে এরকম করতে নির্দেশ দিয়েছেন।[69] তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, “সে সত্য বলেছে, সে সত্য বলেছে, সে সত্য বলেছে। [70] আমিই তাকে এরকম করতে নির্দেশ দিয়েছি।” [71]

জাবের (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ আলী (রা.) কে বললেন, হজের নিয়ত করার সময় তুমি কী বলেছিলে? তিনি বললেন, আমি বলেছি, হে আল্লাহ, নিশ্চয় আমি এভাবে ইহরাম বাঁধছি যেভাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ ইহরাম বেঁধেছেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আমার সাথে হাদী রয়েছে। সুতরাং তুমি হালাল হয়ো না। তুমি হারাম অবস্থায়ই থাকো যেমন আছ। [72]

জাবের (রা.) বলেন, ইয়ামান থেকে আলী (রা.) কর্তৃক আনিত হাদী এবং ‘মদীনা থেকে’ [73]  রাসূলুল্লাহ ﷺ কর্তৃক আনিত হাদীর ‘মোট সংখ্যা ছিল একশত উট। [74]

জাবের (রা.) বলেন, নবী ﷺ ও যাদের সাথে হাদী ছিল, তাঁরা ছাড়া সব মানুষ হালাল হয়ে গেল এবং চুল ছোট করল।

৮ যিলহজ ইহরাম বেঁধে মিনা যাত্রা

অতপর যখন তারবিয়া দিবস (যিলহজের আট তারিখ) হল, তখন তাঁরা ‘তাদের আবাসস্থল বাতহা থেকে’ [75] হজের ইহরাম বেঁধে মিনা অভিমুখে রওয়ানা হলেন। জাবের (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আয়েশার কাছে গেলেন। তিনি তাঁকে ক্রন্দনরত অবস্থায় পেলেন। তখন তিনি বললেন, তোমার কী হয়েছে? আয়েশা (রা.) বললেন, আমার হায়েয এসে গেছে। লোকজন হালাল হয়ে গিয়েছে; কিন্তু আমি হালাল হতে পারিনি। বায়তুল্লাহর তাওয়াফও করিনি। অথচ সব মানুষ এখন হজে যাচ্ছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এটা এমন একটি বিষয়, যা আল্লাহ আদমের কন্যা সন্তানদের ওপর নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুতরাং তুমি গোসল করে নাও। অতপর হজের তালবিয়া পাঠ কর। তারপর তুমি হজ কর এবং হজকারী যা করে তুমিও তা কর; কিন্তু বায়তুল্লাহ্র তাওয়াফ করো না এবং সালাত আদায় করো না। [76] অতপর তিনি তাই করলেন, কিন্তু বায়তুল্লাহ্র তাওয়াফ করলেন না। [77]

আর রাসূলুল্লাহ ﷺ উটের পিঠে আরোহন করলেন।[78] তিনি আমাদেরকে নিয়ে মিনায় যোহর, আসর, মাগরিব, ইশা ও ফজরের সালাত আদায় করলেন।[79] অতপর তিনি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন। এভাবেই সূর্য উদিত হলো।[80] তিনি নামিরা নামক স্থানে তাঁর জন্য একটি পশমের তাবু স্থাপন করার নির্দেশ দিলেন।[81]

আরাফায় যাত্রা ও নামিরাতে অবস্থান

এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ রওয়ানা হলেন। কুরাইশদের এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ ছিল না যে, তিনি মাশ’ আরে হারাম (অর্থাৎ) মুযদালিফাতেই [82] অবস্থান করবেন এবং সেখানেই তাঁর অবস্থানস্থল হবে। কেননা কুরাইশরা জাহেলী যুগে এরকম করত।[83] কিন্তু রাসুলূল্লাহ ﷺ মাশ‘আরে হারাম অতিক্রম করে আরাফায় উপনীত হলেন এবং নামিরা নামক স্থানে তাঁর জন্য তাঁবু তৈরি করা অবস্থায় পেলেন। তিনি সেখানে অবতরণ করলেন। অতপর যখন সূর্য হেলে পড়ল, তখন তিনি কসওয়া নামক উটনীটি আনতে বললেন এবং তাতে সওয়ার হয়ে উপত্যকার মধ্যে এসে থামলেন। [84]

আরাফার ভাষণ

অতপর তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন এবং বললেন,

⇒⇂‘নিশ্চয় তোমাদের রক্ত ও তোমাদের সম্পদ তোমাদের জন্য সম্মানিত। যেমন তোমাদের এই শহরে, তোমাদের এই মাসে, তোমাদের এই দিন সম্মানিত’।
⇒‘জেনে রাখো! নিশ্চয় জাহিলিয়াতের প্রত্যেকটি বিষয় আমার এই দুই পায়ের তলে রাখা হল’।
‘জাহিলী যুগের যাবতীয় রক্তের দাবী রহিত করা হল। আমাদের রক্তের দাবীসমূহের মধ্যে প্রথম রক্তের দাবী যা রহিত করা হল, তা ইবন রবী‘আ ইবনুল-হারিসের রক্তের দাবী। সে সা‘দ গোত্রে দুধ পানরত অবস্থায় ছিল। হুযাইল গোত্র তাকে হত্যা করেছিল’।
⇒ ‘জাহেলী যুগের সুদ রহিত করা হল। সর্বপ্রথম যে সুদের দাবী রহিত করছি তা হল আববাস ইব্‌ন আবদুল মুত্তালিবের সুদ। তার পুরোটাই রহিত করা হল’।
⇒‘আর তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। কেননা তোমরা তাদেরকে আল্লাহ্র আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছ এবং তাদের লজ্জাস্থানসমূহকে আল্লাহর বাণী দ্বারা হালাল করে নিয়েছ।‘ [85]
⇒‘নিশ্চয় তোমাদের ব্যাপারে তাদের ওপর দায়িত্ব হচ্ছে, তারা যেন তোমাদের বিছানাসমূহকে এমন কোন ব্যক্তি দ্বারা পদদলিত না করে যাকে তোমরা অপছন্দ কর (অর্থাৎ তারা যেন পরপুরুষদেরকে তাদের কাছে আসার অনুমতি না দেয়)। যদি তারা তা করে, তবে তোমরা তাদেরকে মৃদুভাবে প্রহার কর।’
⇒‘আর তাদের ব্যাপারে তোমাদের উপর দায়িত্ব হচ্ছে, উত্তম পন্থায় তাদের ভরণ-পোষণ ও পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যবস্থা করা’।
⇒‘আমি তোমাদের মধ্যে এমন এক বিষয় রেখে যাচ্ছি, যা তোমরা আঁকড়ে ধরলে আর কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো, আল্লাহর কিতাব’।
⇒‘আমার ব্যাপারে তোমাদেরকে প্রশ্ন করা হবে, তখন তোমরা কী বলবে ? তারা বলল, আমরা সাক্ষী দিচ্ছি, নিশ্চয় আপনি আপনার রবের বাণীসমূহ পৌঁছিয়ে দিয়েছেন, অর্পিত দায়িত্ব আদায় করেছেন, উম্মতকে উপদেশ দিয়েছেন’।
⇒‘অতপর তিনি তাঁর শাহাদাত অঙ্গুলী আকাশের দিকে তুলে মানুষের দিকে ইশারা করে বললেন, হে আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকুন, হে আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকুন, হে আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকুন’।
দুই ওয়াক্ত সালাত একসাথে আদায় ও আরাফায় অবস্থান
এরপর বিলাল (রা.) একবার আযান দিলেন। [86] অতপর ইকামত দিলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ (সবাইকে নিয়ে) যোহরের সালাত আদায় করলেন। বিলাল রা. পুনরায় ইকামত দিলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ আসরের সালাতও আদায় করলেন। তিনি উভয় সালাতের মাঝখানে অন্য কোন সালাত আদায় করেননি। অতপর রাসূলুল্লাহ ﷺ ‘কাসওয়া নামক উটনীর’ [87] পিঠে আরোহন করলেন। এভাবে তিনি উকূফের স্থানে এলেন। তাঁর উটনী কসওয়ার পেট পাথরের [88] দিকে ফিরিয়ে রাখলেন। যারা পায়ে হেঁটে তাঁর সাথে এসেছিলেন, তিনি তাঁদের সকলকে তাঁর সামনে রাখলেন এবং কিবলামুখী হলেন।[89] সূর্য ডুবে যাওয়া পর্যন্ত তিনি সেখানেই উকূফ করলেন। এমনিভাবে (পশ্চিম আকাশের) হলুদ আভা ফিকে হয়ে গেল এমনকি লালিমাও দূর হয়ে গেল। [90]

আর তিনি বললেন, ‘আমি এখানে উকূফ করলাম; কিন্তু আরাফার পুরো এলাকা উকূফের স্থান।’ [91]

এরপর তিনি উসামা ইব্‌ন যায়েদ রা. কে তাঁর উটনীর পেছনে বসালেন।


আরাফা থেকে প্রস্থান

অতপর রাসূলুল্লাহ ﷺ মুযদালিফার দিকে রওয়ানা হলেন। ‘আর তিনি ছিলেন শান্ত-সুস্থির।’ [92] তিনি কাসওয়া নামক উষ্ট্রীর লাগাম শক্তভাবে টেনে ধরলেন, এমনকি উষ্ট্রীর মাথা তাঁর হাওদার সাথে ছুঁয়ে যাচ্ছিল। আর তিনি তাঁর ডান হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন, ‘হে লোকসকল! শান্ত হও শান্ত হও, ধীর-স্থিরভাবে এগিয়ে চল’। যখনই তিনি কোন বালুর টিলায় পৌঁছছিলেন, তখনই তা অতিক্রম করার সুবিধার্থে উষ্ট্রীর রশি ঢিলা করে দিচ্ছিলেন। এমনিভাবে তাতে উঠে তা অতিক্রম করছিলেন।

মুযদালিফায় একসাথে দুই সালাত আদায় এবং সেখানে রাত্রি যাপন

এভাবে তিনি মুযদালিফায় এলেন। অতপর এক আযান ও দুই ইকামতসহ মাগরিব ও ইশার সালাত একসাথে আদায় করলেন এবং এ দুই সালাতের মাঝখানে তিনি কোন তাসবীহ বা নফল সালাত আদায় করলেন না। এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ শুয়ে পড়লেন। এভাবেই সুবহে সাদেক উদিত হল। ফজরের সময় সুস্পষ্ট হওয়ার পর ( আওয়াল ওয়াক্তে ) আযান ও ইকামতের পর ফজরের সালাত আদায় করলেন।

মাশ‘আরে হারাম তথা মুযদালিফায় অবস্থান

অতপর তিনি কাসওয়ায় আরোহন করে মাশ‘আরে হারামে এলেন। [93] অতপর তিনি তাতে আরোহন করলেন।’ [94] এরপর তিনি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর কাছে দু‘আ করলেন। ‘অতপর আল্লাহর প্রশংসা করলেন।’ [95] তাঁর মহত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব ও একত্ববাদের ঘোষণা দিলেন। পূর্ব আকাশ পূর্ণ ফর্সা হওয়া পর্যন্ত তিনি সেখানে উকূফ করলেন। তিনি বললেন, ‘আমি এখানে উকূফ করেছি; তবে মুযদালিফার পুরোটাই উকূফের স্থান।’ [96]

জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপের উদ্দেশ্যে মুযদালিফা থেকে রওয়ানা

অতপর তিনি সূর্য উঠার পূর্বেই ‘মুযদালিফা’ [97] থেকে মিনার দিকে রওয়ানা হলেন। [98] ‘আর তিনি ছিলেন শান্ত ও সুস্থির।[99] ’তিনি ফযল ইবন আববাস রা কে নিজের উটনীর পেছনে বসালেন। [100] আর তিনি ছিলেন সুন্দর চুল ও উজ্জ্বল ফর্সা চেহারার অধিকারী। রাসুলূল্লাহ ﷺ যখন মিনার দিকে রওয়ানা হলেন। তখন তাঁর কাছ দিয়ে কতিপয় মহিলা চলতে লাগল, আর ফযল তাদের দিকে তাকাতেন লাগলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর হাত ফযলের চেহারায় রাখলেন। তখন ফযল তার চেহারা অন্য দিকে ফিরিয়ে নিলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর হাত অন্য দিক থেকে সরিয়ে ফযলের চেহারার ওপর আবার রেখে যেদিকে তিনি তাকাচ্ছিলেন সেদিক থেকে তার চেহারা ঘুরিয়ে দিলেন। অবশেষে তিনি মুহাস্সার উপত্যকার মধ্যস্থলে [101] পৌঁছলে উটের গতি কিছুটা বাড়িয়ে দিলেন এবং বললেন, তোমরা শান্ত ও সুস্থিরভাবে চল। [102]

বড় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ

তারপর তিনি মাঝপথ ধরে চলতে লাগলেন [103], যা বড় জামরার কাছ দিয়ে বের হয়ে গেছে।’ [104] অবশেষে তিনি গাছের সন্নিকটে অবস্থিত জামরায় এসে পৌঁছলেন।অতপর ‘সূর্য পূর্ণ আলোকিত হওয়ার পর’ [105] তিনি বড় জামরাতে সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করলেন। প্রতিটি কঙ্কর নিক্ষেপের সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বললেন। প্রত্যেকটি কঙ্কর ছিল বুটের ন্যায়।[106] তিনি তাঁর বাহনে আরোহন অবস্থায় উপত্যকার মধ্যভাগ থেকে কঙ্কর নিক্ষেপ করেন ‘আর তিনি’ [107] বলছিলেন, তোমরা তোমাদের হজের বিধি-বিধান শিখে নাও। কারণ আমি জানি না, হয়ত আমি এই হজের পরে আর হজ করতে পারব না।[108]

জাবের রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ‘তাশরীকের সব দিনেই’ [109] ‘সূর্য হেলে যাওয়ার পরে’ [110] কঙ্কর নিক্ষেপ করলেন। [111] তিনি আকাবা তথা বড় জামরাতে কঙ্কর নিক্ষেপকালে সুরাকা তাঁর সাথে সাক্ষাত করলেন। অতপর বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, এটা কি খাস করে আমাদের জন্য ? তিনি বললেন, না, বরং সবসময়ের জন্য।[112]

পশু যবেহ ও মাথা মুন্ডন

অতপর তিনি পশু যবেহের স্থানে গেলেন। তারপর নিজ হাতে তেষট্টিটি ‘উট’ [113] যবেহ করলেন।অতপর আলী রা. কে অবশিষ্টগুলো যবেহ করার দায়িত্ব দিলেন তিনি তাকে নিজের হাদীতে শরীক রাখলেন। এরপর প্রত্যেক যবেহকৃত উট থেকে এক টুকরো করে নিয়ে রান্না করতে নির্দেশ দিলেন। তখন টুকরোগুলো এক পাতিলে রেখে রান্না করা হল। অতপর দুজনে তার শুরবা পান করলেন। [114] এক বর্ণনায় রয়েছে, ‘জাবের রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ নিজের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে একটি গাভি যবেহ করেন।’ [115] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘তিনি সাত জনের পক্ষ থেকে একটি উট যবেহ করেন। আর সাতজনের পক্ষ থেকে একটি গাভি যবেহ করেন।’[116] ‘অতপর আমরা সাতজন উটে শরীক হলাম। এক লোক রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলল, আপনি কি মনে করেন, গাভিতেও শরীক হওয়া যাবে? তখন তিনি বললেন, গাভিতো উটের (বিধানের) অন্তর্ভুক্ত। [117]

জাবের রা. বলেন, আমরা মিনায় তিনদিন উটের গোশত খেয়ে তারপর খাওয়া থেকে বিরত রইলাম। [118] অতপর রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে অনুমতি দিয়ে বললেন, তোমরা খাও এবং পাথেয় হিসেবে রেখে দাও।’ [119]

‘জাবের রা. বলেন, অতপর আমরা খেলাম এবং জমা করে রাখলাম।’ [120] ‘এভাবে সেগুলো নিয়ে আমরা মদীনায় পৌঁছলাম।[121]

১০ যিলহজের আমলে ধারাবাহিকতা রক্ষা না হলে কোন অসুবিধা নেই

জাবের (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ পশু যবেহ করলেন, ‘অতপর মাথা মুন্ডন করলেন।’ [122] ‘
কুরবানীর দিন মিনায়’ [123] মানুষের (প্রশ্নোত্তরের) জন্য বসলেন। ‘সে দিনের’ [124] আমলগুলোতে ‘আগে পরে হয়েছে’ [125]  এমন বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘কোন সমস্যা নেই, কোন সমস্যা নেই’। [126]

এক ব্যক্তি এসে বলল, আমি যবেহ করার পূর্বে মাথা মুন্ডন করে ফেলেছি। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন,কোনো সমস্যা নেই। অন্য একজন এসে বলল, ‘আমি কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্বে মাথা মুন্ডন করে ফেলেছি, তিনি বললেন,কোনো সমস্যা নেই। তারপর ‘আরেক জন এসে বলল, আমি কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্বে তাওয়াফ করেছি, তিনি বললেন,কোনো সমস্যা নেই। [127] অন্য এক ব্যক্তি এসে বলল, আমি পশু যবেহের আগে তাওয়াফ করেছি। তিনি বললেন,যবেহ কর, কোনো সমস্যা নেই।[128] তারপর অন্য আরেক ব্যক্তি এসে বলল, ‘আমি কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্বে কুরবানী করে ফেলেছি। তিনি বললেন,নিক্ষেপ কর। কোন সমস্যা নেই।’ [129] ‘অতপর আল্লাহর নবী ﷺ বললেন, আমি এখানে যবেহ করলাম, আরা মিনা পুরোটাই যবেহের স্থান।’ [130]  মক্কার প্রতিটি অলিগলি চলার পথ এবং যবেহের স্থান।’ [131] অতএব, তোমরা তোমাদের অবস্থানস্থলে থেকে পশু যবেহ কর।[132]

ইয়াউমুন-নহর তথা ১০ তারিখের ভাষণ

জাবের রা. বলেন, ‘কুরবানীর দিন আমাদের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ ﷺ ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন,

⇒ ‘সম্মানের দিক থেকে কোন্ দিনটি সবচে’ বড় ? তাঁরা বললেন, আমাদের এই দিনটি।
⇒ ‘তিনি বললেন, কোন্ মাসটি সম্মানের দিক থেকে সবচে’ বড় ? তাঁরা বললেন, আমাদের এই মাসটি।
⇒ ‘তিনি বললেন, কোন্ শহরটি সম্মানের দিক থেকে সবচে’ বড় ? তাঁরা বললেন, আমাদের এই শহরটি।’
⇒ ‘তিনি বললেন, নিশ্চয় তোমাদের রক্ত ও তোমাদের সম্পদ আজকের এই দিন, এই শহর, এই মাসের ন্যায় সম্মানিত।’
⇒ আমি কি পৌঁছে দিয়েছি? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, হে আল্লাহ,  আপনি সাক্ষী থাকুন।’ [133]

তাওয়াফে ইফাযা তথা বায়তুল্লাহ্‌র ফরয তাওয়াফ আদায়

‘অতপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বাহনে সওয়ার হয়ে বাইতুল্লাহ গেলেন এবং (বায়তুল্লাহ্র ফরয) তাওয়াফ করলেন। সাহাবীগণও তাওয়াফ করলেন।’‘রাসূলের সাথে যারা কিরান হজ করেছিলেন তাঁরা সাফা ও মারওয়ায় সা‘ঈ করেননি।’ [134] অতপর তিনি মক্কায় যোহরের সালাত আদায় করলেন। তারপর আবদুল মুত্তালিব বংশের কাছে এলেন, ‘তারা’ [135] যমযমের পানি পান করাচ্ছিল। তিনি বললেন, ‘হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধর! বালতি ভর্তি করে পানি তুলে তা (হাজীদেরকে) পান করাও। তোমাদের কাছ থেকে পানি পান করানোর দায়িত্ব কেড়ে নেয়ার ভয় না থাকলে আমিও নিজ হাতে তোমাদের সাথে বালতি ভরে পানি তুলে তা পান করাতাম।’ [136]

অতপর তারা তাঁকে বালতি ভরে পানি দিলেন, আর তিনি তা পান করলেন।

হজের পর আয়েশা রা. এর উমরা পালন

জাবের (রা.) বলেন, ‘আয়েশা (রা.) ঋতুবতী হলেন। তখন বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ছাড়া তিনি হজের আর সব আমল সম্পন্ন করলেন।‘ [137] তিনি বলেন, ‘যখন তিনি পবিত্র হলেন, তখন কা‘বার তাওয়াফ করলেন এবং সাফা-মারওয়ায় সা‘ঈ করলেন।’অতপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ‘তুমি তোমার হজ ও উমরা উভয়টি থেকে হালাল হয়ে গিয়েছ।’ [138]

আয়েশা (রা.) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, ‘আপনারা সবাই হজ ও উমরা করে যাবেন আর আমি কি শুধু হজ করে যাব?’ [139]  তিনি বললেন, ‘তোমারও তাদের মতই হজ ও উমরা হয়ে গিয়েছে।’ [140]

আয়েশা (রা.) বললেন, ‘আমি মনে কষ্ট পাচ্ছি, কেননা, আমি তো শুধু হজের পরে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেছি।’ [141]

জাবের (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ ﷺ নরম স্বভাবের লোক ছিলেন। যখন আয়েশা. কিছু কামনা করতেন, তিনি সেদিকে লক্ষ্য রাখতেন।’ [142] রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ‘হে আবদুর রহমান! তুমি তাকে নিয়ে যাও এবং তাকে তানঈম থেকে উমরা করাও।’ [143]
অতপর, ‘আয়েশা রা. হজের পরে উমরা করলেন।’ [144] ‘তারপর ফিরে এলেন।’ [145] ‘আর এটা ছিল হাসবার রাতে [146]।’ [147]

জাবের (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ ﷺ বিদায় হজে নিজের বাহনে আরোহন করে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করলেন এবং নিজের বাঁকা লাঠি দিয়ে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করলেন, যাতে লোকজন তাঁকে দেখতে পায় এবং তিনি ওপরে থেকে তাদের তত্ত্বাবধান করতে পারেন। আর যাতে তারা তাঁর কাছে জিজ্ঞেস করতে পারে। কেননা লোকজন তাঁকে ঘিরে রেখেছিল।’ [148]

জাবের (রা.) বলেন, ‘এক মহিলা তার একটি বাচ্চা তাঁর সামনে উঁচু করে ধরে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, এর কি হজ হবে? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, আর তোমার জন্য রয়েছে পুরস্কার।’ [149]

সমাপ্ত 

রেফারেন্স


[1] রাসূলুল্লাহ ﷺ মদীনায় হিজরত করার পর মোট চার বার উমরা করেছেন। ১ম বার : ৬ষ্ঠ হিজরীতে যা হুদায়বিয়া নামক স্থানে কুরাইশ কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হবার ফলে তিনি সম্পন্ন করতে পারেননি। এবার তিনি শুধু মাথা মুন্ডন করে হালাল হয়ে যান এবং সেখান থেকেই মদীনায় ফেরত আসেন। ২য় বার : উমরাতুল কাযা ৭ম হিজরীতে। ৩য় বার : জি‘ইররানা থেকে ৮ম হিজরীতে। ৪র্থ বার : বিদায় হজের সময় ১০ম হিজরীতে। তবে রাসূলুল্লাহ ﷺ উমরার উদ্দেশ্যে হারাম এলাকার বাইরে বের হয়ে উমরা করেছেন বলে কোনো প্রমাণ নেই (বিস্তারিত দেখুন : যাদুল মা‘আদ : ২/৯২-৯৫)।
[2] জাবের রা. উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন একজন সাহাবী। হজ সম্পর্কিত সবচে’ বড় হাদীসটির বর্ণনাকারী।
[3] নাসাঈ, বিশুদ্ধ মতানুযায়ী হিজরী ৯ম অথবা ১০ম সালে হজ ফরয হয়। হজ ফরয হওয়ার পর বিলম্ব না করে রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহাবীগণ হজ করেন। দ্র. ইবনুল কায়্যিম, যাদুল মা‘আদ।
[4] নাসাঈ।
[5] নাসাঈ।
[6] নাসাঈ।
[7]  বখাটে মুসলিম ও মুসনাদে আহমদের বর্ণনা অনুসারে রাসূল সা. এ ভাষণ দিয়েছিলেন মসজিদে নববীতে। সময়টা ছিল মদীনা থেকে হজের সফরে বের হওয়ার পূর্বে।
[8] মদীনা থেকে ৬ মাইল দূরে অবস্থিত (কামূস); হাফিজ ইব্ন কাছীর রহ.-এর মতে, ‘৩ মাইল দূরে অবস্থিত’ (হিদায়া : ৫/১১৪); ইবনুল কায়্যিম রহ.-এর মতে, এক মাইল বা তার কাছাকাছি দূরত্বে অবস্থিত (যাদুল মা‘আদ : ২/১৭৮)।
[9] মক্কা থেকে ৩ মারহালার দূরত্বে অবস্থিত। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন, এটি একটি প্রাচীন শহর। এর নাম ছিল মুহাইমা। এটি বর্তমানে পরিত্যক্ত স্থান। যারা পশ্চিম থেকে হজ করতে আসেন এটি তাদের মীকাত। যেমন মিশর ও শামবাসী। আর পশ্চিমের লোকেরা যখন মদীনা হয়ে মক্কা গমন করেন যেমন তারা বর্তমানে করে থাকেন, তখন তারা মদীনাবাসীর মীকাত থেকেই ইহরাম বাঁধবেন। কারণ, তাদের জন্য সবার ঐক্যমতে এটিই মুস্তাহাব (মাজমু‘ রাসাইল কুবরা’ মানাসিকুল হাজ্জ : ২/৩৫৬)।
[10] যাতু ইরক ও মক্কার মধ্যে ৪২ মাইলের দূরত্ব (ফাত্হ)।
[11] মক্কা থেকে ত্রিশ মাইল দূরে অবস্থিত।
 [12] মুসলিম
[13] নাসাঈ। রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহাবীরা মাথায় তেল ব্যবহার করে চুল আচড়িয়ে জামা-কাপড় পরে বের হন। তিনি এক্ষেত্রে জাফরান ব্যবহৃত কাপড় ছাড়া অন্য কোন কাপড় যেমন পাজামা বা চাদর ইত্যাদি পরতে নিষেধ করেননি। বুখারীতে যেমন ইব্ন আববাস রা. সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। ইবন আববাস রা. সূত্রে বর্ণিত হাদীস থেকে মীকাতের আগেই ইহরামের কাপড় পরার অনুমতি বুঝা যায়। অথচ অনেকেই এটাকে অনুমোদিত বলে মনে করেন না। তবে নিয়ত এর ব্যতিক্রম। কারণ, গ্রহণযোগ্য মতানুসারে নিয়ত করতে হবে মীকাত থেকে আর বিমানে ভ্রমণ করলে ইহরামের নিয়ত ছুটে যাবার সম্ভাবনায় মীকাতের কাছাকাছি কোনো স্থান থেকে।
মনে রাখবেন, নিয়ত কখনো মুখে উচ্চারণ করার বিধান নেই; ইহরামেও না সালাত, সিয়াম প্রভৃতি ইবাদাতেও না। নিয়ত সব সময়ই করবেন কলব বা অন্তরে। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা মূলত বিদআত। তবে ইহরামে لبيك اللهم عمرة وحجا পড়েছেন বলে যা সহীহ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে, তার উত্তরে বলা হয় তিনি শুধু এতটুকুই বলেছেন, এর অতিরিক্ত কিছু বলেননি (শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. ‘আন-নিয়্যাহ’ মজমু‘ রাসাইল কুবরা : ১/২৪৪-২৪৫)।
[14] ইরওয়াউল গালীল।  
[15] মুসলিম।

[16] যুল-হুলাইফা মসজিদে নববী থেকে ৬ মাইল দূরে অবস্থিত।
[17] নাসাঈ। অর্থাৎ এখানে আর তালবিয়া পড়লেন না। এরপর তালবিয়া পড়া শুরু করেন তাঁর উটনীটি বাইদা নামক স্থানে পৌঁছার পর, যেমনটি সামনে আসছে।
[18] এটি রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর উটনীর নাম। এর আরও নাম রয়েছে যেমন : ‘আযবা’ এবং ‘জাদ‘আ’। কারো কারো মতে কাসওয়া তাঁর উটের নাম (নাববী, শারহ)।
[19] ইবন মাজা।
[20] ইমাম নাববী রহ. বলেন, এ থেকে সবাই একমত যে আরোহন করে এবং পায়ে হেঁটে- উভয়ভাবে হজ করা বৈধ। তবে উভয়টির মধ্যে উত্তম কোনটি সে বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে। অধিকাংশ আলিমের মতে বাহনে করে হজই উত্তম। কারণ, (ক) নবী ﷺ এমনটি করেছেন (খ) বাহনে করে হজ করা হজের কার্যাদি আদায়ে সহায়ক এবং (গ) এতে খরচও বেশি হয়। তবে দাউদ জাহেরী প্রমুখ হেঁটে হজ করাকে উত্তম বলেছেন। তার মতে এতে বেশি কষ্ট হয় বলে তা উত্তম। তার এ মত সঠিক নয়। এ থেকে বুঝা যায় বিমানে সফর করে হজে যাওয়া জায়িয বরং মুস্তাহাব। তবে কেউ কেউ যে হাদীস বর্ণনা করেন, ‘বাহনে হজকারির প্রতিটি কদমে সত্তরটি নেকি লেখা হয় আর হেঁটে হজকারির প্রতি কদমে সাতশ নেকি লেখা হয়’ এটি সম্পূর্ণ জাল ও বানোয়াট হাদীস। (দেখুন : সিলসিলাতুল আহাদীস আদ-দাঈফা : ৪৯৬-৪৯৭)। ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন, এ ব্যাপারটি নির্ভর করবে হজকারির ওপর। কারো কারো জন্য বাহনে হজ উত্তম আবার কারো কারো জন্যে হেঁটে হজ উত্তম। এটিই সঠিক মত।
[21] জাবির রা.-এর কথার মধ্যে এ কথার প্রতি সূক্ষ্ম ইঙ্গিত রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই সাহাবীদের সামনে পবিত্র কুরআন তুলে ধরতেন। একমাত্র তিনিই কুরআনের যথার্থ তাফসির ও ব্যাখ্যা জানতেন। তিনি ছাড়া অন্যরা এমনকি খোদ তাঁর সাহাবীরাও তাঁর ব্যাখ্যার মুখাপেক্ষী ছিলেন।
[22] তাওহীদ ও শিরক বিপরীতমুখী দু’টি বিষয় যা কোনদিন একত্রিত হতে পারে না। এ-দুয়ের একটির উপস্থিতির অর্থ অন্যটির বিদায়। ঠিক রাত-দিন অথবা আগুন-পানির বৈপরিত্বের মতই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَأَتِمُّواْ ٱلۡحَجَّ وَٱلۡعُمۡرَةَ لِلَّهِۚ ‘তোমরা হজ ও উমরা আল্লাহর জন্য সম্পন্ন করো।’ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবনে তাওহীদ সবচে’ বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। তিনি তাওহীদকে তাঁর জীবনের মূল লক্ষ্য বানিয়েছেন। হজে নিম্নবর্ণিত আমলসমূহ সম্পাদনে তাওহীদের প্রতি তাঁর গুরুত্ব বিশেষভাবে প্রকাশ পেয়েছে। যেমন, ১. তালবিয়া পাঠ। ২. লোক-দেখানো ও রিয়া থেকে মুক্ত হজ পালনের জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ। ৩. তাওয়াফ শেষে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করার সময় তাওহীদ সম্বলিত ‘সূরা আল-কাফিরূন’ ও সূরা ইখলাস’ পাঠ। ৪. সাফা ও মারওয়ায় তাওহীদনির্ভর দু‘আ পাঠ। ৫. আরাফার দু‘আ ও যিকরসমূহেও তাওহীদ সম্বলিত বাণী উচ্চারণ ৬. হাদী বা কুরবানীর পশু যবেহের সময় তাকবীর পাঠ। ৬. জামরায় পাথর নিক্ষেপের সময় তাকবীর পাঠ ইত্যাদি। তাই প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য, তাওহীদের হাকীকত সম্পর্কে সচেতন হওয়া। শিরক ও বিদ‘আত থেকে সতর্ক থাকা।
[23] বুখারী : ৫৯১৫, মুসলিম : ১১৮৪।
[24] ইবরাহীম আ. এর তালবিয়া ছিল তাওহীদ সম্বলিত। সর্বপ্রথম আমর ইবন লুহাই খুযাঈ জাহেলী যুগে তালবিয়াতে শিরক যুক্ত করে বলে, إِلاَّ شَرِيكًا هُوَ لَكَ تَمْلِكُهُ وَمَا مَلَكَ. ‘কিন্তু একজন শরীক যার তুমিই মালিক এবং তার যা কিছু রয়েছে তারও’ (উমদাতুল কারী : ২৪/ ৬৫; আযরাকী, আখবারে মক্কা : ১/২৩২)।
তার অনুসরণে মুশরিকগণ হজ ও উমরার তালবিয়া পাঠে উক্ত শিরক সম্বলিত বাক্য যুক্ত করত। রাসূলুল্লাহ ﷺ তালবিয়ায় তাওহীদের স্পষ্ট ঘোষণা দিলেন এবং তা থেকে শিরকযুক্ত বাক্য দূর করে দিলেন (মুসলিম : ১১৮৫)।
[25] ইবন মাজা।
[26] এই জায়গাটি তান‘ঈমের কাছাকাছি বায়তুললাহ থেকে ১০ মাইল দূরে উত্তর দিকে অবস্থিত।
[27] মুসলিম।
[28] মুসলিম।
[29] মুসলিম।
[30] রমল হচ্ছে, ঘন পদক্ষেপে বীরের মত দ্রুত হাঁটা।
[31] নাসা
[32] বায়হাকী, মুসনাদে আহমদ।
[33] নাসাঈ, তিরমিযী।
[34] আহমদ।
[35] নাসাঈ, মুসলিম। (খন্দকের যুদ্ধে)
[36] মুসনাদে আহমদ।
[37] নাসাঈ।

[38] সাহাবীদের মধ্যে যারা হাদী সঙ্গে নিয়ে আসেননি রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁদেরকে উমরা করে হালাল হতে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তাদের হজ মুশরিকদের বিপরীত হয়। কেননা মুশরিকরা মনে করতো, হজের মাসসমূহে উমরা পালন জঘন্যতম অপরাধ (বুখারী : ৭২৩০)।
[39] ৮ যিলহজকে ইয়াওমুত তারবিয়া বলা হয়। ইয়াওমুত-তারবিয়া অর্থ পানি পান করানোর দিন। মিনায় পানি ছিল না বলে এদিন হাজীরা পানি পান করে নিতেন, সাথেও নিয়ে নিতেন এবং তাদের বাহন জন্তুগুলোকেও পানি পান করাতেন। তাই এই দিনকে পান করানোর দিন বলা হয়। ইব্ন কুদামা, আল-মুগনী : ৩১৪।
[40] বুখারী ও মুসলিম।
[41] ইবন জারূদ, আল-মুনতাকা।
[42] অর্থাৎ, আমাদের কর্মকান্ড কি আগেই নির্ধারিত নাকি আমরা সামনে যা করব সেটাই চূড়ান্ত?
[43] মুসনাদে আহমদ।
[44] অর্থাৎ তাকদীরে যদি ভালো লিখা হয়ে থাকে, তাহলে ভাল কাজ করা তার জন্য সহজ হবে। আর যদি তাকদীরে খারাপ লিখা থাকে, তবে খারাপ কাজ করা তার জন্য সহজ করে দেয়া হবে।
[45] মুসনাদে আহমদ।
[46] মুসলিম, মুসনাদে আহমদ।
[47] মুসনাদে আহমদ।
[48] মুয়াত্তা, বায়হাকী।
[49] মুসনাদে আহমদ, তাহাবী।
[50] মুসনাদে আহমদ, নাসাঈ।
[51] বায়তুল্লাহর পূর্বদিকে অবস্থিত।
[52] মুসনাদে আহমদ।
[53] মুসনাদে আহমদ।
[54] বুখারী, মুসলিম।
[55] মুসলিম।
[56] মুসলিম, তাহাবী, ইবন মাজা।
[57] মুসনাদে আহমদ, তাহাবী।
[58] বুখারী।
[59] বুখারী, মুসলিম।
[60] বুখারী।
[61] মুসলিম, ইবন মাজা, তাহাবী।
[62] মুসলিম, নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ।
[63] মুসলিম, তাহাবী।
[64] যাদের সাথে হাদী ছিল তাঁরা হলেন, রাসূল ﷺ., তালহা রা., আবু বকর রা., উমর রা., যুল-ইয়াসারা রা. ও যুবাইর রা.। সুতরাং তাঁরা কিরান হজ করেছেন। এরা ছাড়া সবাই তামাত্তু হজ করেছেন (বুখারী, মুসলিম ও মুসনাদে আহমদ)।
[64] ইবন মাজা, তাহাবী।



[66] মুসলিম, নাসাঈ।
[67] ইবনুল-জারূদ।
[68] আবূ দাউদ, বায়হাকী।
[69] আবূ দাউদ, বায়হাকী।
[70] নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ।
[71] নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ।
[72] নাসাঈ।
[73] নাসাঈ, ইবন মাজা।
[74] দারমী।
[75] বুখারী, মুসলিম।
[76] মুসনাদে আহমদ, আবূ দাউদ।
[77] মুসনাদে আহমদ।
[78] এ থেকে বুঝা যায় এসব স্থানে হাঁটার চেয়ে আরোহনই উত্তম; যেমন পুরো রাস্তায় হেঁটে আসার চেয়ে বাহনে আসা উত্তম। দেখুন : আত-তা‘লীক : ১৬।
[79] আবূ দাউদ।
[80] এ থেকে জানা গেল, মিনায় রাত্রিযাপন করা এবং সকালের আগে এস্থান ত্যাগ না করা সুন্নত।
[81] আবূ দাউদ, ইবন মাজা।
[82] আবূ দাউদ, ইবন মাজা।
[83] হজ পালনকারী সাহাবীগণকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ আরাফার ময়দানে অবস্থান করলেন এবং এ-ক্ষেত্রেও মুশরিকদের বিপরীত করলেন, কেননা মুশরিকরা মুযদালিফায় অবস্থান করতো এবং বলতো আমরা হারাম এলাকা ছাড়া অন্য জায়গায় যাব না এবং সেখান থেকে প্রস্থান করব না। উল্লেখ্য, আরাফা হারাম এলাকার বাইরে অবস্থিত।
[84] এ উপত্যকার নাম হচ্ছে ‘উরনা’। এটা আরাফা এলাকার বাইরে অবস্থিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এই উরনা উপত্যকা থেকে আরাফার ভাষণ দিয়েছেন।
[85] আল্লাহর বাণীটি হচ্ছে, ﴿فَٱنكِحُواْ مَا طَابَ لَكُم مِّنَ ٱلنِّسَآءِ﴾ ‘তাহলে তোমরা বিয়ে কর মহিলাদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভালো লাগে’ (নিসা : ৩ )।
[86] দারেমী।
[87] ইবন মাজা।
[88] এ পাথরটি জাবালে রহমতের নিচে বিছানো। জাবালে রহমত অবস্থিত আরাফার মাঝামাঝি স্থানে। ইমাম নাববী রহ. বলেন, এটিই উকূফের মুস্তাহাব স্থান। অনেকে মনে করেন জাবালে রহমতে না ওঠলে উকূফ পূর্ণ হবে না- এটি সঠিক নয়।
[89] অন্য হাদীসে এসেছে, তিনি উকূফ করেছেন, উভয় হাত তুলে দু‘আ করেছেন। হাজ্জাতুন-নবী : ৭৩ পৃষ্ঠা।
[90] সূর্যাস্তের পর আরাফা থেকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রস্থান মুশরিকদের আচারের সাথে ভিন্নতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই ছিল। কেননা মুশরিকরা সূর্যাস্তের আগেই আরাফা ত্যাগ করতো। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আমাদের আদর্শ তাদের থেকে ভিন্ন।
[91] আবূ দাউদ, নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ।



[92] আবূ দাউদ, নাসাঈ।
[93] মাশআরে হারাম দ্বারা উদ্দেশ্য ‘কুযাহ’ নামক স্থান। এটি মুযদালিফার একটি প্রসিদ্ধ পাহাড়। সকল সীরাতবিদ ও মুফাসসিরের মতে, সমগ্র মুযদালিফাকেই মাশআরে হারাম বলে। ইমাম নাববী রহ.।
[94] আবূ দাউদ।
[95] আবূ দাউদ।
[96] নাসাঈ।
[97] বাইহাকী।
[98] সূর্যোদয়ের পূর্বে মুযদালিফা থেকে প্রস্থান মুশরিকদের নিয়মের বিপরীত করার লক্ষ্যেই ছিল, কেননা মুশরিকরা মুযদালিফা ত্যাগ করতো সূর্যোদয়ের পর। রাসূল ﷺ বলেছেন, ‘আমাদের আদর্শ ওদের থেকে ভিন্ন।’
[99] আবূ দাউদ।
[100] এ হাদীস এবং পূর্বে বর্ণিত ৫৬ নং হাদীস থেকে বুঝা যায় বাহনের পেছনে কাউকে নিতে কোনো অসুবিধা নেই।
[101] এই স্থানে আবরাহার হস্তি বাহিনীকে আল্লাহ তা‘আলা ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। ইবনুল-কায়্যিম রহ. বলেন, মুহাস্সার মিনা ও মুযদালিফার মাঝখানে অবস্থিত। এটা মিনা বা মুযদালিফার অন্তর্ভুক্ত নয়।
[102] দারেমী।
[103] ইমাম নাববী রহ. বলেন, এ থেকে জানা গেল, আরাফা থেকে ফেরার সময় এ পথে আসা অর্থাৎ এক পথ দিয়ে যাওয়া এবং আরেক পথ দিয়ে ফেরা সুন্নত।
[104] নাসাঈ, আবূ দাউদ।
[105] মুসনাদে আহমদ, মুসলিম, আবূ দাউদ।
[106] ইমাম নাববী রহ. বলেন, পাথরগুলো ছিল শিমের বিচির মতো। সুতরাং এরচেয়ে বড় বা ছোট না হওয়া সুন্নত। তবে এরচেয়ে ছোট বা বড় হলেও তা জায়িজ হবে।
[107] নাসাঈ।
[108] মুসলিম, আবূ দাউদ, নাসাঈ।
[109] মুসনাদে আহমদ।
[110] মুসলিম।
[111] যিলহজ মাসের ১১-১২-১৩ তারিখের দিনগুলোকে আইয়্যামে তাশরীক বলা হয়।
[112] বুখারী , মুসলিম।
[113] ইবন মাজা।
[114] এ থেকে জানা গেল, নফল বা ওয়াজিব কুরবানীর গোশত কুরবানীকারী নিজে খেতে করতে পারবেন।
[115] মুসলিম।
[116] মুসলিম।
[117] বুখারী ফিত-তারীখ।
[118] মুশরিকরা তাদের যবেহকৃত হাদীর গোশত ভক্ষণ করত না। তারা নিজদের জন্য তা হারাম মনে করত। মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তা খাওয়ার নির্দেশ প্রদানের মাধ্যমে জাহেলী যুগের কুপ্রথার বিলুপ্তি ঘটান।
[119] মুসনাদে আহমদ।
[120] বুখারী, মুসনাদে আহমদ।
[121] মুসনাদে আহমদ।


[122] মুসনাদে আহমদ।
[123] ইবন মাজা
[124] ইবন মাজা
[125] ইবন মাজা
[126] অর্থাৎ তোমার যে আমলগুলো বাকি আছে তা আদায় করে নাও। আর যেগুলো করেছো- তাতে যা আগে-পিছে হয়েছে তাতে কোনো অসুবিধে নেই।
[127] দারেমী, ইবন মাজা।
[128] তাহাবী।
[129] মুসনাদে আহমদ।
[130] মুসনাদে আহমদ।
[131] আবূ দাউদ।
[132] মুসলিম।
[133] মুসনাদে আহমদ।
[134] আবূ দাউদ, তাহাবী।
[135] দারমী।
[136] অর্থাৎ
[137] বুখারী, মুসনাদে আহমদ।
[138] মুসলিম, আবূ দাউদ, নাসাঈ।
[139] বুখারী, মুসনাদে আহমদ। অন্য হাদীসে রয়েছে, লোকেরা দুই ইবাদাতের নেকী নিয়ে ফিরবে আর আমি কি এক কাজের নেকী নিয়ে ফিরবো?
[140] মুসনাদে আহমদ।
[141] মুসলিম, আবূ দাউদ, নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ।
[142] মুসলিম।
[143] ইবন আববাস রা. বলেন ‘আল্লাহর শপথ! মুশরিকদের প্রথা বাতিল করার জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ আয়েশা রা. কে যিলহজ মাসে উমরা করিয়েছেন। কুরাইশ গোত্র ও তাদের অনুসারীরা বলতো, ‘যখন উটের লোম গজিয়ে বেশি হবে, পৃষ্ঠদেশ সুস্থ হবে এবং সফর মাস প্রবেশ করবে তখনই উমরাকারির উমরা সহীহ হবে’। তারা যিলহজ ও মুহররম শেষ হওয়ার পূর্বে উমরা হারাম মনে করত’ (আবূ দাউদ : ১৯৮৭)।
[144] বুখারী, মুসনাদে আহমদ।
[145] মুসনাদে আহমদ।
[146] সেটি হচ্ছে আইয়ামে তাশরীকের পরের রাত্রি। অর্থাৎ ১৪ তারিখের রাত। এটাকে মুহাস্সাবের রাতও বলা হয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবীগণ ১৪ তারিখের রাত এ স্থানে যাপন করেছিলেন। যেসব জায়গায় পূর্বে শিরক বা কুফরী কর্ম অথবা আল্লাহর শত্রুতা প্রকাশ করা হত সেসব জায়গায় রাসূলুল্লাহ ﷺ ইচ্ছাকৃতভাবে ইসলামের নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেছেন। এই মর্মে তিনি মিনায় বলেন, ‘আমরা আগামীকাল বনূ কিনানার খায়ফে (অর্থাৎ মুহাস্সাব তথা হাসবা নামক স্থানে) যেতে চাচ্ছি, যেখানে তারা কুফরীকর্মের ওপর অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছিল, আর তা ছিল এই যে, কুরাইশ ও বনূ কিনানা, বনূ হাশিম ও বনূ আবদুল মুত্তালিবের বিরুদ্ধে এই মর্মে শপথ করেছিল যে, তাদের সাথে তারা বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম করবে না, বেচাকেনা করবে না, যতক্ষণ না তারা নবীকে তাদের কাছে সোপর্দ করে (বুখারী : ১৫৯০)। ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, ‘এটাই ছিল রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অভ্যাস যে, তিনি কুফরের নিদর্শনের স্থানসমূহে তাওহীদের নিদর্শন প্রকাশ করতেন (যাদুল মা‘আদ)।
[147] মুসলিম।
[148] মুসলিম, আবূ দাউদ, মুসনাদে আহমদ।
[149] তিরমিযী, ইবন মাজা। বাচ্চাটিকে বহন করা এবং তাকে মুহরিমরা যেসব কাজ থেকে বিরত থাকে সেসব কাজ থেকে বিরত রাখার বিনিময়ে এই নেকী (নাববী রহ.)।
Source: Quraneralo.com

Related Posts

"রাসূল (সাঃ) যেভাবে হজ্ব করেছেন"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সুন্দর স্বাবলম্বী ভাষায় কমেন্ট করার অনুরোধ রইলো.....

Iklan Atas Artikel

Middle Ad

Middle 2

Registered ad